রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গত এক মাস ধরে ট্যাপের পানিতে ছোট ছোট লার্ভার মতো পোকা ও কেঁচো পাওয়ার অভিযোগ করছেন। সেই সঙ্গে পানিতে রয়েছে দুর্গন্ধ।
রামপুরা, বনশ্রী, আফতাবনগর, মগবাজার, কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগর ও খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ট্যাপে পানি ছাড়লে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে তারা ছোট ছোট লার্ভার মতো পোকা ও কেঁচো দেখতে পাচ্ছেন। এসব অভিযোগ ঢাকা ওয়াসাতেও জানানো হয়েছে। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এর দায় নিতে নারাজ।
তাদের দাবি, ওয়াসার সরবরাহ লাইনে কোনো সমস্যা নেই। পাইপলাইনে পানির নমুনা পরীক্ষা করে তারা এমন কোনো সমস্যা পাননি। ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লাইনে পোকা জন্মানোর সুযোগ নেই।
তাদের ধারণা, অভিযুক্ত এলাকার কোনো বাড়ির পানির ট্যাংকে পোকা জন্মে থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো ফাটা বা উৎস থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা হামিদুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, রামপুরা ওয়াসার পানিতে চিকন লাল লাল এক ধরনের পোকা আসে। সবার বাসায় কি এমন হয়?
মন্তব্যের ঘরে অনেকেই একই সমস্যার কথা জানান। মগবাজারের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, বেশ কয়েকবার ছোট ছোট পোকার সঙ্গে পানিতে ছোট কেঁচোর মতো লাল পোকাও দেখেছি। এই পানিতে গোসল ও রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা পানি পান করতে চায় না। তিনি আরও জানান, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
বনশ্রীর বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাজধানীতে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও পোকা, বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে। কল ছাড়লেই বের হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি ও পোকা। এ পানি পান না করলেও বাধ্য হয়ে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে মানুষ। বাসা-বাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও সমাধান মিলছে না। সবাই বলছে পানিতে পোকামাকড়ের উৎস ওয়াসার সাপ্লাই পাইপ।
আফতাবনগরের বাসিন্দা এএনএম মাসুম ফেসবুকে লেখেন, গোসল আর রান্না-বান্নার পানিতে কিলবিল করছে পোকা! এ সমস্যা ফেইস করছি অনেকদিন ধরে। কিন্তু ওয়াসার পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
তবে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন জানান, ওয়াসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলোর পানি নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় এবং সেখানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন ২৮৫ থেকে ২৯০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যার মধ্যে সামান্য কিছু এলাকা থেকে অভিযোগ এসেছে। তার মতে, অধিকাংশ বাড়ির ওয়াটার রিজার্ভার নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ৪০টি অভিযোগ পেলেও, সরবরাহ লাইনের পানিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। পরিশোধিত পানিতে ক্লোরিন মেশানো থাকায় পোকা থাকার সুযোগ নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াসার জোনাল অফিসের প্রকৌশলী বদিউল আলম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গিয়েছি এবং ওয়াসার পাইপলাইনের পানি স্বচ্ছ ও জীবাণুমুক্ত পেয়েছি। সম্ভবত বাড়ির ট্যাংক পরিষ্কার না করার কারণে পোকা জন্মেছে।
সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসা এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে গ্রাহকদের তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড রিজার্ভার নিয়মিত পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওয়াসা জানিয়েছে, তাদের সরবরাহকৃত পানিতে কোনো পোকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এবং ল্যাবে পরীক্ষায় কোনো জীবাণুও মেলেনি। ওয়াসা ৭৪ ভাগ পানি গভীর নলকূপ থেকে ও ৩৬ ভাগ নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করে এবং সরবরাহ নেটওয়ার্কে পর্যাপ্ত ক্লোরিন থাকে। পানিসংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগে ১৬১৬২ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে।
এমআর