এইমাত্র
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হলেন তাজুল ইসলাম
  • ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার সীমা উঠে গেল
  • নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক আয়োজনে ঢাকার প্রস্তাব
  • গোপন গ্রুপের শামীমা তুষ্টি বললেন, গালি আর ট্রল আমার গ্রহণ করতে হবে
  • মাদারীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কৃষককে কুপিয়ে জখম
  • আন্দোলনে আহতদের খোঁজ নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা
  • নেশার টাকা না দেয়ায় পিতাকে হত্যা করল ছেলে
  • নেত্রকোনায় বিদ্যুৎপৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
  • আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এখন ফাস্টফুডের দোকান
  • কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
  • আজ রবিবার, ২৩ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম
    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

    উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

    কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিনথিয়া তাসনিমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

    আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল পরিদর্শন করে তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

    লিখিত অভিযোগেবলা হয়, ডা. সিনথিয়া তাসনিম হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ ও অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানির জন্য বরাদ্দ টাকাসহ বিভিন্ন খাতের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্যাথলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, ইসিজি বিভাগ ও টিকিট বিক্রি থেকে প্রতি মাসে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। কিন্তু এই কর্মকর্তা ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজে নেন। তাঁর নামে বরাদ্দ গাড়ির জন্য মাসে জ্বালানি (অকটেন) বিল বাবদ ১৭-১৮ হাজার টাকা তোলেন। অথচ মাসে এক দিন কিশোরগঞ্জ যান তিনি। এমনকি এই কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের নামেও নানা উপলক্ষে চিকিৎসক-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। বাজিতপুর হাসপাতালে চিকিৎসকসহ মোট ১৭০ জনকর্মী সংখ্যা রয়েছে। গত (২৮ আগস্ট) সিভিল সার্জনের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে তাদের মধ্যে ১৫৭ জনই সই করেছেন। ডা. সিনথিয়া তাসনিম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর। এর আগে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জুনারচর ২০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ছিলেন।

    কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসনিম যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো কাজে খরচ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছেন। হাসপাতালের এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার জন্য রোগীদের মাঝে রসিদ না দিয়ে প্রতিদিন অল্প সংখ্যক এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বেশির ভাগ টাকা নিজের ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা করেন। রসিদ বই এবং রেজিস্টার্ড খাতা যথাস্থানে না রেখে নিজের কাছেই রাখেন তিনি। যে কয়টি পরীক্ষার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেন তার রসিদ নিজেই তৈরি করেন তিনি।

    তারা আরও জানান, এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন ট্রেনিং ও প্রোগ্রামের টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে অল্প কিছু টাকা বিতরণ করে বাকি টাকা নিজের পকেটে তোলেন। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা ও ঠিকাদারির বিভিন্ন খাতসহ খাদ্যপণ্যের ঠিকাদারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। ফলে ঠিকাদাররা তাদের ঘুষের টাকার উশুল করতে কম ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেন। ফলে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাপ্য খাবার থেকে। ক্ষুণন হচ্ছে হাসপাতালের ভাবমূর্তি।

    এদিকে হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও বদলির ভয় দেখান ডা. সিনথিয়া তাসনিম। দিনের পর এমন চললেও মুখ বুঝে সহ্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে ক্ষুব্ধ বাজিতপুর হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত (২৮ আগস্ট) সিভিল সার্জনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে যাওয়ার পর শুরু হয় আরেক নাটক। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে যারা অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ফলে অভিযোগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক জানান, অধস্তন কর্মীদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করেন না ডা. সিনথিয়া। সামান্য অপরাধেই চিকিৎসকদের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখাতেন। এক মিনিট দেরি করলেই হুমকি-ধমকি দিতেন। অথচ নিজে মাসে অনুপস্থিত থাকতেন ১০দিন এরও বেশি। ওই চিকিৎসকের অভিযোগ, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া থেকে রক্ষা পেতে অনেক চিকিৎসকই টাকা দিয়েছেন ডা. সিনথিয়াকে। কাউকে আবার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন। তিনি আরোও জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে দিয়ে হাসপাতাল কর্মীদের অপদস্থ করিয়েছেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলছেন, সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাদের আতঙ্কে সময় কাটছে।

    আরেক চিকিৎসক জানান, করোনার সময় হাসপাতালের স্টাফ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের চিকিৎসক মিলিয়ে ৭০-৭৫ জন দায়িত্ব পালন করেন। তারাও যথাযোগ্য সম্মানি পাননি। তাদের নামের বরাদ্দ টাকার জন্য রেজিস্ট্রারে সই রেখে কাউকে অর্ধেক, কাউকে এক-তৃতীয়াংশ টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে শাসিয়েছেন। এতে তাঁকে সহায়তা করতেন উপজেলার শিমুলতলা শফিউদ্দিন কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) রাজিব মিয়া। একই কর্মস্থলে ১২ বছর ধরে কর্মরত রাজিব ডা. সিনথিয়া বাজিতপুর আসার পর সারাক্ষণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই থাকতেন। রাজিব ও ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় করোনার সময় লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন ডা. সিনথিয়া।

    হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিজের পদ ধরে রাখতে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন ওই চিকিৎসা কর্মকর্তা। কয়েকটি সূত্রে তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তারেক রহমানসহ কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যদি আবারও দায়িত্বে ফিরে আসেন, তাহলে তাঁর অধীনে কেউ কাজ করবেন না।

    এর আগে ডা. সিনথিয়া তাসনিমের শাস্তির দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মবিরতি পালনের মধ্যে (২৭ আগস্ট) তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে রোববার থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. রাবেয়া আক্তার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন ছুটিতে ছিলেন। ফিরে এসে হাসপাতালের কর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

    অভিযোগের বিষয়ে বাজিতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসনিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোনে সারা দেননি।

    এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা নিশ্চিত করতে বাজিতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। আর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…