কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবন ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে সেখান থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা শহরের খরমপট্টি এলাকার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টিটুর বহুতল ভবনের তালা ভেঙে বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এরপরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একই এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ির গেট ও দরজা ভেঙে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। ঘটনার সময় নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙচুর করা সাবেক রাষ্ট্রপতির বাসভবনসহ হামলা করা অন্য জায়গা থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককে। অনেক উৎসুক জনতাকে আবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ভিডিও করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পাকুন্দিয়া পৌরসদর বাজারে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরসহ বাজিতপুর পৌর সদর বাজারের সিনেমা হল মোড়ে শেখ মুজিবসহ সাবেক চার রাষ্ট্রপতির ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। তবে পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

এদিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিন্নাটি মোড়ে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানসহ জেলহত্যার ঘটনায় শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবিসংবলিত ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি চৌরাস্তা মোড়ে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ চার নেতার নামে স্থাপিত ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া, দুপুরেই কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা সদর বাজার মোড়ে স্থাপিত সাবেক চার রাষ্ট্রপতির ম্যুরাল ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। এসময় কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ভাঙচুর ও লুটপাটের ভয়ে দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেন।

অপরদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ এলাকায় স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এছাড়া বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। এছাড়া বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে পাশের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

এর আগে বুধবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতাসহ ছাত্ররা জেলা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুনসহ এটিকে পাবলিক টয়লেট ঘোষণার পাশাপাশি শহরের খড়মপট্টি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ কার্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। তবে যেসব জায়গায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে হামলা ভাঙচুর করা হয়েছে, সেসব জায়গায় এর আগেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। আবার এসব জায়গায় হামলা–ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ জনতা। অনেকে এটাকে পলাতক শেখ হাসিনার ভারত থেকে বক্তব্য ও ফেব্রুয়ারি মাসে লিফলেট বিতরণসহ আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচির ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে জানান অনেকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন বলেন, শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েও খুনি হাসিনা দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাই কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাসভবনসহ কয়েকটি জায়গায় হামলা–ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

পিএম