এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের ফলাফলে কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫। ৯টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে গতবারের মতো এবারও এই বোর্ডের অবস্থান অষ্টম। এই বছর যশোর বোর্ডে পাসের হার ৫০ দশমিক ২০ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন শিক্ষার্থী। গত বছর যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। গতবছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি এবং জিপিএ-৫ কমেছে প্রায় চার হাজার। পাসের হারের দিক থেকে এ বছরের ফলাফল সাধারণ ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৮ম। গতবছরও এই অবস্থানে ছিল যশোর বোর্ড। আর পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ ভাগ নিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে কুমিল্লা বোর্ড। অথচ এই যশোর বোর্ড ২০২১ সালে বোর্ডসেরা অবস্থানে ছিল।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে যশোর বোর্ডের এই চিত্র উঠে এসেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকার এবং ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের হার বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, বিগত জুলাই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিল। এ কারণে তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। পাশাপাশি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এই প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে। আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভালো করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন।
তবে তিনি আরও দাবি করেন, ইতোপূর্বে পাসের হার বেশি দেখানোর জন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। এখন তা নেই। আগে অতিমূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন হতো। এখন তা হচ্ছে না। ফলে এটিই ফলাফলের প্রকৃত চিত্র।
যশোর বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৯ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৯০১ জন এবং ছাত্রী ৩১ হাজার ৬০৮ জন। পাসের হার ৫০ দশমিক ২০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন। বহিষ্কৃত হয়েছে ২৬ জন।
২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ২২ হাজার ৫১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৭৮ হাজার ৭৬৪ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৩৬ হাজার ২৪৭ জন এবং ছাত্রী ৪২ হাজার ৫১৭ জন। পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৯। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৭৪৯ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ১৩ জন।
২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ৯ হাজার ৬৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৭৬ হাজার ৬১৬ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৩৫ হাজার ৮৮৫ জন এবং ছাত্রী ৪০ হাজার ৭৩১ জন। পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮৮। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ১২২ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ২৭ জন।
এবারের ফলাফলের চিত্র তুলে ধরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিল। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে তাদের পড়াশোনা ও প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। এছাড়া নকলমুক্ত, সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। ভেন্যুপ্রথা বাতিল করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। পাশাপাশি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এইসব কারণে সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। তবে আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভালো করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা, শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান এবং অভিভাবকদের সচেতনতা ও তদারকি জরুরি।
এনআই