মেয়াদ উত্তীর্ণের ৩ বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী যুবলীগের পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখা কমিটির নেতৃবৃন্দের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ পাওয়ায় বিষয়টি সামনে আসে।
কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম (চানু) উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্বাক্ষর করেন।
উপজেলার একাধিক যুবলীগ নেতা-কর্মী জানান, ২০১৭ সালে উপজেলা কমিটির সভাপতি পদে সংগ্রাম প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাজু আহমেদ মিঠুকে দায়িত্ব অপর্ণ করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জেলা কমিটিকে অবগত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দায়িত্ব প্রাপ্তির মাত্র ৮ মাস পর ২০১৮ সালের ৪ জুন সংগ্রাম প্রধান মৃত্যুবরণ করেন। পরে খসড়া কমিটির তালিকা করা হলেও তা অনুমোদন পায়নি। তখন থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই শুধু সাধারণ সম্পাদক দিয়েই চলছিল উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বুধবার প্রকাশিত তালিকায় খসড়া কমিটির অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কমিটির একাংশের ছবি পোস্ট করা হয়। যেখানে ফরিদ হাসান স্বপনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অথচ ২০২২ সালের সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফরিদ হাসান স্বপন দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। দেবীডুবা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা কমিটিতে তিনি সদস্য হিসেবে থাকার কথা।
অভিযোগ উঠেছে ২০১৭ সালে ব্যাকডেটে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেখিয়ে নতুন ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যারা যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না কিংবা ২০১৮ সালের ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন তাদের অনেকেই পদ পদবী পেয়েছেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি, সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক সদস্য হিসেবে উপজেলা কমিটিতে থাকার কথা থাকলেও অনেককে বাদ দেওয়া হয়। আবার উপজেলা কমিটিতে এমন অনেককে সভাপতি ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে যারা ইউনিয়ন যুবলীগে সভাপতি, সম্পাদক, আহ্বায়ক কিংবা যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যা স্পষ্ট গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন।
২০১৮ সালে গঠিত ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের বেশ কয়েকজন জায়গা করে নিয়েছেন যুবলীগের ২০১৭ সালের কমিটিতে। খোদ যুবলীগেই প্রশ্ন উঠেছে এমন হযবরল কমিটি হয় কিভাবে!
চিলাহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাসানুজ্জামান রুপম বলেন, নির্দিষ্ট বলয় তৈরির জন্য এই কমিটি। এভাবে দলীয় কমাণ্ড ভেঙ্গে পড়বে। ২০১৮ সালের ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ২০১৭ সালের যুবলীগের কমিটিতে আছে। এটা উপজেলা যুবলীগের দেউলিয়াত্বের শামিল। এই কমিটি আত্মপ্রকাশের পর অনেকেরই রাজনীতির প্রতি অনীহা চলে এসেছে।
শালডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোতাহার বলেন, উপজেলা কমিটির ব্যাপারে কিছুই জানি না। দীর্ঘ ১৫ বছর সময়, শ্রম, অর্থ দিয়ে দল করেছি। দল এখন আমাকে চেনে না। দলের থেকে আর কিছু আশাও করি না। এখন হালাল পথে রোজগার করে যেন চলতে পারি এইটুকুই দোয়া করি।
যুবলীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে আরো তিন বছর আগে। উপজেলা কমিটির জন্য সম্মেলন হলে নেতা-কর্মীদের মনোবল দৃঢ় হতো। তা না হওয়ায় এবং হুট করে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে আত্মপ্রকাশে তৃণমূলের কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ মিঠু বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। কিছু জানার থাকলে জেলায় আহ্বায়কের সাথে কথা বলেন।
এই বিষয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি নামাযে যাবেন বলেন। নামায শেষে ফোন দিতে বলেন। তবে এরপর বেশ কয়েকবার তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।