সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে আব্দুর রশিদ নামের এক দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং তার শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে উপজেলার হরিনাথপুর বাজারে এ মানববন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ভুক্তভোগীদের সাথে এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আব্দুর রশিদ উপজেলার হরিনাথপুর মধ্যপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, আব্দুর রশিদের উপার্জনের প্রধান মাধ্যম সুদের ব্যবসা। ছোট খাটো ব্যবসায়ীসহ গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষদের চড়াসুদে ঋণ দেন তিনি। এক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতাকে নিজের স্বাক্ষর করা খালী চেক (ব্ল্যাঙ্ক চেক) ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়। পরে ঋণ গ্রহীতা সুদসহ সমুদয় পাওনা পরিশোধ করলেও তার মুক্তি মেলে না। জমা ফাঁকা চেক ফেরত চাইলে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন আব্দুর রশিদ। টাকা না মিললে মামলার ভয় দেখান, পাঠান আইনি নোটিশ।
ভুক্তভোগী হরিনাথপুর গ্রামের বুদার ছেলে ফজলুল হক বলেন, 'আমি ২০২৩ সালে সোয়া দুই লাখ টাকা লোন নিয়েছি রশিদের কাছ থেকে। দুই বছর সুদ টেনেছি মাসিক ১০ টাকা শতাংশ হারে। পরে পরিশোধ করতে না পারলে নতুন করে ৩ লাখ টাকা দাবী করে আমার কাছে। প্রথম ধাপে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু বাকী ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেবার জন্য চেষ্টা করেও পারিনি উপরন্তু উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে আমার নামে। সেখানে উল্লেখ করেছে আব্দুর রশিদ আমার কাছে ২৫ লাখ টাকা পায়।'
মোহাম্মদ কাফি নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, 'চার বছর আগে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। ১৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে সুদ দিয়েছি। পাঁচ লাখের ওপর সুদই পরিশোধ করেছি আমি। পরে এনজিও থেকে লোন করে সেই টাকা পরিশোধ করেছি। আব্দুর রশিদ এখন আমার কাছে দশ লাখ টাকা দাবী করছে।'
মানববন্ধনে উপস্থিত হরিনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, 'আব্দুর রশিদ একজন সুদ খোর। সে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করছে। সেই ব্ল্যাক চেক দিয়ে সে মামলাও করছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আগেও মীমাংসার চেষ্টা করেছি কিন্তু রশিদ পাত্তা দেননি।'
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রিপন মিয়া বলেন, 'মাঝে মাঝেই আব্দুর রশিদের এই সুদের কারবার নিয়ে আমরা বিচার সালিশ করি। তিনি গোপনে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও খালি স্ট্যাম্পে সই নিয়ে চড়া সুদে ঋণ দেন। পরে নানাভাবে ঋণ গ্রহিতাদের হয়রানি করেন। এর আসলে একটা সুরাহার হওয়া দরকার। প্রায় অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী আছেন যারা রশিদের হয়রানিতে অতিষ্ঠ। '
অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে সৌরভ বলেন, 'মাসিক শতকরা দশ টাকা হার সুদে ঋণ দেয় আমার বাবা। জামানত হিসেবে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প জমা দেন ঋণ গ্রহিতারা। যারা আমার বাবার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে তারা টাকা নিয়ে পরিশোধ করে নাই।'
এ ব্যাপারে কাজীপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। উনি যদি সমবায়ের ব্যানারে সুদের ব্যবসা করে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ব্যক্তিগত ভাবে চড়া সুদে ঋণ দিলেও তিনি অপরাধী।'
কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম বলেন, 'বিষয়টা আমার নলেজে নেই। যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।'
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'যদি অপরাধ করে এমন অভিযোগ আসে তাহলে বিধি মোতাবেক তদন্ত করে অপরাধের প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
এসআর