যশোরের শার্শার বেলতলা মৌসুমি ফল বাজারে (কৃষি পণ্য) কুল বোঝাই প্রতি ট্রাক থেকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা জোর পূর্বক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাক শ্রমিকের নামে কিছু অসাধু শ্রমিক ও বাজার কমিটি একত্রিত হয়ে সিলিপের মাধ্যমে ট্রাক প্রতি ২শ থেকে ৪শ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে বলে ট্রাক চালকদের অভিযোগ। চাঁদা না দিলে ট্রাক লোড- আনলোডে বাধা ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
ট্রাক চালকরা জানান, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে বেলতলা নামক স্থানে গড়ে উঠেছে মৌসুমি ফলের বাজার। প্রতিবছর কুল ও আম মৌসুমে এ বাজারে প্রতিদিন পাইকারি ফল বেচাকেনা হয়। চলতি মৌসুমে রাজধনী ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আগত ব্যাপারীরা কুল কিনে তা ট্রাকে ও পিকআপে ভরে তাদের নিজ নিজ বাজারে নিয়ে যায়। এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু শ্রমিক ও বেলতলা বাজার কমিটি মিলে প্রতি ট্রাক থেকে ২শ' টাকা থেকে ৪শ' টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। এ চাঁদার রশিদও দেওয়া হচ্ছে। তাতে লেখা আছে, ট্রাক বন্দোবস্তকারী অফিস। ট্রেড লাইসেন্স নং-৬৮৮। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের অন্তর্ভৃক্ত।
জানা গেছে, তথাকথিত বেলতলা বাজার কমিটির সভাপতি মাহামুদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান, বেলতলা বাজার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম ও শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মিলে কুল বোঝাই ট্রাকে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি করছে। এতে করে স্থানীয় আড়তদার, কুল ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন ট্রাক চালক জানান, চাঁদা আদায়কারীদের নির্ধারিত টাকা না দিলে বেলতলা বাজার থেকে ট্রাক লোড-আনলোড করতে বাধা দেওয়া হয়। এছাড়াও চাঁদার টাকার ব্যাপারে যেন পুলিশ বা সাংবাদিকদের কাছে কিছু না বলি সে জন্য বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। যে কারণে ট্রাক চালকরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। তার কাছ থেকে ও ২শ' টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে।
বেলতলা বাজার কমিটির সভাপতি মাহমুদ হোসেন জানান, অল্প কয়েক দিন হলো বেলতলা বাজারে কুলের পাইকারি হাট শুরু হয়েছে। বছরে দুই মৌসুমে বেলতলা বাজারে আম ও কুলের পাইকারি হাট বসে। আগে এই হাট থেকে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা ব্যাপকভাবে চাঁদা আদায় করত। বেলতলা বাজার থেকে সন্ধ্যার পর বাগআঁচড়া ট্রাক শ্রমিক অফিস থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। বেলতলা বাজার কমিটি কোন চাঁদাবাজির সাথে জড়িত না।
বেলতলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন হলো বেলতলা বাজারে কুলের হাট বসেছে। এখান থেকে দূরের ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কুল ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন। ট্রাক শ্রমিকরা সন্ধ্যার পর পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে টাকা আদায় করেন। কমিটির কেউ জড়িত নয়।
এব্যাপারে জানতে বাগআঁচড়া ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, শার্শার বেলতলা বাজারে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ তার কাছে নেই। যদি কোন ব্যক্তি অভিযোগ করে তবে অভিযোগ তদন্ত করে অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ, থাকে যে গত বছর আম মৌসুমে ট্রাকে চাঁদা আদায়ের সময় চাঁদার রশিদ টাকাসহ নাঈম নামে এক যুবক পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে নাঈমের স্বীকারোক্তি মতে শার্শা থানা পুলিশ মোট ৫ জনকে আসামি করে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে এবং নাঈমকে মাধ্যমে কারাগরে পাঠায়। বর্তমানে ঐ মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
এআই