মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৩ জন সদস্যকে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদের বিনিময়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি থাকা ৮৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
গত ১১ জুন থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৪ জন (বিজিপি-১০৯ এবং সেনা-১৫) সদস্য প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং বিজিবি’র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।
বিজিবি তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করত: বাসস্থান, খাবার, পোশাক ও চিকিৎসা সেবাসহ নিরাপত্তা প্রদানের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আশ্রয়গ্রহণকারী সদস্যদের একজন বিজিপি সদস্য (LA-249245, Police Lance Corporal Kzaw Nanda No-(4) BGP Branch) গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় Septic Shock due to Chronic Liver Disease and Alcoholic Cirrhosis রোগজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর উক্ত বিজিপি সদস্যের মৃতদেহ মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ মর্যাদায় যথাযথ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণপূর্বক রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার শ্মশান ঘাটে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
আজ রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) চতুর্থ ধাপে ১২৩ জন মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে বিজিপির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সকাল ৯টার দিকে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে বাংলাদেশি বেসরকারি মালিকানাধীন জাহাজ কর্ণফুলী টাগ-১ এ করে ৮৫ বাংলাদেশি কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ফিরেন। আর বেলা ১১ টা ৪০ এর দিকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে মিয়ানমারের বিজিপি-সেনা সদস্যদের ফেরত পাঠানো হয় একই জাহাজে করে। তাদের মিয়ানমারের জলসীমায় অবস্থান করা সেদেশের জাহাজে তুলে দেয়ার পর তার স্বদেশে ফেরত যাবেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী বলেন, রবিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় মিয়ানমারের বিজিপি এবং সেনার ১২৩ সদস্যদের বাসে করে নিয়ে আসা হয় নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে। তখন ঘাটটিতে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেলা ১১ টা ৪৫ এর দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় মিয়ানমার থেকে কারাভোগ শেষে ফেরা বাংলাদেশিদের।
পুরো হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ছিলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মিয়ানমারের কর্মকর্তারা।
এর আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ বিজিপি, সেনা এবং কাস্টমস কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেরত পাঠানো হয়েছিলো। এরপর ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ২৮৮ সেনা ও বিজিপি ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৭৩ বাংলাদেশি নাগরিক বাংলাদেশে ফেরত আসে। এরপর সর্বশেষ ৮ জুন একই ঘাট থেকে ১৩৪ জন বিজিপি এবং সেনা সদস্য মিয়ানমারে ফেরত যায় এবং মিয়ানমার থেকে ফেরত আসে ৪৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক। যারা অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে মিয়ানমারে গ্রেফতার হয়েছিল।
এবি