আজ ১৯ নভেম্বর, বিশ্ব টয়লেট দিবস। প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়। শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (WTO) প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব টয়লেট দিবসকে একটি আনুষ্ঠানিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বজুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন এবং সঠিক টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনটি পালন করা হয়। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সবার জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার থাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি চর্চার বিষয়ে ধারণা পেতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জরিপ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ স্কুলে উন্নত এবং ১২ শতাংশ স্কুলে অনুন্নত ল্যাট্রিন আছে। স্কুলগুলোর ৫৫ শতাংশ ল্যাট্রিনে তালা দেওয়া থাকে। খোলা ল্যাট্রিনগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহারের উপযোগী। ৮০ শতাংশ স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ল্যাট্রিনের কাছাকাছি হাত ধোয়ার জন্য পানির ব্যবস্থা আছে মাত্র ৪৫ শতাংশ স্কুলে। পানি, সাবানসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা আছে এক-তৃতীয়াংশ স্কুলে। ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি মাসে স্কুলগুলোর গড়ে খরচ করে ৬১ টাকা। পিরিয়ড কিশোরীদের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শুধু ৬ শতাংশ ছাত্রী পিরিয়ড সম্পর্কে স্কুল থেকে জানতে পারে। শুধু ১১ শতাংশ স্কুলের ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে। কিন্তু পিরিয়ড ব্যবস্থাপনা আছে মাত্র ৩ শতাংশ স্কুলে। তাই ৮৬ শতাংশ ছাত্রী পিরিয়ডের সময় স্কুলে আসতে চায় না। ৪০ শতাংশ ছাত্রী পিরিয়ডের সময় গড়ে তিন দিন পর্যন্ত স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। বেসরকারি সংস্থা ডরপের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশে প্রায় দুই কোটি ছাত্রীর মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছে। বাকি ৮০ ভাগ মেয়েই এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঋতুকালীন গড়ে মাত্র ১০ শতাংশ স্কুলছাত্রী স্যানিটারি প্যাড কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ পায়। অন্যরা পুরনো কাপড় বা অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে, যা অনেক ক্ষেত্রেই অনিরাপদ। আবার এ সময় শৌচাগার অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে বেশির ভাগ মেয়ে মাসের চার-পাঁচ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। এতে ক্লাসের পাঠ থেকে তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকায় অনেক ছাত্রী উপবৃত্তি থেকেও বঞ্চিত হয়। এই অবস্থা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও একাডেমিক জীবনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও টয়লেট ব্যবহারকারী সবাইকে ঠিকমতো পরিষ্কার রাখা উচিত। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টয়লেট পরিষ্কার না থাকার কারণে পায়খানা ও প্রস্রাব আটকে রাখে। ফলে অনেকে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়। শৌচাগারের কারণে দেশের দুই কোটি শিশু টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরার মতো মারাত্মক রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করতে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা, ঢাকনাযুক্ত প্লাস্টিকের পাত্র রাখা, ঋতুকালীন বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়া, প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানছে না। অবশ্য স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে দেশের বড় বড় এনজিওগুলো প্রচুর পজিটিভ কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি লোকজন চান না এনজিওরা এসে এসব জায়গায় এমন কিছু করুক, যার ফলে তাদের কর্তৃত্ব বা গুরুত্ব কমে যায়। অর্থাৎ এখানেও সমন্বয়হীনতা! এই সমন্বয়টি বাড়াতে পারলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টয়লেটের অবস্থা এখন পর্যন্ত খুব একটা পরিবর্তন হয়নি, তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে দেখেছি বিদেশি টয়লেটের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
এইচএ