কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সিলেট বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অনেকেই চলে গেছেন আত্মগোপনে, কেউবা বন্ধ রেখেছেন মোবাইল ফোন।বিএনপি নেতাদের অভিযোগ পুলিশ বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধেই কেবল আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়, আমরা নৈতিক সমর্থন দিয়েছিলাম মাত্র। এখন সিলেটে যত মামলা হচ্ছে-সব মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে হয়রানি ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।
পুলিশ জানায়, টার্গেট করে কোনো দলের নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে না। সিলেটে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় যারা জড়িত ছিলেন শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। হয়রানি করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।আন্দোলন চলাকালে সিলেটে সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিলেট জেলা পুলিশ বাদী হয়ে ১৩টি মামলা দায়ের করেছে। আসামি করা হয়েছে ১৭ হাজার ৬৮ জনকে। এ পর্যন্ত ১৫৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় প্রাণহানি ও ভাঙচুর করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ঘটনায় ছয়টি, জালালাবাদ থানায় দায়েরকৃত চারটি এবং দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার বলেন, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় ২৬৮ জনকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল জলিলসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে, নগরীর নেহারীপাড়ায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নতুন করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে নিহতদের গায়েবানা জানাজা পড়তে গিয়েছিলাম। পুলিশ এতে বাধা দেয় এবং কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করতে দেয়নি। এবার আমরা রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে এবার মাঠে নামিনি। তবু আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে পুলিশ হামলা করেছে। আমাদের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।তিনি বলেন, আমরা হামলার শিকার হলেও সহিংসতার নামে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তত আড়াইশ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্তরের ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। বেশিরভাগ ব্যক্তি বাড়িছাড়া। সিলেট বিএনপির পক্ষ থেকে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি জানাই।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদল ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। আন্দোলনের নামে শান্ত শহর সিলেটকে উত্তপ্ত করে অরাজকতা তৈরি করেছে। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজপথে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে গিয়ে তল্লাশি বা হয়রানি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে নয়, সিলেটে যারা সহিংসতায় জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাদের আটক করা হচ্ছে।
এমআর