ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৬৫ নং দক্ষিণ চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্পিত জমি নিয়ে জালিয়াতি ও বেদখলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের জন্য অর্পিত ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ২২ শতাংশ উধাও হওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। দুই দশক পর ভূমি জরিপের কাগজপত্র অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ। বাকি ২২ শতাংশ জমি বর্তমানে কোথায় তা নিয়ে তীব্র ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় সহ-শরীকের সম্পত্তি জালিয়াতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি বেদখলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী জানা গেছে, ২০০১ সালের ১২ জুলাই নুরুল হক সরদার নামের এক ব্যক্তি দক্ষিণ চরনারানদিয়া মৌজার ১০৬ নম্বর খতিয়ানের একটি দাগ থেকে ৩৩ শতক জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অর্পণনামা দলিল করে দেন। এর এক বছর পর ওই জমিতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে জমির মালিকানা খতিয়ে দেখতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। খতিয়ানে দেখা যায়, ভূমিদাতা নুরুল হকের ওই দাগে ওয়ারিশ ও খরিদসূত্রে সর্বোচ্চ মালিকানা ছিল মাত্র ৭.৫ শতক। অর্থাৎ, তিনি ৩৩ শতক জমি লিখে দেওয়ার সময় প্রকৃত মালিকানার চেয়ে প্রায় ২৫.৫ শতক বেশি জমি দান করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, অতিরিক্ত এই জমি তার পরিবারের অন্য অংশীদারদের (সহ-শরীকের) ছিল, যা তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে দেন। সর্বশেষ বিএস জরিপে, ৩৩ শতাংশের দলিলের বিপরীতে বিদ্যালয়ের নামে মাত্র ১১ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়েছে। বাকি ২২ শতাংশ জমির বর্তমান অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, জমিদাতার পরিবারের পক্ষ থেকে এক চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি এসেছে।
জমিদাতা মৃত নুরুল হক সর্দারের ছেলে মাহবুব সর্দার বলেন, "আমার পিতা প্রথমে এক দাগ থেকে বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি লিখে দেন। পরে বিদ্যালয়ের নামে ওই জমির ১১ শতাংশ রেকর্ড হয়। পরবর্তীতে একই মৌজার অন্য স্থান থেকে অপর একটি দলিলের মাধ্যমে ২২ শতাংশ জমি লিখে দেওয়া হয়েছে।" তবে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, বিদ্যালয়ের নামে নতুনভাবে লিখে দেওয়া সেই ২২ শতাংশ জমি বর্তমানে তার পরিবারই ভোগদখল করছে।
দক্ষিণ চরনারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ববিতা ইয়াসমিন বলেন, "কাগজপত্রে দুই দাগে বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশই আছে, এবং এই ৩৩ শতাংশই বিদ্যালয়ের দখলে আছে।" তবে সরকারি রেকর্ডে মাত্র ১১ শতাংশ জমি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান এবং জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানেন না।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত জমির সব কাগজপত্র ও রেকর্ডপত্র খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
এনআই