নওগাঁর বদলগাছীতে নারী লোভী পুলিশ কনস্টেবল পাপেল হাসান (বিপি- ৯৩১৩১৬১২৮২) এর বিরুদ্ধে একের পর বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তৃতীয় স্ত্রী হাফিজা আক্তার আঁখি।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১২ টায় বদলগাছী উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। অভিযুক্ত পুলিশের কনস্টেবল পাপেল হাসান একই উপজেলার চাপাইনগর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলায় ঈশ্বরদী থানার পাকশী পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী হাফিজা আক্তার আঁখি বলেন, '২০২৩ সালে ২৭ অক্টোবর পারিবারিকভাবে পাপেল হাসানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তার বাড়ি মেরামত ও সংস্কার করার কথা বলে ৭ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নেয়। বিয়ের পর তার কর্মস্থল বগুড়া জেলার কাহালু থানায় কর্মরত থাকাকালীন সেখানে ভাড়া বাসায় বসবাস করতাম। এসময় আমি হঠাৎ অসুস্থ হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে আমাকে না জানিয়ে ওই ভাড়া বাসা ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে ৭ মাস পর বগুড়ার সারিয়াকন্দি থানাধীন চন্দন বাইশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের কোয়ার্টারের ৩য় তলায় বসবাস শুরু করা হয়। এসময় সংসার চালানোর কোন খরচ বহন করতো না পাপেল। ওই বাসায় থাকাকালীন স্বামী পাপেল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে এবং গালি-গালাজসহ আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। পরে জানতে পারি বিভিন্ন মেয়ের সাথে তার পরকিয়া আছে। বিষয়টি শশুর-শাশুড়িকে জানালে তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।'
ভুক্তভোগী আরো বলেন, 'পাপেল পরে যৌতুক হিসেবে বাবার কাছ থেকে আরো ৫ লাখ টাকা এনে দিতে বলে। টাকা দিতে না পারায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এবং ভরণ-পোষণ বন্ধ করে দেয়। সংসার খরচ বাবদ টাকার কথা বললে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। আমার বিয়ের কিছু দিন পর জানতে পারি আগেও আরো দুইটি বিয়ে করেছে। এবং তাদেরকেও একইভাবে যৌতুকের জন্য চাপ দিয়ে টাকা না দিতে পারায় তাদের তালাক দিয়ে গোপনে আমাকে বিয়ে করেছে। ৭ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়ার পরেও আমাকে আরো ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকেও তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছে।'
তিনি আরো বলেন, 'আমাদের পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি নিয়ে সে সময় মাননীয় পুলিশ সুপার, বগুড়া মহোদয়ের নিকট একটি অভিযোগ দাখিল করি। অভিযোগ দাখিলের পর আমাকে টেলিফোন নং +৮৮০২৫৮৮৮১৪১৪২ থেকে আমার মুঠোফোনে কল করে জানায় এসব সাংসারিক সমস্যা আমরা সমাধান করি না। আপনি পারিবারিকভাবে সমাধান করেন, নতুবা কোর্টে মামলা করেন। মাননীয় পুলিশ সুপার, বগুড়া মহোদয় আমার অভিযোগের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে পাবনা জেলায় ঈশ্বরদী থানার পাকশী পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে বদলী করেন। পরবর্তীতে আমি ঢাকা হেডকোয়াটার্স, বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। একই কপি মাননীয় ডিআইজি, রাজশাহী রেঞ্জ, রাজশাহী বরাবর পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রেরণ করি এবং মাননীয় পুলিশ সুপার, পাবনাতে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে অভিযোগ দাখিল করি। কিন্তু আমার কোন সুষ্ঠ বিচার কোথাও পাচ্ছি না। আমি সরকারসহ পুলিশ প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাই যাতে করে আমি আমার নায্য অধিকার ফিরে পাই, আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।'
পাপেল হাসানের প্রথম স্ত্রী (সাবেক) সোনালী বলেন, 'পাপেল হাসানের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পুলিশে চাকরির জন্য ২০১২ সালে আমার বাবা ৮ লাখ টাকা দিয়েছিল। চাকরির পর আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু সংসার বেশিদিন টিকেনি। আমাকে তার পছন্দ না। এজন্য সে তালাক দিয়েছে। তবে সে টাকা লোভী মানুষ।'
এ ব্যাপারে পাপেল হাসান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমি সরকারি চাকরি করি, কেন তাকে ভরণ-পোষণ দিবো না। আদালতে এ বিষয়ে মামলা চলমান আছে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। সেসব বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।'
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী হাফিজা আক্তার আঁখির বাবা রফিকুল ইসলাম, চাচা রফিকুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই জহুরুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
এসআর