'ধানের চারা লাগাতে না পারলে খাবো কি করে, পরিবার নিয়ে চলবো কি করে। এছাড়া গবাদী পশুর খাদ্যের জোগান মিটাবো কি করে' এভাবে নিজের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের কৃষক আজমীর হোসেন।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানবার শত শত কৃষক। বন্যার পানিতে টানা ৭দিনের বেশি সময় নিমজ্জিত ছিলো রোপা আমন ও আমন ধানের বীজতলা। এতে নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ বীজতলা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এখান কার খেটে খাওয়া কৃষকেরা। ভরা মৌসুমে চারা সংকটে জমিতে ধানের চারা লাগানো নিয়ে তৈরী হয়েছে ধোঁয়াশা। সময় মত চারা লাগাতে না পারলে কমতে পরে উপজেলায় ধানের উৎপাদন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কাটাছাড়া, ইছাখালী, মিঠানালা, ধুমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ধানের বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে ধানের চারা। জমিতে আগাম লাগানো চারাও পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক চারার জন্য পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। উপজেলার সব জায়গায় দেখা গেছে একই দৃশ্য।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করছেন উজেলার অন্যতম সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্বার। ধানের বীজ বিতরণ করছেন আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'হিতকরী'।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন ধানের মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৮৭০ হেক্টর জমির বীজতলা কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার আমন ধানের লক্ষমাত্রা ধারা হয়েছিল ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমির খালি থাকার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক উজ্জল কুমার নাথ বলেন, ৭ শতক জমিতে ৩ একর ৬০ শতক জমির জন্য আমনের বীজতলা প্রস্তুত করেছি। টানা ৭ দিনের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়েছে। গত তিনদিন আমনের চারা জন্য ধারে ধারে ঘুরছি কিন্তু চারা পাইনি। ফলে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছি। জানিনা চারা সংগ্রহ করতে পারবো কি না।
কৃষক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বীজতলা নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। কোথাও ধানের চারা পাওয়া যাচ্ছেনা। এর আগে অর্ধ একর জমির জন্য বীজতলা প্রস্তুত করেছিলাম।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, অতিবৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলায় রোপা আমন ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে অনেক ফসল। বন্যায় দু’দফায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে কিছু জাতের ধানবীজের সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক কৃষক আবার নিজ বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন। কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কৃষকদের ধানের চারা উৎপাদনে সহযোগিতা করছে। কৃষকদের বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি-৩৪, ব্রি ধান-৪৬ ও হাইব্রিড ধানি গোল্ড জাতের চারা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কৃষক ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমিতে ধানের চারা লাগাতে পারবেন না, তাঁদের এ মৌসুমে আর ধান চাষ না করে সেসব জমিতে আগাম শাকসবজি, শর্ষে, গমজাতীয় ফসল চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহুরী নদীর তীরবর্তী করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম, ওসমানপুরসহ মিরসরাইরে ১১টি ইউনিয়ন স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। ডুবে ছিলো মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, মাছের ঘের। পানিবন্দী হয়ে পড়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ। তবে বন্যার পানি কমতেই দেখা দিতে থাকে ফসলি জমির ক্ষত চিহ্ন।
এইচএ