পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই এমন চারটি ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান এর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে অভিযানে গুরু অপরাধে লঘু শাস্তির বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটা স্থাপন ও ইট তৈরির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনের নিকট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে গতকাল যে পাঁচটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয় তার চারটির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই ভাটাগুলো ইট তৈরি করতে পারবে না।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। একই আইনের ৯ ধারার উপধারা ১ এ বলা আছে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীন ইস্যুকৃত পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত কোন ব্যক্তি লাইসেন্স ইস্যুকরণের জন্য দরখাস্ত দাখিল করতে পারবেন না।
পরিবশ অধিদপ্তরের জেলা শাখার তথ্য অনুযায়ী, মেসার্স এম.বি.ই ব্রিকস ২০১২ সালে, মেসার্স এমএসবি ব্রিকস ২০১৭ সালে, মেসার্স কেএসবি ব্রিকস ২০১৩ সালে, মেসার্স ডিডিবি ব্রিকস ২০১৩ সালে সর্বশেষ পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল অনুমতি ছাড়া মাটি সংগ্রহের দায়ে মেসার্স এম.বি.ই ব্রিকসকে ২০ হাজার টাকা, মেসার্স এমএসবি ব্রিকসকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স কেএসবি ব্রিকসকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স ডিডিবি বিক্রসকে ১০ হাজার টাকা ও মেসার্স শাহীন ব্রিকসকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, লাইসেন্স ব্যতিরেকে ইট প্রস্তুত করলে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। অপরদিকে প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে মাটি সংগ্রহ করলে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, দিনের পর দিন অনুমতি ছাড়াই ইটভাটাগুলো পরিবেশের ক্ষতি করে কার্যক্রম চালিয়ে আসলেআও প্রশাসন তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এরপরও যদি আইনের প্রয়োগ কঠোর ভাবে হতো তাহলেও হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতো এমন অনিয়ম। কিন্তু গতকাল (রবিবার) চার ইটভাটায় যে যৎসামান্য অর্থদণ্ড করা হয়েছে তাতে ইটভাটা মালিকদের অনিয়মকে বাহবা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সভাপতি একেএম আনোয়ারুল খায়ের বলেন, এটা রীতিমতো হতাশা জনক। যেখানে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে দেবীগঞ্জে ছাড়পত্র ও লাইসেন্সহীন চারটি ইটভাটায় যে যৎসামান্য অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এতে অবৈধ ইটভাটা মালিকরা তাদের অপরাধ অব্যাহত রাখায় উৎসাহিত হবেন।
এই বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি লাইন কেটে দেন।
উল্লেখ্য, দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৫টির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং ৭টির পরিবেশগত ছাড়পত্র হালনাগাদ রয়েছে।
এআই