মানুষের সাধারণ ধারণা হলো, দান করা ধনীদের দায়িত্ব। অথচ বিষয়টি এমন নয়। বরং দান করার জন্য ধনী হওয়া জরুরি নয়। মুমিনরা মহান আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকেই দান করবে-এটাই ইসলামের নিয়ম।
পবিত্র কোরআনে মুমিন মুত্তাকির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে-‘যারা গায়েবের ওপর ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমরা (আল্লাহ) তাদের যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে দান করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩)।
দান করার জন্য সচ্ছল ও ধনী হতে হবে-এমন কোনো কথা ইসলামে নেই। বরং পবিত্র কোরআনে সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় দান করার কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(তারাই মুত্তাকি) যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল।
আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)।
কখনো কখনো ইখলাসপূর্ণ অল্প দান বা গরিবের দান ধনীর দানের চেয়ে আল্লাহর বেশি পছন্দনীয় হয়। কখনো কখনো এক টাকা লাখ টাকার চেয়ে দামি হয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক দিরহাম এক লাখ দিরহামের ওপর প্রাধান্য পেয়ে গেল।
তাঁরা (সাহাবিরা) বলেন, এটা কিভাবে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তির শুধু দুটি দিরহাম ছিল। সেখান থেকে সে একটি দান করে দিল। আর এক ব্যক্তি তার (বিশাল) ধন-সম্পদের মধ্য থেকে এক লাখ দিরহাম নিয়ে তা দান করল। (সুনানে আন-নাসায়ি, হাদিস : ২৫২৭)।
বরং কিছু অভাব থাকা সত্ত্বেও যে দান করা হয়, হাদিসের ভাষ্য মতে তা-ই সর্বোত্তম দান। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সদকার সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সুস্থ ও কৃপণ (অভাব) অবস্থায় তোমার সদকা করা—যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে।
সদকা করতে এ পর্যন্ত দেরি করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪১৯)।
দানে ধন বাড়ে। সম্পদের এই বৃদ্ধি জাগতিকভাবেও হতে পারে। পরকালের প্রতিদান হিসেবেও বৃদ্ধি পেতে পারে। এটাই কোরআন ও হাদিসের ঘোষণা। এটাই ঈমানদারের বিশ্বাস। কোরআন বলছে : ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সদকা কবুল করেন এবং সেটি নিজ ‘ডান হাতে’ গ্রহণ করেন। তারপর তা লালন-পালন করে বড় বানাতে থাকেন, যেভাবে তোমরা অশ্বশাবক লালন-পালন করে বড় বানাতে থাকো। এক পর্যায়ে এক লোকমা সমপরিমাণ দানও ওহুদ পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৫৯৮)।
এফএস