এইমাত্র
  • লেবাননে জাতিসংঘ টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬
  • ভারতের পর্যটনরাজ্য গোয়ার নাইটক্লাবে বড় অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২৩
  • রায়েরবাজারে অজ্ঞাত ১১৪ জুলাই শহীদের মরদেহ উত্তোলন শুরু আজ
  • আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে ইনুর মামলায় আজ তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য
  • ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা, কবে-কখন কার সঙ্গে কার ম্যাচ
  • যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য পাগল ছিলেন, তাদের এখন ভিন্ন সুর: জামায়াত আমির
  • খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করছে সরকার : প্রেসসচিব
  • নীলফামারীতে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল
  • ভারত-সমর্থিত গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানে
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    ফিচার

    ইউএনওর দেয়া ব্যাগটি দরিদ্র সহপাঠীকে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ল মহুয়া

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম
    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

    ইউএনওর দেয়া ব্যাগটি দরিদ্র সহপাঠীকে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ল মহুয়া

    সময়ের কণ্ঠস্বর রিপোর্ট প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৬ পিএম

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট্ট ক্লাসরুমে হাসি-খুশি মুখগুলোর ভিড়। সদ্য শেষ হয়েছে পাঠ। ইউএনও এসেছেন পরিদর্শনে, শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে হাতে এনেছেন কয়েকটি ছোট উপহার। সেদিনের সৌভাগ্যবানদের একজন ছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মহুয়া আক্তার। ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি হিসেবে তার হাতে তোলা হয় একটি নতুন স্কুল ব্যাগ। মহুয়ার চোখে ঝিলিক, মুখে হাসি, কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়।

    একদিন পরেই খবর এলো, মহুয়া নাকি ব্যাগটা নিজের কাছে রাখেনি। চতুর্থ শ্রেণির এক সহপাঠী, যার বাবা দিনমজুর, তার কাছে ব্যাগটা দিয়েছে চুপিচুপি। কারণ, 'ওর প্রয়োজন আমার চেয়ে বেশি।'

    সম্প্রতি মানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের মটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ইউএনও মোছা. আকলিমা বেগমের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।

    সেখানে তিনি লেখেন, ইউএনও হিসেবে স্কুল পরিদর্শনের সময় বাচ্চাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য টুকটাক উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন। সর্বোচ্চ উপস্থিতি, মেধা বা প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার্থীরাই এই উপহার পেয়ে থাকে। সেদিনও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মহুয়া ভালো করায় তাকে একটি ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়। পরে জানতে পারেন, মহুয়া আপাতত নিজের প্রয়োজন না থাকায় ব্যাগটি চতুর্থ শ্রেণির এক গরিব সহপাঠীকে উপহার দিয়েছে।

    স্ট্যাটাসে ইউএনও লিখেছেন, 'অল্প বয়সে কত বড় মনের অধিকারী হলে এরকম ভালো কাজ করা সম্ভব! মহানুভবতার এক দারুণ উদাহরণ। মহুয়াসহ তার পুরো পরিবার এই ভালো কাজের দাবিদার। তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দেরও অবদান অনস্বীকার্য।'

    শেষে ইউএনওর একটিমাত্র বাক্য যেন পুরো গল্পটার সারমর্ম- 'মহুয়া, তোমার জন্য আমার অনেক দোয়া ও ভালোবাসা। তুমি আকাশের সমান বড় হও! তোমাদের হাত ধরেই বদলে যাক আমাদের এই পৃথিবী।'


    এই স্ট্যাটাসটি ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য মানুষকে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন- এমন শিশুরাই আগামী দিনের মানবিক সমাজ গড়বে। মহুয়া হয়তো জানে না, তার ছোট্ট এই কাজটিই হয়ে উঠেছে বড় এক শিক্ষা, দেওয়ার আনন্দ পাওয়ার চেয়েও গভীর।

    মহুয়া আক্তার বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের মটরা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলাম ও হামিদা আক্তার দম্পতির সন্তান। তিন বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করেন, মা গৃহিণী। পরিবারে আর্থিক অবস্থা সাধারণ হলেও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও ভদ্র আচরণের জন্য মহুয়া শিক্ষকদের কাছে প্রিয় ছাত্রী।

    বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, “ইউএনও ম্যাডাম ব্যাগটি দেওয়ার পর আমি আমার গণিত ক্লাসে গিয়ে জানতে চাই, কে কী পুরস্কার পেয়েছে। সবাই বলল, মহুয়া একটি ব্যাগ পেয়েছে। আমি দেখতে চাইলে সে বলে, ‘স্যার, আমি ব্যাগটা চতুর্থ শ্রেণির এক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে দিয়ে দিয়েছি।’ তখন আমার কাছে সে এত বিশাল মনের অধিকারী মনে হলো যে, অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে।”

    তিনি আরও বলেন, 'যে শিক্ষার্থীকে ব্যাগটি দিয়েছে, সে সত্যিই খুব দরিদ্র। আমরা শিক্ষকরা নিজেরাও তাকে পোশাকসহ আনুষঙ্গিক কিছু দিতে চেষ্টা করেছি। পরে পুরো ক্লাসের সামনে মহুয়াকে প্রশংসা করেছি এবং অন্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রাণিত করেছি। সবাইকে বলেছি, দেখো আমরা অনেক সময় অন্যের কথা ভাবি না, অথচ মহুয়া এত ছোট হয়েও অন্যের প্রয়োজন বুঝে কাজ করেছে। বিষয়টি আমি ইউএনও ম্যাডামকেও জানিয়েছি।'

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. আকলিমা বেগম সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, 'সেদিন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় ইংরেজি সাবজেক্ট থেকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। মহুয়া সেগুলোর উত্তর ভালোভাবে দিতে পেরেছিল। তাই তাকে ব্যাগ উপহার দিই। পরে জানতে পারি, চতুর্থ শ্রেণির এক সহপাঠী, যার ব্যাগ নেই এবং যার আর্থিক অবস্থা খারাপ, তাকে সে ওই দিনই ব্যাগটি দিয়ে দিয়েছে।'

    তিনি যোগ করেন, 'সাধারণত আমরা বড়রাও উপহার পেলে নিজের কাছেই রাখতে চাই। কিন্তু সে নিজের প্রয়োজনের আগে অন্যের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েছে, এটা সত্যিই ব্যতিক্রম। বিষয়টি আমার কাছেও অনুপ্রেরণার। আমি নিজেও হয়তো ওই বয়সে এমনটা করতে পারতাম কিনা সন্দেহ আছে।'

    একটি সাধারণ স্কুল ব্যাগ-যার দাম হয়তো অল্প, কিন্তু যার ভেতর লুকিয়ে আছে অমূল্য শিক্ষা। মহুয়া দেখিয়ে দিয়েছে, ভালো মানুষ হতে বয়স লাগে না; লাগে কেবল একটি সহানুভূতিশীল মন। তার সেই ছোট্ট ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছে বড় এক আলো- যে আলোয় হয়তো গড়ে উঠবে আরও অনেক মহুয়া, যারা শেখাবে, ‘দেওয়াতেই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।’

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…