মানবদেহের জন্য ‘নাক’ ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ? একবার নাক বন্ধ করেই দেখুন না! এটি যে কেবল শ্বাস-প্রশ্বাসের মৌলিক কাজটিই করে, তা কিন্তু নয়; পৃথিবীর তাবৎ গন্ধ বিচারের প্রধান অঙ্গও এই নাসারন্ধ্র। সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ বিবেচনায় কোনটি গ্রহণীয় আর কোনটি বর্জনীয়—এই ঘ্রাণেন্দ্রিয় না থাকলে কী বিচ্ছিরি ব্যাপার হতো ভাবুন তো! আবার কথা বা সুর তৈরিতেও এ অঙ্গ অপরিহার্য। শারীরিক সৌন্দর্য বা বৈচিত্র্যেরও অনিবার্য অংশ এটি।
আজ ১১ মার্চ, ‘ওয়াশ ইওর নোজ ডে’ বা ‘নাক পরিষ্কার করা দিবস’। ক্লিয়ার নামক যুক্তরাষ্ট্রের একটি নাক ও মুখের যত্নের পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ২০২১ সালে দিবসটি পালন শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
অনেকেই নাকের যত্নের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। গুরুত্বের সঙ্গে শরীরের এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির যত্ন নেওয়া উচিত। মানুষ চোখ, মুখ, হাত, পা, চুল এমনকি কণ্ঠস্বরের যত্ন নিলেও নাকের ব্যাপারে তেমন কোনো খেয়াল করে না। অথচ নাকের অযত্নের কারণে শরীরে মারাত্মক সব রোগ বাসা বাঁধতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ প্রতিদিন নানা ধরনের স্বাস্থ্যহানিকর ময়লা নাকে জমে থাকে। এসব ময়লা বড় ধরনের অসুখের কারণ হয়ে দাড়ায়। নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক চুলকানো, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, হাঁচি-কাশি, নাক বন্ধ, নাক ডাকা —কত সমস্যা। যাদের নাকের জটিলতা আছে, তারাই কেবল বোঝেন এসব কষ্ট।
আসুন নাকের যত্নে কিছু টিপস দেখে নেওয়া যাক
নাক পরিষ্কার করার জন্য কুসুম গরম পানির ভাপ খুব উপকারি। গরম পানিতে মেনথলের দানা মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে ভেপার বা ইনহেলেশন নাক দিয়ে টেনে নিন। এতে নাক থেকে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দূর হবে। এ অসুখে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খুব কার্যকর এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে বাজারে চলতি নাকের ড্রপে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘদিন ব্যবহারে ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অযথা নাকের ড্রপ, বেশিদিন ব্যবহার করবেন না। সমস্যা বাড়লে নাক-কান-গলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এক চিমটি খাবার সোডা দুধের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে তুলা ভিজিয়ে নাকের ওপর আলতো করে মুছে নিন। এতে নাকের উপরে জমে থাকা ধুলো-ময়লা পরিষ্কার হবে।
১০০ গ্রাম গোলাপজলে ১ চা-চামচ কর্পুর মিশিয়ে রেখে দিন। দিনে দুই থেকে তিনবার তুলোয় এই গোলাপজলের মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার করলে ব্ল্যাক হেডস বা হোয়াইট হেডসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নাকের পাশে বা ত্বকের যে কোন জায়গায় হোয়াইট হেডস হলে তা কখনও চাপ দিয়ে বের করার চেষ্টা করবেন না। আতপ চালের গুঁড়ার সঙ্গে মসুর ডাল বাটা লাগালে এর থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।
নাকের উপর ও চারপাশে দুধ দিয়ে পরিষ্কার করে ক্লিনজিং মাস্ক লাগাতে হবে। দই, ডিম, মধু এবং অল্প পরিমাণ হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে নাকের উপর লাগিয়ে রাখুন। দশ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ফলে সব সময় নাকের উপর ও চারপাশ পরিষ্কার থাকবে। সহজে কোন ছোপ বা ব্ল্যাক হেডস হবে না।
অনেকের নাকের দুই পাশে কালচে ছাপ দেখা যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে ১ চামচ মুলতানি মাটি, ৪-৫টি লবঙ্গগুঁড়া, গোলাপজলে মিশিয়ে নাকের উপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
নাকের ত্বক মসৃণ করার জন্য এক চামচ মধু, দুই চামচ গাজরের রস, ১০ থেকে ১২ ফোঁটা লেবুর রস এবং এক চামচ বেসন একসঙ্গে মিশিয়ে এ মিশ্রণ লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে নাকের ত্বক সহজেই মসৃণ হয়ে উঠবে।