সীমান্ত এলাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নানা ভিডিও নিয়ে রাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সব ভিডিও সত্য নয়, আবার সবটা যে মিথ্যা তাও নয়।”
বুধবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ‘দরজা বন্ধ’ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ের ভিডিও ও টিকটক কনটেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, “আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। অনেকে এই পারে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। তবে ভিডিওতে বিষয়গুলোর উপস্থাপন অনেক সময় অতিরঞ্জিত। আমাদের ব্যালেন্স করে বুঝতে হবে কোনটি বাস্তব, কোনটি নয়।”
তিনি জানান, মিয়ানমার সীমান্তে এখন দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ চলছে। সরকারি পক্ষ ছাড়াও বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মিও চাঁদা আদায় করছে। ফলে সীমান্ত বাণিজ্যে একধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে।
উপদেষ্টা চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, পটিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই ৪টি উপজেলার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য (পাহাড়-সমতল) সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করছে।”
সাম্প্রতিক অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাউজান উপজেলায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র চার মাসে ৮টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। ফটিকছড়িতে অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৩৫%। পটিয়ায় গত এক বছরে সাড়ে ৭ কেজি ইয়াবাসহ অন্তত ১৮ জন মাদক কারবারি আটক হয়েছে। সাতকানিয়ায় পারিবারিক বিরোধ ও জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে ১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে শুধু জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসব এলাকায় অপরাধের পর দুর্বৃত্তরা সাধারণত পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়, যেখানে আইন প্রয়োগকারীদের জন্য অভিযান পরিচালনা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “যৌথবাহিনীর অভিযান একটুও কমেনি বরং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ি ও সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে। পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে।”
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা সত্য ঘটনা তুলে ধরুন। এতে আমাদের কাজ সহজ হয়। ভুল বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ রাষ্ট্রকে অকারণে চাপে ফেলে এবং পার্শ্ববর্তী দেশের অপপ্রচারের সুযোগ তৈরি করে।”
উপদেষ্টা তার নিজে তিনবার পাহাড়ে কর্মরত থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি বিগ্রেড কমান্ডার হিসেবে পাহাড়ে কাজ করেছি। আগে যেখানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে গাড়ি উড়ানো হতো, এখন সেসব জায়গায় পর্যটক যাচ্ছে। অপহরণ বা অপরাধ শুধু পাহাড়ে হয় না, সমতলেও হচ্ছে। পাহাড় এখন অনেক শান্ত।”
এইচএ