

সময়ের কন্ঠস্বর ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ’র সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার শিকার ১৭ বছরের কিশোরী মিতু।
ঘটনার পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। আহত বা মৃতদের মধ্যেও তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না কিশোরীর বাবা বিল্লাল হোসেন। পরিবারের সদস্যদের ধারণা মিতু বেঁচে নেই। কিন্তু তারপরও বুকফাটা আর্তনাদ করেও মেয়েকে খুঁজে ফিরছেন বিল্লাল।
আজ শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে রূপগঞ্জের পোড়া কারখানার বাইরে বিল্লালকে আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘কালকে দিনের ১টা বাজে আমার মায়েরে ফোন দিয়া কইসি, নাইট কইরা আইসি, মা ঈদের দুইয়েকদিন পর আইয়া পড়মু মা। ১৭-১৮ বছর হইসে আয়া পড়সি এই দেশো। মাইয়াডা বড় হইসে। মাইয়ারে বিয়া দিমু। আয় হায়, সাতটা বাজে হের মায়ে ফোন দিয়া কয় আমার জিতো নাই। মায়ে কয়, কিগো বাবা, তিন ঘণ্টা আগে না আমারে ফোন দিলি। তোর জিয়ে না ভালা। এনো কিছু নাই, আমার লগে ইতরামি করস? হায়রে ভাই কি করুম, আমার মায়ে বেহুশ হয়া গেসেগা দেশো।’
বিল্লালের আর্তনাদ এখানেই শেষ নয়। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,‘আগুন লাগার খবর শুইনা আমার বড় মাইয়া আগে দৌড়াইয়া আইছে। ৭টার দিকে আমার বউরে ফোন করে বড় মাইয়া কয় মা, আমাগোর মিতু নাই গো মা। ওর মায়ে কয় কি রে কি কস তুই। ও না একটু আগে ফোন দিলো। কইলো মা কিছুক্ষণ পরেই আইমু বাসায়। আমার বৃদ্ধা মায় কয়, বাবা আমি মইরা গেলাম না, আমার নাতিন মইরা গেলো। আমি কইছিলাম ৫টা বাজে ডিউটি কইরা বাসায় চইলা আবি মা। ম্যাইয়া ডা কয় ৮টা বাজে ওভার ডিউটি কইরা বাসায় যাইবো। আমার ওভার ডিউটির টাকা লাগবো না গো মা।
মিতু জীবিত কিনা জানা নেই তার পরিবারের। মারা গেছে চিন্তা করেই তার লাশটি পেতে প্রাণপন চেষ্টা করছে তার স্বজনরা। জানা গেছে, মিতুর বড় বোনও পুড়ে যাওয়া ওই কারখানায় কাজ করতেন। ঘটনার আগের রাতে তার নাইট ডিউটি ছিল বিধায় গতকাল তিনি কাজে যাননি।
মিতুর স্বজনরা জানায়, গতকাল রাত থেকেই মেয়ের অপেক্ষায় সেজানের কারখানার গেটের বাইরে বসে কাঁদছেন বিল্লাল। তার ভাই মনিরুজ্জামান দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে জানান, বিল্লালও একটি কারখানায় কাজ করতেন। তার বড় মেয়ে এবং মেজো মেয়ে এই কারখানায় কাজ করে। বড় মেয়ের ছুটি থাকায় মেজো মেয়ে মিতু একাই কাজে গিয়েছিল।
মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের যা যাওয়ার তা তো চলেই গেছে। মিতুর লাশটা যেন সঠিকভাবে সরকার আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয় এটাই এখন একমাত্র দাবি।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ’র সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। লাশগুলো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্মণ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দেবাশীষ বর্মণ আরও জানান, তালাবদ্ধ থাকায় চতুর্থ তলার কোনো শ্রমিক বের হতে পারেননি। যে কারণে সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়।
এর আগে দুপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, ‘চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আমরা ৪৯ জনের মৃতদেহ পাঠিয়েছি। আমরা চতুর্থ তলা পর্যন্ত যেতে পেরেছি। উপরের দুই ফ্লোরে এখনও আগুন জ্বলছে। আমাদের কাজ শেষ হয়নি। চূড়ান্ত সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত বলেন, ‘অনেক লাশ শনাক্ত করার মতো অবস্থায় নেই। সেগুলো ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বলা হবে।’ এদিকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।