ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর বারটা। বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের ভরট্ট গ্রাম। হঠাৎ করেই রাস্তায় দেখা গেলো শরওয়ানি ও মাথায় পাগড়ি পরে সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়ে দুই বেহারার পালকি নিয়ে বর বেসে মতিউর রহমান যাচ্ছেন জীবন সঙ্গী প্রিয়তমাকে আনতে।
সঙ্গে পালকি ও বরযাত্রিদেও বহর। কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজে ঘোড়ায় চড়ে ও পালকিতে করে প্রিয়তমাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী বিয়ের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার প্রত্যন্ত ভরট্ট গ্রামে।
আর বিয়ের দাওয়াত খেতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়েছিলেন রাজশাহীর বাগমারা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। বিয়ে শেষে তিনি আবার ঢাকা ফিরেছেন হেলিকপ্টারেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে রাজসিক এই বিয়ের নানান ছবি।
শনিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে বর মতিউর রহমান প্রায় এক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যান কনের বাড়িতে। সঙ্গে নেন পালকি ও বরযাত্রীদের বহর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের দাদা আহম্মদ হোসেনও ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। তাই নাতিরও শখ হয়েছিল একইভাবে বিয়ে করতে যাওয়ার। আর ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে মতিউরের বাবা করেছেন ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজন।
মতিউরের বাবা একজন মাদরাসা শিক্ষক। তার নাম আবদুল মান্নান। আর মতিউরের মা একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তার নাম হালিমা খাতুন। আর এই দম্পতির একমাত্র ছেলে হচ্ছেন- মতিউর রহমান। এছাড়া কনে ফারহানা আঁখির গ্রামের বাড়িও ওই একই ইউনিয়নে। তার বাবা আজাহারুল হক সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, পারিবারিকভাবেই ফারহানা আঁখির সঙ্গে মতিউর রহমানের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। চীন থেকে সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন মতিউর রহমান। আর কনে ফারহানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। দুই পরিবারের সম্মতিতেই শনিবার তাদের বিয়ের দেওয়া হয় মহা ধুমধামে।
এই বিয়ের পূর্ণতা আনতে আয়োজন চলছিল বেশ কয়েক দিন থেকেই। গ্রামের একজন কাঠমিস্ত্রি তিনদিন চেষ্টা চালিয়ে পালকিটি বানিয়েছেন। এর পাশাপাশি কনের বাড়িতে নিয়ে যেতে উপজেলার শেরকোল শিমলা গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একদিনে জন্য ঘোড়াটিও ভাড়া করা হয়েছিল বরের জন্য। শেষ পর্যন্ত সবকিছু হয়েছে পরিকল্পনা মাফিকই।
বিয়ের মূল অনুষ্ঠান শেষের পর শনিবার ঘোড়ায় চেপে পালকিতে করে নববধূ নিয়ে নিজ বাড়িতে রওনা দেন বর। সঙ্গে পায়ে হেঁটে চলেন বরযাত্রীরাও। যা দেখতে ভিড় করেন আশপাশের প্রায় ১০ গ্রামের উৎসুক মানুষ।
মতিউরের মা হালিমা খাতুন বলেন, একমাত্র ছেলের ইচ্ছা পূরণের জন্যই ছিল এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন। দাদার মতো ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করে কনে নিয়ে এসেছে। এতে ছেলের শখও মিটেছে আবার বহু বছর পর গ্রামীণ ঐতিহ্যও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এমন আয়োজন সৃষ্টি করেছে চমক।
কনের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল হক বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে। তাই যতটা পেরেছি ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছি। এই আসনের সংসদ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম।
আর দুই পরিবারে ইচ্ছা ও আয়োজনে আজ ব্যতিক্রমী বিয়ে হয়ে গেল। ব্যতিক্রম এমন উদ্যোগে বর-কনেসহ আত্মীয়স্বজন সবাই মুগ্ধ।