সুস্থ থাকতে নিয়মিত সকালের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। তবে এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা না করে দিনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন অনেকে। কেউ আবার ব্যস্ততার অজুহাতে সকালের নাশতা না করেই কাজে বের হন। অনেকে ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সকালের নাশতা বাদ দেন বা সকালের নাস্তা না করলে হয়ত ওজন কমানো সম্ভব— এমনটি ভেবে থাকেন। তবে এটি একদমই ভুল ধারণা।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকায় যা খাওয়া হয় সবই সহজে হজম হয়। কিন্তু অনেকে ওজন কমাতে বা অন্য কোনো কারণে সকালে নাস্তা করেন না। ফলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় শরীরে। এ থেকে ছোট ছোট বিভিন্ন অসুখেরও জন্ম নিয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এটা একেবারেই ঠিক না। সকালে নাশতা না করার কারণে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। আবার দেখা যায় যারা সকালে নাশতা করেন তারা ভুল সময়ে খাচ্ছেন। সকালে নাশতা করার সঠিক সময় জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। ফোবস ম্যাগাজিনে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তারা।
সারাদিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাবার সকালের নাশতা। ফুড ইনসাইটের এক গবেষণা বলছে সকালের খাবার বাদ দিলে মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের সংবেদনশীলতা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। সকালের খাবার বাদ দিলে মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের সংবেদনশীলতা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
জেনে নিন নাস্তা করার সঠিক সময়
সকালের নাশতা করার সঠিক সময় গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সময়ে নাশটা করলে সেটা কাজে আসে না বরং সমস্যা দেখা দেয়। পুষ্টিবিদদের মতে সঠিক সময়ে সকালের নাশতা করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাবারের পর দীর্ঘসময় আমাদের শরীর খাবার পায় না আর এ কারণে সকালে একটু কাজ করার পর ক্লান্ত লাগতেই পারে। পুষ্টিবিদ লারসন বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় সকালে ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে সকালের নাশতা করা উত্তম। ঘুম থেকে ওঠার পর তাড়াতাড়ি সকালের নাশতা করলে ভালোভাবে বিপাক ক্রিয়া হবে। হজমের সমস্যা এড়াতে তাড়াতাড়ি নাশতা করাই ভালো। সকাল ১০টার মধ্যে নাশতা শেষ করাই ভালো।পুষ্টিবিদ লারসন আরও বলেন, আপনি যদি সকালে জিমে যান কিংবা ব্যায়াম করেন তাহলে ওয়ার্কআউটের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কলা বা অ্যাভোকাডো টোস্টের মতো হালকা খাবার খাওয়া ভাল।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক সকালে নাস্তা না করলে যেসব রোগ হয়-
ওজন বৃদ্ধি: অনাকাঙ্ক্ষিত বেড়ে যাওয়া ওজন যারা কমাতে চান তারা ভুলেও সকালের নাস্তা এড়াবেন না। কেননা, সকালের নাস্তা না করলে ক্ষুধাভাব বাড়বে। সেই সময় সামনে যা পাবেন তাই খাওয়ার ইচ্ছা হবে আপনার। এতে যেমন ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে আবার একইভাবে হজমজনিত অসুখও হতে পারে।
চুলের ক্ষতি: প্রতিদিন সকালে নাস্তা না করলে শরীরে ভয়ঙ্করভাবে প্রোটিনের মাত্রা হ্রাস পায়। এতে ক্যারোটিনের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আর ক্যারোটিন নামক এই উপাদান কমে গেলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে চুল পড়তে শুরু করে।
মাইগ্রেনের যন্ত্রণা: যাদের মাইগ্রেনজনিত সমস্যা রয়েছে তারা খাওয়ার ব্যাপারে অনেক সংবেদনশীল। তবে দিনের শুরুতে সকালের নাস্তাই যদি না করা হয় তাহলে তা মাইগ্রেনের জন্য আরও ভয়ের কারণ হতে পারে। কারণ, নাস্তা না করলে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এতে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং মাইগ্রেনের যন্ত্রণাও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হৃদরোগ: স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। সেদিক থেকে নাস্তা না করলে হাইপার টেনশন, ওবেসিটি, হাই ব্লাড সুগার ও হাই কোলেস্টেরলে প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আর এ থেকে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়: নিয়মিত সকালের নাস্তা না করলে দিনের বাকি অংশে অতিরিক্ত ক্যালোরির ওপর চাপ পড়ে। এতে দিনের বাকি অংশে প্রয়োজনের থেকে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়। যে কারণে ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার দিকে ধাবিত করে। আর স্থূলতা শরীরকে গুরুতর অসুস্থতার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রাখে। আর ক্যানসার এই ধরনের একটি ঝুঁকি। এ জন্য ক্যানসারকে দূরে রাখার জন্য নিয়মিত সকালের নাস্তা করা উচিত।
এবি