ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার যখন ভয়াবহ হামলা এবং হত্যাযজ্ঞ চলছিল, শত শত পর্যটকরা প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছিলেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আদিল হুসেন অদ্ভুত সাহসিকতা দেখান। তিনি এক বন্দুকধারীর কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
পহেলগাঁও হত্যাযজ্ঞের নায়ক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। পহেলগাঁওয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের টাট্টু ঘোড়ায় চড়ানোই ছিল তার কাজ। তিনি পেহেলগামে গাড়ি পার্কিং এলাকা থেকে পায়ে হাঁটা পথেই যাওয়া যায় এমন বৈসারণ ময়দানে পর্যটকদের তার ঘোড়ায় করে নিয়ে যেতেন। এ ভাবেই বছরভর উপার্জন করতেন স্থানীয় বাসিন্দা সইদ। মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন নিহতের তালিকায় রয়েছে তাঁর নামও।
সেই দিন তিনি একজন পর্যটককে সেখানে পৌঁছে দিয়ে তারই নিরাপত্তার জন্য এক জঙ্গির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অস্ত্রধারীদের সামনে। ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বন্দুক। কিন্তু, পেরে ওঠেননি। তার দিকে তাক করা এ কে ৪৭ গর্জে ওঠে। জঙ্গিদের নিরস্ত্র করার দুঃসাহস দেখানোর পরিণাম হিসাবে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় সইদ আদিল হুসেন শাহের শরীর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাকিদের বাঁচাতে এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন সইদ। কিন্তু সাহস দেখাতে যাওয়াই কাল হল! একমাত্র তিনিই জঙ্গিদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। পরিণামে প্রাণ হারাতে হল।
জানা গেছে, অস্ত্রধারীরা হত্যার আগে মানুষকে তাদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে এবং একটি ইসলামি আয়াত পাঠ করতে বলে। এরপরই তারা হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে হত্যা করেন। এই মর্মান্তিক হামলায় সৈয়দ আদিল ছিলেন একমাত্র স্থানীয় নিহত ব্যক্তি। খবর এনডিটিভির।
সৈয়দ আদিল ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। তার পরিবারে রয়েছেন মা-বাবা, স্ত্রী এবং সন্তানেরা। তার মায়ের কান্না থামছে না—ছেলে হারানোর শোকের পাশাপাশি পরিবার নিয়ে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। পরিবারটি এখন ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছে।
তার বাবা সৈয়দ হায়দার শাহ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, আমার ছেলে গতকাল কাজের জন্য পেহেলগামে গিয়েছিল। বিকেল ৩টার দিকে আমরা হামলার কথা শুনি। তখনই আমরা তাকে ফোন করি, কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ৪টা ৪০ মিনিটে তার ফোন চালু হলেও কেউ ধরেনি। তখন আমরা তড়িঘড়ি করে থানায় ছুটে যাই, আর সেখানেই জানতে পারি সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের যেন উপযুক্ত সাজা হয়।'
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরন উপত্যকায় ঘুরছিলেন পর্যটকেরা। তখনই আচমকা হামলা করে জঙ্গিরা। মুহুর্মুহু গুলি চালানো শুরু হয়। পর্যটকদের কাছে এসে একে একে তাঁদেরকে গুলি করে হত্যা করতে শুরু করে জঙ্গিরা। তখনই এগিয়ে আসেন ঘোড়সওয়ার ওই যুবক। বাকিদের বাঁচাতে এক জন জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন সইদ। কিন্তু পারেননি। তার আগেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেন জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
এবি