বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউল হক (৮০) ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত পৌনে তিনটার দিকে রাজধানীর হলিফ্যামিলি রেডক্রিস্টে হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বড় ছেলে রেজাউল হক কাজল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তার মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আলাউল হক ১৯৯০ সালে বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০০৬ সনে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কায়েদে আজম কলেজে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ) অধ্যয়নকালীন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক পাশ করে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এডমিন ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালে জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে তা গৃহিত হয় এবং ১৯৯৮ সালের রায়ে তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। চাকুরিচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখেন তিনি।
তার বড় ছেলে রেজাউল হক কাজল একজন ব্যবসায়ী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বাজিতপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ছেলে জিয়াউল হক মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব। তৃতীয় ছেলে নোভারটিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (বাণিজ্যিক পরিচালনা) বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত এবং চতুর্থ ছেলে আশরাফুল হক ঢাকা পাসপোর্ট (এসবি) বিশেষ শাখার উপ পরিদর্শক।
শুক্রবার আসরের নামাজের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার নামাজে জানাজা সরারচর খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। পরে বাজিতপুর উপজেলার সরিষাপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
আরইউ