পরিবারের সাথে চট্টগ্রামের মিরসরাই এর প্রত্যন্ত গ্রামে থাকত সাফায়াত আহমেদ। ২০২২সালে ঢাকা কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিভাগে ভর্তি হয়। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা থাকার পরেও বাবা-মাকে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস সুবিধার কথা বুঝিয়ে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে শিক্ষকদের সাথে ছাত্রাবাসে উঠার বিষয়ে কথা বললেওতাদের কাছে থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পায়নি।
পরে জানতে পারে ছাত্রাবাসে উঠানোর কথ কলেজ প্রশাসনের কাছে নেই। যোগাযোগ করতে হবে হলে থাকা ছাত্রলীগের সাথে। সাফায়েত ছাত্রলীগের সাথে যোগাযোগ করে। তারা তাকে হলে উঠার বিষয়ে কয়েকটি শর্ত দেন। শর্তগুলো মধ্যে প্রথমত, ছাত্রলীগ করতে হবে দ্বিতীয়ত, আওয়ামীলীগের মিছিল, মিটিং,সভাগুলো করতে হবে। এবং হলের অনেকগুলো অদ্ভুত নিয়ম আছে যা মানতে হবে।
শর্তগুলো একটিও পছন্দ না হলেও অর্থ সংকটের কারণে মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং হলে উঠে যায়। ছাত্রাবাসে উঠার পর থাকতে হয়েছে গণরুমে মুখোমুখি হতে হয়েছে গেস্ট রুমের,র্যাগিং। এছাড়াও,রাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ববৃন্দের মাদক আড্ডার কারণে রুমে ঢুকতে পারত না ফলে বাহিরে রাত কাটাত, ছাত্রলীগের কথা না শুনলে হল থেকে বাহির করে দিত,ক্যান্টিন চাঁদাবাজির কারণে খেতে হয়েছে নিম্নমানের খাবার।এই চিত্র গত ১৫ বছরের বলা যায়।
৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর শিক্ষা অঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বলা চলে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জোর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি না থাকার। ফলে ছাত্রবাসগুলোতে উঠার জন্য নতুন নিয়ম প্রণয়ন করা হয়। নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম নিয়ম, মেধার ভিত্তিতে সিট প্রদান।যাদের সিজিপিএ ভালো এবং পারিবারিকভাবে অসচ্ছল তারা ছাত্রাবাসে উঠতে পারবে। এই নিয়মে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। তবে এই নিয়ম কত দিন থাকবে তা নিয়ে আছে শঙ্কা শিক্ষার্থীদের। তারা মনে করছে এই নিয়মে বেশিদিন চলবে না হল। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে হলকে ছাত্রদল পূর্বে অবস্থায় নিয়ে যাবে।
স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি, ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা যে ছাত্রাবাস নীতিমালা করছে এটিতে আমি অন্তত্য খুশি ও আনন্দিত। বিগত দিন গুলোতে ছাত্রলীগ নিজের মত নিয়ম করে একক অধিপত্য বিস্তার করছিল ছাত্রাবাসে, তারা নির্যাতন করত, পড়ালেখার নূন্যতম পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি। যারা পড়ালেখা করতে চায়তো তাদের মিছিলে নিতে বাধ্য করত, বিগত আন্দোলনে ছাত্রলীগের দলীয় কন্দলের মুখে একজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছে। যাদের সিট প্রয়োজন তারা আসত না, আসতো লেজরভিত্তিক রাজনীতি করতো তারা আসত। তারা এসে হলের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলত। এখন বিজয় ২.০ ভার্সন স্বাধীনতা আসছে, ক্যাম্পাসে শান্তি এসেছে। এতে আমরা আনন্দিত। তবে আমাদের শঙ্কা আছে কারণ বাংলাদেশে একটি দল গেলে আরেক দল আসবে, তারাও একই আচরণ করবে। আমাদের প্রত্যাশা, হলে শিক্ষকরা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু ৩/৪ মাস নজর রাখবে না, তারা পরবর্তীতেও এই নিয়নগুলো পুর্নবহাল রাখতে তৎপর থাকবে।
ভৌগল ও পরিবেশ বিভাগের জাহিদ হাসান শিক্ষার্থী বলেন, পূর্বে ছাত্রাবাসে যে ছাত্র রাজনীতি ছিল তা আমরা চাই না। ক্যান্টিনে ভালো ব্যবস্থাপনা চাই। এখন আবার ছাত্রদল ধীরে ধীরে আত্নপ্রকাশ করছে, তাদের দলের ছাত্রদের ছাত্রাবাসে উঠানোর চেষ্টা করছে । তারা আগের অবস্থায় ফিরে নেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা সাধারণত ছাত্ররা চাই, ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক দল না থাকুক।
ছাত্রাবাস নতুন ব্যস্থাপনা আবার পূর্বে অবস্থায় ফিরে যেতে পারে শিক্ষার্থীদের এমন আশঙ্কা নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদে সধারণ সম্পাদক আ,ক,ম রফিকুল আলম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যত দিন আছে ততদিন ছাত্রাবাসে নতুন সিস্টেম ভাঙ্গা সম্ভব হবে না,এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।দলীয় সরকার আসলে কি হয় তা বলা যাচ্ছে না তবে এক্ষেত্রে কিছু হলে শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে এবং কলেজ প্রশাসনকেরও হস্তক্ষেপ থাকতে হবে। এছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি একটি সিস্টেম করে তাহলে মেধার ভিত্তিতে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ নিয়মটি বহাল থাকবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা কলেজে ৮ ছাত্রাবাস আছে, এর মধ্যে বিজয় ২৪ হল ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এবং পশ্চিম ছাত্রাবাস সনাতন ধর্মাবলম্বী জন্য বরাদ্দ করা
এমআর