রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গাছের পাতা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে তেল। বিস্ময়কর এই কাজটি করে দেখিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা কাউনিয়া উপজেলার সন্তান ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান আরিফ।
জানা যায়, তাইওয়ানের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে পাঁচ বছর চাকরির সুবাদে ওই কোম্পানির মালিকের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কয়েক বছর আগে তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের শ্রীকান্ত গ্রামে লিজ নেওয়া এক একর জমিতে শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ান ‘টি ট্রি’ গাছের চাষ। এ বছর সেই গাছের পাতা থেকে বিশেষ মেশিনের সাহায্যে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ও হাইড্রোসল ওয়াটার উৎপাদন শুরু করেছেন তিনি। চলতি বছর তার প্রকল্প থেকে ৩০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
তবে আরিফের যাত্রাটা সহজ ছিলনা। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদেশ থেকে চারা আনতে পারেননি। পরে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড থেকে অল্প কিছু বীজ সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের সহায়তায় তিন বছরের প্রচেষ্টায় ৪০টি চারা উৎপাদনে সফল হন তিনি। সেই চারাগুলোর কাটিং থেকে এখন তার এক একরের প্রকল্পে ২ হাজারের বেশি টি ট্রি গাছ রয়েছে।
গাছ বড় হওয়ার পর পাতা থেকে কিভাবে তেল উৎপাদন করবেন সেটা নিয়েও পড়েন বিপাকে। চীন থেকে ছোট একটি মেশিন এনে সেটি বিশ্লেষণ করে স্থানীয়ভাবে ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার মেশিন তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে সেই মেশিন দিয়ে সফলভাবে তেল ও হাইড্রোসল উৎপাদন করে তা দেশে ও বিদেশে বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন ১০ থেকে ১২ জনের।
প্রথমে শ্রমিকরা গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো ড্রামের পানিতে ধুয়ে স্ট্রিলের চৌবাচ্চায় তোলেন। পরে সেই পাতাগুলো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা জাল দিয়ে স্টিম ডিস্টিলেশন পদ্ধতিতে বের করা হয় তেল ও হাইড্রোসল। প্রতি ব্যাচে ৫০ কেজি পাতা থেকে তিন ব্যাচে দিনে দেড় লিটার তেল উৎপাদন হচ্ছে এখন সেখানে। এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, সেখানে তাদের কর্মসংস্থান হওয়ায় তাদের সংসার বেশ ভালো চলছে।
পীরগাছা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মো. এজাজুল ইসলাম জানান, তিনি জানতেন গাছের পাতা শুধু ঝরে যায়, তা দিয়ে কোন কাজ হয়না। কিন্তু গাছের পাতা থেকে যে তেল হয়, শুনে তিনি অবাক হয়েছেন। তিনি নিজেও সেই তেল ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন। দেশে আরিফের মত আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাক এই প্রত্যাশা করেন তিনি।
আরিফ বলেন, ‘টি ট্রি পাতার তেল ও হাইড্রোসল ওয়াটার বিশ্বব্যাপী স্কিন কেয়ার, চুলপড়া, খুশকি, ব্রণ, ফাঙ্গাস, স্ক্যালব সমস্যার সমাধানসহ প্রসাধনী ও ওষুধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি যা থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশের বাইরে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। এবছরে চীনে স্যাম্পল পাঠিয়েছি। বছরে একবার ফসল উঠে। সরকার যদি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করেন, তাহলে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতে চাই।’
পীরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, গাছটি লাগানোর ২ থেকে ৩ বছর পরে ফল পাওয়া যায়। একবার গাছ লাগালে ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আমরা কাটিং করে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। একই সাথে এই গাছের পাতা থেকে উৎপন্ন তেলে ক্ষতিকর দিক আছে কিনা সেটাও যাছাই করে দেখা হচ্ছে। পোকা মাকড় থেকে গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।’
ইখা