এইমাত্র
  • ঢাকায় না এসে ইতালি ফিরে গেলেন ফাহমিদুল
  • টিসিবির জন্য ২৭৩ কোটি টাকার ডাল-তেল ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • যে কারণে ধসে পড়ল গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি
  • তসলিমা নাসরিনকে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরানোর দাবি বিজিপির
  • ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার
  • ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ
  • ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান
  • ডেমরায় বাসের ধাক্কায় বাবার মৃত্যু, ছেলে আহত
  • ভারতে ফের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নাগপুরে কারফিউ জারি
  • বায়ু দূষণের শীর্ষে দিল্লি, জেনে নিন ঢাকার অবস্থান
  • আজ মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র, ১৪৩১ | ১৮ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    মাঠেই আলু সংরক্ষণ, ন্যায্য দামের অপেক্ষায় কৃষক

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮ পিএম

    মাঠেই আলু সংরক্ষণ, ন্যায্য দামের অপেক্ষায় কৃষক

    আরেফিন লিমন, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:১৮ পিএম

    আলু বিক্রির পর কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বোয়ালীয়া গ্রামের কৃষকরা। একদিকে আলুর দরপতন, অন্যদিকে দেনার বোঝা, সব মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটছে গলাচিপার কৃষকদের।

    আলুর ভালো ফলন হলেও দাম কমে যাওয়ায় এবং সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষেতেই পাইকারদের কাছে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আলু জমাট করে রাখতে টাল তৈরি করেছেন, কেউবা গাছ কেটে মাটির নিচে সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু তাতেও ভয় কাটছে না। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ক্ষেতেই হাজার হাজার মন আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

    কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় আলু চাষের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। প্রথমদিকে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গলাচিপার মুরাদনগর, বোয়ালীয়া ও চরখালী গ্রামে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়।

    এবছর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার (৩৬৫ হেক্টর) চেয়ে বেশি। প্রতিটি হেক্টর জমিতে ২৮ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চাষিরা এখন বিপাকে। ক্রেতা নেই, সংরক্ষণের হিমাগার নেই, পাইকাররা সুযোগ নিচ্ছে, ফলে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা।

    গলাচিপার সেলিম নামের এক কৃষক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের কাছে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। তিনি বলেন, যদি হিমাগার থাকত, তাহলে আমাদের এই দুঃসময় দেখতে হতো না। আলু সেখানে সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম।

    গলাচিপার মুরাদনগর গ্রামের আবু সালেহ (৫০) এবছর ৪০ কড়া জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার ভাষায়, প্রতি কড়ায় ৫,৫০০ টাকা খরচ হলেও ফলন হয়েছে ৮-১০ মন। প্রথমদিকে পাইকাররা ৬৯০ টাকা মন দরে কিনলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম নেমে এসেছে ৬০০ টাকায়। একই গ্রামের রেজাউল করিম, শামীম হাং, রহমান হাং ও মিলন মিয়া জানান, দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই আলু রেখে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, ন্যায্য মূল্য না পেলে পরের মৌসুমে কেউ আর আলু চাষে আগ্রহী হবে না।

    উত্তর চরখালী গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন ৮০ কড়া জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, "লাভ তো দূরের কথা, সমান থাকাই দায়। এখনো ক্ষেত থেকেই আলু তুলতে পারিনি।"

    এদিকে গলাচিপার আলুক্ষেতে শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। মিতু বেগম, লিজা আক্তার, শাহিনুর বেগম ও রিনা বেগম প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কষ্ট করে কাজ করেন। কিন্তু পুরুষদের সমান পরিশ্রম করেও তারা অর্ধেক মজুরি পান। পুরুষ শ্রমিকরা যেখানে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, সেখানে নারীরা পাচ্ছেন মাত্র ৩০০ টাকা।

    তিনি আরও বলেন, আমরা সমান পরিশ্রম করি, কিন্তু মজুরি অর্ধেক। রমজানের দিনে এত কাজের পরও ন্যায্য মজুরি পাই না।

    গলাচিপার কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, আলু একটি সবজি, যা আগাম চাষ করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বোয়ালীয়ার কৃষক মোশারেফ চকিদার পাশের উপজেলায় ১০০ মন আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান।

    কৃষির এ কর্মকর্তার মতে, যদি কৃষকরা ধৈর্য ধরে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে তারা লাভের মুখ দেখবেন।

    তবে কৃষকদের একটাই দাবি হিমাগার চাই। তাহলে ভবিষ্যতে তারা লোকসানের শিকার না হয়ে লাভবান হতে পারবেন। গলাচিপার হাজারো কৃষক এখন একটাই দাবি তুলেছেন। আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে। যদি এসব ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামীতে অনেকেই আলু চাষ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবেন কৃষক।

    কৃষকদের প্রশ্ন, সার, বীজ, শ্রমিক সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাহলে আমাদের উৎপাদিত ফসলের দাম কমছে কেন? এখন দেখার বিষয়, কৃষকদের এই সংকট সমাধানে সরকার বা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…