এইমাত্র
  • সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু
  • টেকনাফে ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক
  • ৬ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ আজ
  • বর্তমান পরিস্থিতিকে মোটেই সমর্থন করি না : ডা. শফিকুর রহমান
  • নওগাঁয় চাচার লাঠির আঘাতে ভাতিজার মৃত্যু
  • যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ২
  • সাবেক মন্ত্রীর বাসায় ডাকাতির খবর, শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে হামলার অভিযোগ
  • ফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বরিশালে আনন্দ উল্লাস
  • আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবীতে জামালপুরে মশাল মিছিল
  • সময়ের কন্ঠস্বরের প্রতিনিধির ওপর হামলার ঘটনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • আজ শনিবার, ২৫ মাঘ, ১৪৩১ | ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    স্বর্ণ চোরাচালানের কিংপিন ‘সোনা আবু’ ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

    স্বর্ণ চোরাচালানের কিংপিন ‘সোনা আবু’ ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

    বাংলাদেশের স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের কুখ্যাত অপরাধী আবু আহমেদ ওরফে সোনা আবু শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন।

    রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা এবং অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা এই অপরাধী নানা প্রভাব খাটিয়ে এতদিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

    গ্রেপ্তারের পর সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এনে তাকে ডবলমুরিং থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ জানান, আবু ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দায়ের করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় হত্যামামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। সোমবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

    ৫৭ বছর বয়সী সোনা আবু আহমেদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা হলেন ফয়েজ আহমদ ও জাহানারা বেগম। একসময় ফটিকছড়িতে সিগারেট ও ঝালমুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। তবে ভাগ্য বদলানোর আশায় ১৯৯১ সালে শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

    কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসার পর সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক দশকের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের মূল হোতা এবং কোটি কোটি টাকার মালিক। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনুসন্ধানে জানতে পারে, শুধু ২০২২ সালেই তার ৭২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

    সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সোনা আবুর নামে ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ বিশাল। এর মধ্যে রয়েছে—চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি। ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ও জাহানপুর এলাকায় ২৪টি জমি, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ১৬ কাঠার প্লট, পাঁচলাইশ হিলভিউ আবাসিক এলাকায় পাঁচতলা ‘নিরিবিলি ভবন’, রাউজানে ‘পল্লী কানন’ ও ‘পল্লী শোভা’ কনভেনশন হল, ফটিকছড়ির ফতেহপুরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনতলা বাড়ি ‘জাহানারা ম্যানশন’, স্যানমার ওশান সিটিতে একটি দোকান এবং দুবাইতে অন্তত তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

    এছাড়া, তার সহযোগীদের নামে আরও অনেক সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। তার ম্যানেজার এনামুল হক নাঈমের নামে চট্টগ্রামে অন্তত ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।

    সোনা আবুর নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে, যখন তিনি অপহৃত হন। চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসার সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয় এবং এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান।

    তবে ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে একাধিক স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা হয়। ওই বছর ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ১০৫ কেজি স্বর্ণসহ কয়েকটি চালান ধরা পড়ে। একই বছর ৫২৫ পিস স্বর্ণের বারসহ বিপুল পরিমাণ সৌদি মুদ্রা জব্দ হয়। এসব ঘটনায় ঢাকা বিমানবন্দর থানা ও পল্টন থানায় মামলা হয়।

    ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী খুনের মামলায় আলোচিত তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তার বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ টাকা উদ্ধার করেন। ওই ঘটনায় আবু ও তার ম্যানেজার এনামুল হক নাঈমকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়।

    এরপর ২০১৬ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হন সোনা আবু। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

    তদন্তে বেরিয়ে আসে, হাইকোর্টের দুই বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে তিনি জামিন নেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন।

    সিআইডির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সোনা আবুর ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শত শত কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য। বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে ও তার সহযোগীদের নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪০৯ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

    শুধুমাত্র ২০০৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে, নগদ ২৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।

    ২০২০ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ২৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা হয়। এতে আবুর সঙ্গে আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়।

    সোনা আবুর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ছিল ব্যাপক প্রভাব। ঢাকা ও চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, সংসদ সদস্য এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ফলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

    তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে, হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। জামিন স্থগিত হলেও তিনি দেশত্যাগের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

    এরপর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, দুবাই পালানোর চেষ্টা করার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন।

    সোনা আবুকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হলে, বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো চলছে। সিআইডি, দুদক ও অন্যান্য সংস্থা তার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…