শরীয়তপুরের চার সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ দিনেও কোনো হামলাকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। আর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ জেলার সচেতন মহল ও গণমাধ্যম কর্মীরা।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সদর হাসপাতালের এক সংবাদ প্রকাশের জেরে গত সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হামলার শিকার হয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুজনকে গুরুতর আহত। এসময় তাকে বাঁচাতে এলে নিউজ টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশন ও জাগো নিউজের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, দেশ টিভির সাইফুল ইসলাম আকাশ ও সময়ের কন্ঠস্বর প্রতিনিধি নয়ন দাসের উপর হামলা চালায় তারা। পরে সুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে আহত ওই সাংবাদিক।
থানা সূত্রে জানা যায়, হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সুজন বাদী হয়ে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নুরুজ্জামান শেখ (৪৫), শামিম শেখ (৪০), ইব্রাহিম মোল্লাসহ(৪০) ৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতাদের দাবীতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বুধবার নড়িয়া উপজেলার সামনে মানববন্ধন করে জেলার সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও কর্মরত সাংবাদিকরা। হামলার ৪ দিন পার হলেও অভিযুক্তরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন হামলাকারী গ্রেফতার হয়নি। এতে অনেকটাই আশংকায় রয়েছে হামলার শিকার গণমাধ্যম কর্মীরা।
ভুক্তভোগী সমকালের সাংবাদিক সোহাগ খান সুজন বলেন, মামলার পর থেকে অভিযুক্তরা কৌশলে হুমকি ধামকি দিয়ে চলছেন ও বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমি আমার পরিবার নিয়ে আশংকায় রয়েছি। অপরাধীরা গ্রেফতার না হলে তারা যে কোন মুহূর্তে আমার ক্ষতি করতে পারে। পুলিশের কাছে একটাই দাবি, দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হোক।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহবায়ক ইমরান আল নাজির বলেন, দিনের আলোতে হাতুড়ি দিয়ে যেভাবে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে এটি একটি মব ক্রিয়েটের চেষ্টা। হয়তো হামলায় ওই সাংবাদিক মারাও যেতে পারতেন। আমরা এ ধরনের মবকে সমর্থন করি না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের প্রতি নিন্দা। আমরা চাই আসামীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হোক।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলার ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সদস্য সচিব নুরুল আমিন রবিন বলেন, সাংবাদিকদের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। যার ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না। অদৃশ্য কোন কারণে তাদের গাফিলতি আছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের দাবী আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে নয়তো আমরা জেলার সাংবাদিকরা বড় ধরনের কর্মসূচি দেবো।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক মজিবুর রহমান মাদবর বলেন, শরীয়তপুরের সাংবাদিকদের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে হামলার প্রকৃত কারণ ও ঘটনার বিবরণ জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিবে।
জানতে চাইলে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামীর গা ঢাকা দেয়ায় তাদের ধরতে একটু সময় লাগছে।
আসামীদের ধরতে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। আসামীরা পলাতক এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের ধরতে ইতোমধ্যে ২ টি অভিযান চালানো হয়েছে তবে তাদের পাওয়া যায়নি। আশা করছি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে।