কিশোরগঞ্জে শিশু কন্যা রৌজা মনি (৬) হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মা আছমা আক্তার। একই সঙ্গে হত্যায় জড়িত আসামি পক্ষের সঙ্গে আপোস-মীমাংসা করার জন্য স্বামী সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে ভয়-ভীতি, হুমকি প্রদর্শন ও শারীরিক নির্যাতন করে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ এনে নিরাত্তহীনতার কথা জানান।
রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার চরমারিয়া গ্রামে বাবার বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ আনেন নিহত রৌজা মনির মা মোছাঃ আছমা আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে আছমা বেগম জানান, তিনি ও তার স্বামী সুমন মিয়া গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি সূত্রে নারায়নগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায় বসবাস করেন। তাদের মেজো মেয়ে রৌজামনি চরমারিয়া গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদীর সাথে থাকত এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করত। চলতি বছরের ৬ জুলাই নিজ বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে নিখোঁজ হয় রৌজামনি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে সদর মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। নিখোঁজের পাঁচদিন পর ১১ জুলাই সকালে ওই এলাকার একটি পাটখেতে রৌজা মনির অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় রৌজামনির মা আছমা আক্তার বাদী হয়ে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ এনে স্থানীয় যুবক রাসেল মিয়া, রুকন ও দ্বীন ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ১২ জুলাই পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়া, রুকন ও দ্বীন ইসলাম এ তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত তাদেরকে জামিন দেয়া আসামিরা জামিনে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই টুটুল উদ্দিন প্রতিবেদনে জানান, প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আছমা আক্তার জানান, আসামি গ্রেপ্তারের পর জামিন পাওয়ার কিছুুদিন পর থেকে আসামিদের প্রলোভন ও প্ররোচনায় তার স্বামী ও শাশুড়ি মামলা তুলে নেয়ার জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। তিনি রাজি না হওয়ায় গালিগালাজসহ শারিরীরক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এ অবস্থায় তিনি তার স্বামী ও অপরাপর জড়িতদের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। পরে তিনি তার কন্যা রৌজা মনি হত্যার সাথে তার স্বামী সুমন মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন জড়িত বলে তদন্তের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। এর ফলে স্বামীর নির্যাতন আরো বৃদ্ধি পায়।
এ অবস্থায় তার স্বামী সুমন মিয়া ও শাশুড়ি মিলে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করলে শহীদ সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করলে বিচারক এফআইআর হিসাবে থানায় মামলা নেয়ার জন্য ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এমতাবস্থায় চরম নিরাপত্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান আছমা আক্তার। তিনি তার জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিহত শিশু রৌজা মনির বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রৌজামনির মা আছমা আক্তারের, বড় মেয়ে সেজুতি আক্তার, মামা মোহাম্মদ দেওয়ান আলী, নানা মোহাম্মদ মাতাব উদ্দিন, আব্দুল হাশিম, মোঃ দুলাল মিয়া, মোঃ সিরাজ মিয়া, মোঃ মামুন মিয়াসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই রৌজা মনি বিকেলে বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়রি করা হয়। নিখোঁজের পাঁচদিন পর অনেক খোঁজাখুজি শেষে মারিয়া এলাকার একটি পাট ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থানায় মামলা হলে পুলিশ সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও উচ্চ আদালত তাদেরকে জামিন দেয়। নিহত শিশু রৌজা মনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের সুমন মিয়ার মেজো মেয়ে।
ইখা