ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলন করছেন মোবাইল ব্যবসায়ীরা।
আজ রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
ব্যবসায়ীদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— মোবাইল ফোন আমদানিতে বিদ্যমান অস্বাভাবিক শুল্ক প্রত্যাহার, সিন্ডিকেট প্রথা বিলোপ, এনইআইআরের পুনর্বিবেচনা, যৌক্তিক ট্যাক্স কাঠামো পুনর্নির্ধারণ ও মোবাইল ফোন আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করা। গতকাল শনিবার ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধ রেখে এই অবরোধ করছে মোবাইল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি (এমবিসিবি)।
আন্দোলন সারা দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী অংশ নিয়ে তারা বলেন, সরকার অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধ করার নামে একটি নির্দিষ্ট প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে সরকার যে সুযোগ দিতে চাচ্ছে বিটিআরসি। আমরা এর আগে কয়েকবার আন্দোলন করেছি, সরকারকে বলেছি; কিন্তু কর্ণপাত করেনি। আমাদের এই খাতের সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
আমরাই দেশের ৬০ শতাংশ মোবাইল ফোন সরবরাহ করছি। অথচ একটা সিন্ডিকেটের কারণে এনইআইআর করতে চাচ্ছে সরকার। সেটা করা হলে মাত্র ৯টা কম্পানি পুরো মার্কেট চালাবে। ফোনের দাম যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যবসা ও চাকরি হারাবেন লাখ লাখ মোবাইল ব্যবসায়ী ও কর্মচারী।
মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. আসলাম বলেন, ‘সরকার যে ট্যাক্স-কাঠামো চালু করেছে, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলছে। নতুন এই নীতি চালু হলে আমাদের পথে বসতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে বিদেশি কিছু কম্পানি দেশে অ্যাসেম্বলিংয়ের মাধ্যমে ফোন তৈরি করছে, ফলে তাঁরা খুব কম ট্যাক্সে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু যারা বিদেশ থেকে ব্র্যান্ডেড ফোন, যেমন— আইফোন বৈধভাবে আমদানি করে বিক্রি করেন, তাঁদের ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। ফলে দুই লাখ টাকার ফোন ট্যাক্সসহ দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদকদের বিরুদ্ধে নই, তবে ট্যাক্সের এই বৈষম্য ছোট ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করছে। আমাদের দাবি, ট্যাক্স সহনশীল মাত্রায় আনা হোক এবং ক্ষুদ্র আমদানিকারকদেরও ৫০ বা ১০০ পিস করে ফোন বৈধভাবে আনার সুযোগ দেওয়া হোক।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিটিআরসি জানিয়েছে, সরকারের নির্দেশে ১৬ ডিসেম্বর থেকেই এনইআইআর সিস্টেম চালু করা হবে। কিন্তু বাজেট জুন-জুলাইয়ে হয়, তাই ওই সময়ের আগে এই পদক্ষেপ ব্যবসায়ীদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনি যেন এনবিআরকে ট্যাক্স নীতিমালা সহজ ও সহনশীল করতে নির্দেশ দেন, যাতে আমরা বৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি।’
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশের মোবাইল ফোন বাজারে মাত্র ৮ থেকে ১০টি কম্পানি একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পাবে। এই কম্পানিগুলোর নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার রয়েছে, ফলে তারা সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু দেশের ৯৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী— যারা এই খাতের মূল চালিকাশক্তি, তাঁরা এক ধাক্কায় ব্যবসা হারাবেন। তাদের মতে, এই নীতিমালা কার্যকর হলে লাখ লাখ পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন তাঁদেরও সীমিত পরিসরে মোবাইল ফোন আমদানি করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এইচএ