ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ‘ফৌজদারি অপরাধ’ এবং তা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতির মাধ্যমে এসব কথা বলেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
এদিকে, দুপুর সোয়া ২টায় হামলা ও ভাঙচুর হওয়া ছায়ানট পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, ‘ছায়ানটে হামলা করা ব্যক্তিদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে মুহূর্তে একটা গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখছি, সেই মুহূর্তে এরকম একটা সাংস্কৃতিক সংগঠনে আক্রমণ করাটা কত বড় নিন্দনীয় কাজ হতে পারে তা বলার ভাষা নেই। যারা এই হামলা করেছে তাদেরকে বিভিন্ন রকম সিসি ক্যামেরা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্তের কাজ করছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ছায়ানটে হামলার মধ্যে দিয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছায়ানট সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, তারা নিজেদের তহবিল থেকে পরিচালিত হয়। তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো তহবিল নেয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছায়ানটের যা কিছু ক্ষতিসাধন হয়েছে তারা যদি আমাদেরকে জানায়, আমরা আমাদের তরফ থেকে তাদের সহায়তা করব। এ ছাড়াও, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের কেবিনেট মিটিং ছিল; সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা যেন আমাদের মূল ফোকাসের জায়গা থেকে হারিয়ে না যাই। আমাদের মূল ফোকাসের জায়গা ছিল; আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে যেতে চাই। গণতান্ত্রিক সমাজ বলতে, যেখানে নানান রকম সমাজের মানুষ থাকবে, নানান রুচির মানুষ থাকবে। সকল মানুষই আমরা একটা জায়গায় সহাবস্থান করব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটা ফাংশনাল গণতন্ত্র চাই; তাহলে সব সমাজ, সব দলমত, সব রুচির মানুষকে সহাবস্থান করতে দিতে হবে। হয়তো আমার সঙ্গে আপনার অনেক কিছু মিলবে না; কিন্তু আমি আপনি পাশাপাশি বসে যেন এল টেবিলে খেতে পারি এ জায়গাটা আমি চাই।’
ছায়ানটে হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ছায়ানটের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই-তিন দিনের মধ্যে খসড়া করে বুঝতে পারবেন ক্ষয়ক্ষতিটা কেমন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রতিবাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আসলে যদি প্রতিবাদ করা হয়ে থাকে; আমরা কার সঙ্গে প্রতিবাদ করছি, কী জন্য প্রতিবাদ করছি? একটা বিষয় লক্ষ করে দেখেন, যে মুহূর্তে জাতি হাদিকে নিয়ে শোকাহত থাকার কথা, যে মুহূর্তে হাদিকে নিয়ে জাতি কথা বলার কথা। কিন্তু আজকে আমাদের কথা বলা ঘুরিয়ে দিয়েছে কারা; কারা ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও ছায়ানটে হামলা করেছে? যারা এ কাজগুলো করেছে তারা অবশ্যই বাংলাদেশের ভালো চায় না। যারা সত্যিকারে হাদিকে ভালোবেসেছে, গতকাল আমরা দেখেছি শাহবাগে তারা অবস্থান করে শোক প্রকাশ করেছে। যারা এই হামলাগুলো করেছে তারা কারা, কেন করেছে তা আমরা জানি, আপনারা জানেন। তাদের আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
এদিকে, পরিদর্শনের আগে দেওয়া বিবৃতিতে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক শরীফ ওসমান হাদীর শহীদি মৃত্যুতে জাতি আজ শোকার্ত। এই জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণীর হঠকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এ হামলা চালিয়ে ক্ষয়-ক্ষতি সাধন করেছে। মৃত্যুঞ্জয়ী হাদীর মৃত্যুতে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলা কেবল একটি ফৌজদারী অপরাধই নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থী।’
তিনি আরও বলেন, এই নিন্দনীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়েও সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি ছায়ানট ভবনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে এই বিষয়ে যা যা করণীয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছায়ানট কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সেটা করবে।’
বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এই সময়ে সকল হঠকারিতার বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর এলে রাতে প্রথমে শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একদল লোক কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এবং পরে ডেইলি স্টার ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পরে রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মাঝামাঝি সময়ে একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডিতে ছায়ানটের বিভিন্ন তলায় গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
ইখা