সাজানো গোছানো ঘরে মনটাও বেশ ভালোই লাগে। এমন একটি ঘরে সুগন্ধি স্প্রে যতটা মনমুগ্ধকর, ততটাই ক্ষতিকর আপনার এবং পরিবারের জন্য। রান্নার আঁশটে গন্ধ হোক বা বর্ষায় সোঁদা গন্ধ, পেলেই ঘরে রুম ফ্রেশনার ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাস। ধোঁয়ায় নানাবিধ রোগের ঝুঁকি থাকে বলে ধীরে ধীরে রুম ফ্রেশনারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বর্তমানে তার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে বাজারে জনপ্রিয় রুম ফ্রেশনার। তবে এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে হতে পারে ক্ষতিকর। প্রয়োজন খানিকটা রাশ টানার।
রুম ফ্রেশনার স্প্রে-র ক্ষতিকারক দিকগুলি কী কী?
১) লিভার, কিডনি সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকি: রুম ফ্রেশনারের মধ্যে ক্ষতিকারক যৌগ পাওয়া যায় মাঝেমধ্যেই। এই রাসায়নিকগুলি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায় সুগন্ধ তৈরি করার জন্য। এতে ঘরে সুন্দর গন্ধ ছড়ায় ঠিকই, কিন্তু পাশাপাশি অ্যাসিটোন, ইথানল এবং লিমোনিনের মতো ক্ষতিকারক যৌগ চোখে, গলায়, ফুসফুসে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। যদি হাওয়া চলাচলের জায়গা ভালো না থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
২) হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা: ভুগলে এয়ার ফ্রেশনারগুলি বেশি ক্ষতিকারক। এই স্প্রে-র ফলে অনেকের নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। যে সব উপাদান দিয়ে এগুলি বানানো হয়, সেগুলি ফুসফুসে অস্বস্তি তৈরি করে। ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট বা টান দেখা দিতে পারে। এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহারের পরে যদি লক্ষ করেন, আপনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাহলে বুঝবেন, বায়ুবাহিত রাসায়নিকগুলি আপনার ফুসফুসে প্রভাব ফেলছে।
৩) বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি: রুম ফ্রেশনারে অ্যাসিটোন, ইথানল, লিমোনিন - এগুলোর মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক যৌগ থাকে যা বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে যায় গন্ধ ছড়াতে। আর বদ্ধ ঘরে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে, রুম ফ্রেশনার আরও ক্ষতি করতে পারে। এগুলি বাষ্পীভূত হয়ে চোখে, গলায়, সেখান থেকে ফুসফুসে পৌঁছলে শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
৪) পদার্থ নিঃসরণ: ঘরের ভিতরের দূষণের জন্য দায়ী এই পণ্যগুলি। এয়ার ফ্রেশনারগুলি আপনার ঘরে বেনজিন, টোলুইন এবং ফর্মালডিহাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে। এগুলি বাতাসে থেকে যায় এবং জমা হয়। প্রতি দিন এই দূষিত বায়ু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে ধীরে ধীরে।
৫) হরমোন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিঘ্নিত: অনেক সুগন্ধি পণ্যের সঙ্গে থ্যালেটস (এক প্রকার রাসায়নিক, যা প্রাথমিকভাবে প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রূপচর্চার পণ্য থেকে শুরু করে ফুড প্যাকেজিংয়ের সময়েও ব্যবহার করা হয় এগুলি) যোগ করা হয় যাতে সুন্দর গন্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয়। কিন্তু এগুলিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই রাসায়নিকগুলি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে প্রজনন স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৬) শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা: হাঁপানি বা যেকোনো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় এয়ার ফ্রেশনার সমস্যা আরও ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। এর রাসায়নিক যৌগগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট, কাশি বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই ঘরে বা গাড়িতে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করার পরেই যদি বোঝেন কাশি বা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তবে তখনই এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার বন্ধ করুন, বুঝতে হবে এটি আপনার ফুসফুসের ক্ষতি করছে।
৭) ঘর দূষণ: এয়ার ফ্রেশনার থেকে বেনজিন, টোলুইন এবং ফর্মালডিহাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে, ঘরের বায়ুদূষণ ঘটায়। তাই যত বেশি এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করবেন, তত এই দূষিত বায়ু আপনার ক্ষতি করবে।
৮) পোষাপ্রাণীদের জন্যও ক্ষতিকর: এয়ার ফ্রেশনারে ব্যবহৃত বায়ু দূষণ করা ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি শুধু মাত্র আপনারই নয়, আপনার পোষ্যেরও ক্ষতি করছে। কুকুর, বিড়াল, পাখি - সবারই সমস্যা হয় এতে। তাদেরও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রভাব পড়ে লোম ও পালকের। হাঁচি কাশির সমস্যা হয়, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হতে পারে। তাই পোষ্যের থেকে দূরে রাখুন রুম ফ্রেশনার।
এইচএ