রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাস শহীদ শামসুল আলম হলের ডি ব্লকের একটি রুমে ছাদের পলেস্তরা খসে ফিদবি নামের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রুমেই ঘুমাচ্ছিলেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী। তিনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
আহত শিক্ষার্থী ফিদবি বলেন, হঠাৎ অনুভব করি আমার গায়ে কিছু একটা পড়ছে। বুঝে ওঠার আগেই হুট করে বিকট শব্দে ছাদ থেকে বড় মাপের বেশ কয়েকটি পলেস্তরা খসে পড়ে। আমার টেবিলের ওপর, খাট, শরীর সব জায়গায় পলেস্তারা ভরে গেছে। মাথা ফেটে গেছে। পরে বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। চিকিৎসা শেষে আবার হলে ফিরেছেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
এই ঘটনার পর হল সংস্কার এবং হলে বৈধ সিট চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীর সাজ্জাদ হোসেন আকাশ বলেন, এই হলের জীর্ণশীর্ণ অবস্থা।নিরাপদ পানির কোন ব্যবস্থা নেই,খাবারের মান খুবই নিম্ন,ওয়াশরুমের পরিবেশ এতটাই খারাপ যা ব্যবহার করা যায় না।হলে সিকিউরিটি না থাকার কারণে প্রতি রাতেই বসে মদ-গাঁজা ও জুয়ার আসর। সূত্রাপুর অঞ্চলে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের মাদক গ্রহণের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসাবে পরিচিত এই হল। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের থাকার মতো পরিবেশ নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী জানান, হলটি এখন কলেজের নিয়ন্ত্রণে নেই। মাঝে মধ্যে কলেজ ছাত্রলীগ ও স্থানীয় নেতারা শুটিংয়ের জন্য হলটি ভাড়া দিয়ে থাকে। সাধারণত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস যেভাবে নিয়ন্ত্রণ বা রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ার কথা তা এখানে হয় না। এখানে যে যার ইচ্ছে মতো থাকে, মাদক গ্রহণ করে।
কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুদেব বলেন, কাগজে কলমে হলটির নিয়ন্ত্রণকারী কলেজ প্রশাসন হলেও এখানে কারা কীভাবে থাকে, কে কী করে কেউই জানে না। এদিকে হলের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কোনও সংস্কার নেই, ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। সব রুমের একই অবস্থা। যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কলেজ প্রশাসনকে দ্রুত হল সংস্কার ও হলে বৈধ সিট চালুর দাবি জানিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
ছাত্রাবাসের সার্বিক বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, ওখানে কে বা কারা থাকে সেই তালিকা আমাদের কাছে নেই। কলেজ প্রশাসন একাধিকবার ওই হলে বসবাসরত কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট তথ্য চেয়েছে, কিন্তু তারা কেউই তা দেয়নি। এখন ওখানে যদি কেউ কোনও অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার হয় তাহলে তো এর দায়ভার কলেজ প্রশাসন নেবে না। কারণ ওখানে ওদের থাকার অনুমতি নেই।
হল সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি হেরিটেজ। আমরা এর আগে একবার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে আর সংস্কার কাজ হয়নি।
এফএস