এইমাত্র
  • আতশবা‌জি ফোটাতে গিয়ে মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু
  • সাত বছর পর পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ
  • সৌদির সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা
  • লন্ডনের কিংসমেডাও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়লেন তারেক রহমান
  • ঝালকাঠিতে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১
  • কালিয়াকৈর চন্দ্রায় ১৬ বছর পর ঈদযাত্রায় স্বস্তি
  • চীনের বিনিয়োগে দেশে হবে বিশেষায়িত হাসপাতাল
  • আল-আকসায় ঈদের নামাজে মুসল্লিদের ঢল
  • শরীয়তপুরের ৩০ গ্রামে আগাম ঈদ উদযাপন
  • ২ হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তি দিল তালেবান সরকার
  • আজ সোমবার, ১৬ চৈত্র, ১৪৩১ | ৩১ মার্চ, ২০২৫

    কৃষি ও প্রকৃতি

    বোম্বাই মরিচ চাষে বাজিমাত কৃষক আ. রহিমের
    ভোলার চরফ্যাশনে বোম্বাই মরিচ চাষে সফল হয়েছেন কৃষক আ. রহিম (৪২)। তার উৎপাদিত বোম্বাই মরিচ নিজ এলাকাসহ ঢাকায়ও সরবরাহ করছেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় মরিচ বিক্রিতে প্রতি বছর প্রায় ১০ থেকে ১৬ লাখ টাকা আয় হয় তার। এসব তথ্য জানিয়েছেন কৃষক আ. রহিম। তার এই সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এখন বোম্বাই মরিচ চাষে ঝুঁকছেন।কৃষক আ. রহিম চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নে উত্তর চর মাদ্রাজ গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি ছয় বছর আগে সীমিত পরিসরে বোম্বাই মরিচের চাষ শুরু করেন। মরিচ চাষে লাভবান হওয়ায় পর্যায়ক্রমে এর পরিধি বাড়িয়ে বর্তমানে চার একর জমিতে মরিচের চাষ করছেন। ২০২৩ সালে সামান্য লাভ হলেও ২০২৪ সালে চার একর জমিতে ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বোম্বাই মরিচ চাষ করে ১৬ লক্ষ টাকা আয় করেছেন। তার ধারণা, এই বছর মরিচের ফলন ভালো হওয়ায় লাভের পরিমাণ বেড়ে ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪ একর জমিতে বিস্তীর্ণ বোম্বাই মরিচ গাছ। মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। প্রতিটি গাছে ধরে আছে শত শত ছোট বড় মরিচ। যা, বিক্রির উপযোগী। মরিচ তোলার কাজ করেন স্থানীয় তিন শ্রমিক। তাদের পাশাপাশি নিজের বাগানের প্রতিটি মরিচ গাছের পরিচর্যা করেন তিনি।কৃষক আ. রহিম জানান, উপজেলার এওয়াজপুর এলাকার এক কৃষকের কাছ থেকে সে বোম্বাই মরিচ চাষাবাদের পরামর্শ নিয়ে ছয় বছর আগে তার নিজের এলাকায় জমি লগ্নি নিয়ে মরিচের চাষাবাদ শুরু করেন। এই বছর দুইবার মরিচ সংগ্রহ করে দশ মন মরিচ বিক্রি করেছেন। তাতে এক লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। ঈদের পরে মরিচের দাম বৃদ্ধি পাবে, তখন মরিচ বিক্রি ১০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা তার।তিনি বলেন, 'অগ্রহায়ণের প্রথমেই বোম্বাই মরিচের চারা রোপণ করা হয়। তিন মাস পর গাছে মরিচ ধরা শুরু করে। তবে বর্ষার মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি জমাটবদ্ধ না থাকলে পুরো গাছ বছরের শেষ অব্দি রাখা যায়। এছাড়াও বর্ষার মৌসুমে মরিচের ফলন কম হওয়ায় তখন দামও ভালো পাওয়া যায়।'চর মাদ্রাজ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, দেশে বিভিন্ন জাতের প্রচলিত মরিচের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় বোম্বাই মরিচ। অঞ্চল ভেদে বোম্বাই মরিচের ভিন্ন নামও রয়েছে। ফোটকা মরিচ, নাগা মরিচ নামেও পরিচিত। অন্য জাতের মরিচের চেয়ে স্বাদে গন্ধে ভিন্নতা থাকায় খাবারে ব্যবহার করেন অনেকেই। কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে চরফ্যাশন উপজেলায় কৃষকরা অন্য ফসলের পাশাপাশি বোম্বাই মরিচ চাষ করেছেন।আড়ত মালিক মো. ইউনুছ বলেন, 'আমরা বোম্বাই মরিচ ক্রয় করি না। কৃষকরা আমাদের আড়তে বিক্রির জন্য রেখে যান। আমরা বিক্রি করে কৃষককে টাকা দিয়ে দেই। তবে দাদন নেওয়া কৃষকদের থেকে শতকরা ৮ টাকা কমিশন নেই। দাদন ব্যতিত শতকরা ৪ টাকা নেই।'এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন, 'বোম্বাই মরিচ বা নাগা মরিচ আমাদের দেশে অনেকটা শখের বশেই বসতবাড়িতে চাষ করা হয়। তবে এই বোম্বাই মরিচই যে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে লাখোপতি হওয়া যায় তা প্রমাণ করলেন চরফ্যাশনের কৃষক আ: রহিম। তার দেখাদেখি আরো অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন অপ্রচলিত এই ফসল চাষে। বোম্বাই মরিচ চাষ করে বেকার যুবকরা যাতে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারে তার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করবো।'এমআর
    জিরা চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন জীবননগরের জাহিদুল ইসলাম
    বাণিজ্যিকভাবে জিরা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম। তিনি উথলী ইউনিয়নের গ্রামের তেল পাম্পের নিকট ভাই ভাই কৃষি প্রজেক্টে ১১ শতক জমিতে বারী-১ জাতের জিরা চাষ করেছেন। সরজমিনে কৃষি প্রজেক্টে গিয়ে দেখা যায় জিরা গাছগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে।কৃষি উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জীবননগর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের নভেম্বর মাসে জমিতে বেড করে ১১ শতক জমিতে আমি জিরার বীজ বপন করি। ইতোমধ্যে জিরা গাছে ফুল এসেছে। ফলও আসতে শুরু করেছে। কৃষি কর্মকর্তারা আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এক মাসের মধ্যে আমি জিরা সংগ্রহ করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিরা চাষ বিষয়ে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। আমার কৃষি প্রজেক্টে জিরা, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ-রসুন ছাড়াও বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছি।’জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, জীবননগর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় উপজেলায় প্রথমবারের মতো জিরার চাষ শুরু হয়েছে। এটিই চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রথম জিরা চাষ। সন্তোষপুরসহ উপজেলার মোট তিন জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ করা হয়েছে। তবে অন্য দুই জায়গার চেয়ে জাহিদুল ইসলামের জমির জিরা গাছগুলো অনেক ভালো অবস্থায় আছে। ফসল সংগ্রহ না করা পর্যন্ত আমরা সফল হবো কি না বলতে পারছি না। তবে আমরা খুবই আশাবাদী। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।উল্লেখ্য, নাতিশীতোষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া জিরা চাষের জন্য উপযুক্ত। সঠিক পরিচর্যায় সহজেই হেক্টরপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি জিরার ফলন পাওয়া সম্ভব। সুনিষ্কাশিত উর্বর, গভীর এবং বেলে দোঁআশ মাটি জিরা চাষের জন্যে উত্তম।
    তিস্তার বিস্তৃর্ণ চরে কৃষকের স্ট্রবেরি চাষ
    কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর ধুধু বালুচরে বিস্তৃর্ণ চরে স্ট্রবেরি ক্ষেত। বেলে ও দোআঁশ মাটির সংমিশ্রণে তিস্তার চরে দেশের বৃহৎ স্ট্রবেরি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক ও হারুনুর রশিদ। তারা দুজনে প্রবাস ফেরত। চরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু সঠিক জাতের চারা না পাওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। অপার সম্ভাবনার কৃষি এই ফলনে বড় বাধা হয়েছে চারা জাত। ফলে প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাতে বসেছেন তারা।সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বালু চরে দেশের বৃহৎ স্ট্রবেরির চাষ করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। বিস্তৃর্ণ ধুধু বালু চরে সবুজের সমারোহ। কোথাও কোথাও লাল ফলে আবৃত হয়ে আছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত নভেম্বর মাসে ৬টি জাতের সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছে অ্যাসেট অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এই দুই উদ্যোক্তা। স্ট্রবেরি চাষের শুরুতে চমক সৃষ্টি করলেও বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন তারা। প্রায় সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি গাছ থাকলেও ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।তরুণ উদ্যোক্ত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই বিদেশি ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করার ইচ্ছা ছিল। এই ফল খুচরা বিক্রি হয় ৭০০ হতে ৮০০  টাকা কেজি। চরে আলু, গম, ভুট্টার চেয়ে স্ট্রবেরিতে অনেক লাভ। চারা রোপণের ৪৫ হতে ৬৫দিনের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। প্রতি একরে ১০টন করে ফলন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। চারার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় সে আশায় গুড়ে বালি। এখন লাভ তো দূরের কথা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ লাখ টাকার ফলন উৎপাদন করা সম্ভব হবে না বলেও জানান এ উদ্যোক্তা।চরের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ, আব্দুল হামিদ, ও মিনহাজ আলী জানান, শুরুতে তারা বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর চরে এসে জমি নির্বাচন করে। প্রতিদিন এই চরের বেশ কিছু কৃষক স্ট্রবেরি ক্ষেতে শ্রম দিতেন। মজুরি হিসেবে দৈনিক ৫০০ টাকা করে পেতেন। আমরা তিনজন এখানে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করি। অনেক আশা নিয়ে স্ট্রবেরি চারা গাছগুলো লালন পালন করি। কিন্তু সঠিক সময়ে কাক্সিক্ষত ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। কিন্তু এবার স্ট্রবেরি চাষে লাভবান হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক এই ফল চাষাবাদে হতো। কৃষি বিভাগের দায়িত্বহীনতা আর চারা নির্বাচনে ভুল হওয়ায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উলিপুরের বজরায় তিস্তা নদীর চরে ১২ একর বালু জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছে অ্যাসেট অ্যাগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তাদেকে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছি। শীত মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষ হয় এবং কুড়িগ্রামের আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। তারা যদি সাফল্য পায় তাহলে জেলা জুড়ে স্ট্রবেরি চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।এমআর
    বাকৃ‌বির উদ্ভা‌বিত নতুন জাতের মিষ্টি আলুর ফলন হেক্টর প্রতি ৩০ টন
    বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃ‌বি) একদল গবেষক উচ্চ ফলনশীল নতুন জা‌ত "বাউ মিষ্টি আলু-৫" উদ্ভাবন ক‌রে‌ছেন‌। সারা বছরই চাষ উপযোগী এই আলু ৯০ দি‌নে স্থানীয় জা‌তের চে‌য়ে তিনগুণ বে‌শি ফলন পাওয়া যায়। সাধারণ আলু প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন ফলন দিলেও বাউ মিষ্টি আলু-৫ ৩০ টনের বেশি ফলন দেয়। প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ৬-৭ টি আলু পাওয়া যায়।বাকৃ‌বির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই মিষ্টি আলুর উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।প্রধান গ‌বেষক অধ‌্যাপক আ‌রিফ হাসান জানান, এই আলু‌তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন বি, সি, কে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, এবং জিঙ্ক বিদ্যমান থাকায় অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন। অ্যান্থোসায়ানিন ও ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদানও আছে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী।  কন্দে শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ । প্রতি ১০০ গ্রাম কন্দে ৭.৮ গ্রাম গ্লু‌কোজ, ০.১৫ মিলিগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩.৯ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন এবং ১৫ মিলিগ্রাম ফ্যানোলিক উপাদান পাওয়া যায়।ময়মনসিংহ সদরের কৃষক হাসান জানান, স্থানীয় আলু চাষে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাজারে দাম কম পাওয়ায় চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ত‌বে, এই জাতের আলু চাষ করে গড়ে আমরা প্রতি ১০ বর্গ মিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পে‌য়ে‌ছি। অন্যান্য স্থানীয় জাতের প্রতি গাছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম আলু ধরলেও এই জাতের আলুতে ১২০০-১৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পেয়েছি।মিষ্টি আলুর গবেষণা দলের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুন মোদক বলেন গোলা‌পি, বেগুনি ও কমলা এই তিনটি রঙে আলু নিয়ে গ‌বেষণা ক‌রে‌ছি। কমলা রঙের আলু গাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। বেগুনি রঙের গোল  পুড়িয়ে খেলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়, বিশেষ করে পুড়ানোর পর এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণ গোলাপী রঙের আলুগুলো সবজি হিসেবে রান্না করা যায়, আবার পুড়িয়েও খাওয়া যায়।প্রধান গবেষক অধ্যাপক আরিফ হাসান খান আরও জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় মিষ্টি আলুর চাষ হয়। উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাট‌তি থে‌কেই যায়। ত‌বে আমা‌দের উদ্ভাবিত আলুর নতুন সম্ভাবনা দেখা গে‌ছে। সারা বছর চাষ উপ‌যোগী হ‌লেও রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) এর ফলন ভালো হয়। এই মৌসুমে ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনায় বাউ মিষ্টি আলু-৫–এর চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। আলু চাষ করে অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
    তালতলীতে নানা রোগে মারা যাচ্ছে তরমুজ গাছ, কৃষকের মাথায় হাত
    মাঠের পর মাঠ, যে দিকে চোখ যায় কেবল তরমুজের খেত। সেই খেতের ফাঁকে ফাঁকে ধরেছে সবুজ তরমুজ। তরমুজ গাছের ভালো ফলন দেখে লাভের আশায় বুক বেধে ছিলো চাষিরা। কিন্তু তাদের মুখে হাঁসি ফোঁটার আগেই কপালে চিন্তার ভাঁজ। বুক ভরা স্বপ্ন এখন হাহাকারে পরিনত হয়েছে।হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ আগে থেকে তরমুজ গাছের শিকরে দাগ হয়ে কালো হয়ে পরে লতাপাতা শুকিয়ে গাছ মারা যাচ্ছে আবার কিছু গাছ পাতা কুঁকড়ে মারা যাচ্ছে, এছাড়াও তরমুজ গাছের পাতা পঁচা থেকে শুরু করে পরে তরমুজে পঁচন ধরে আস্তে আস্তে মরে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মারা যাচ্ছে । কীটনাশক প্রয়োগ করেও গাছ বাঁচানো হচ্ছে না। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পডেছেন বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার তরমুজ চাষিরা। এনজিও বা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন অনেকে। আশা ছিলো, ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করে শোধ করবেন ঋণ। সেই সঙ্গে স্বচ্ছলতা আসবে সংসারে। কিন্তু এখন ঋণ পরিশোধ করাই দায় হয়ে পডেছে তাদের।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিধপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে উপজেলায় ১২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশি। এ উপজেলার আবহাওয়া ও পরিবেশ তরমুজ চষের উপযোগী এবং কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে গ্রীস্মকালে এই ফল চাষে।উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের বেতিপাড়া গ্রামের চাষি মো. বাদল জোমাদ্দার বলেন, এ বছর ২ একর ৬৬ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে বীজ, সার, সেচ, ওষুধ বাবদ ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গাছগুলোতে তরমুজ ধরলেও হঠাৎ করে গত ১ সপ্তাহ ধরে গাছের শিকরে দাগ হয়ে কালো হয়ে পরে লতাপাতা শুকিয়ে গাছ মারা যাচ্ছে। কী রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছগুলো মারা যাচ্ছে তাও বলতে পারছি না। আগামি ১ মাসের ভিতরে তরমুজগুলো বিক্রির উপযোগী হতো।তিনি আরও বলেন, তরমুজ গাছগুলো রোগে আক্রান্ত না হলে। এ বছর ২ একর ৬৬ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষে ১ লাখ টাকা খরচ করে ৫-৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।বেতিপাড়া গ্রামের আরেক তরমুজ চাষি মনির হোসেন বলেন, আমি এ বছর ৮ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছি। এতে আমার ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তরমুজ গাছে ভালো ফলন হলেও গত ১ সপ্তাহ আগে থেকে গাছের শিকরে দাগ হয়ে কালো হয়ে পরে লতাপাতা শুকিয়ে ৫ একর জমির তরমুজ গাছ মারা গেছে। বাকি জমির তরমুজ গাছও আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। তরমুজ গাছ মারা যাওয়া ৫ একর জমিতে আবার পুনরায় চাষাবাদ করেছি তাও আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে।তিনি আরও বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আশায় তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু এখন লাভ তো দূরের কথা, খরচ টাকাই উঠছে না।এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ইলিয়াস বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঢলে পড়া ও গোড়া পঁচা রোগের কারনে মারা যাচ্ছে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া অব্যাহত আছে। তবে মাটি কিংবা অন্য কোন কারনে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা এজন্য আমরা গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে সরেজমিনে টিম পর্যবেক্ষন করার ব্যবস্থা করবো।এমআর
    রঙিন ফুলকপি চাষে নারী উদ্যোক্তার বাজিমাত
    এই মৌসুমে ফুলকপি যখন কৃষকের গলার কাটা, গুনতে হচ্ছে লোকসান,  এদিকে সখের বসে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল বাজিমাত করেছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার এক নারী উদ্যোক্তা রাবেয়া খাতুন। এখন তার মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার মাঝে গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপি শোভা পাচ্ছে। দূর থেকে বোঝা না গেলেও কাছ থেকে কপির এমন ভিন্ন রঙ মুগ্ধ করবে। কালীগঞ্জ উপজেলায় সাদা রঙের কপি নিয়মিত চাষ হলেও এ বছর প্রথম রঙিন কপি চাষ হচ্ছে। খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি। রঙিন কপির চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আসছেন এ কপি দেখতে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা উচ্চ মূল্যের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।রাবেয়া খাতুন আরও জানান,রঙ্গিলা  হলুদ জাতের। চারা তৈরির জন্য বীজতলায় রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ২৫-৩০ দিনের মধ্য চারা লাগানোর উপযুক্ত হয়। এরপর বীজতলা থেকে চারাগুলো সংগ্রহ করে জমিতে আবাদের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সার, কীটনাশক ও সেচসহ সব ধরনের পরিচর্যা করতে হয়। গাছ বড় হওয়ার পর ছোট ছোট গুটি বাধতে শুরু করে। তারপর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্য কপি বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।কালীগঞ্জে কাকিনা রুদ্রেশ্বর গ্রামের কৃষক ছামাদ মিয়া  জানান, হাটে সবজি বিক্রি করে গ্রামের ভেতর দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। হঠাৎ হলুদ ও গোলাপি রঙের কপি দেখা ক্ষেতের সামনে দাঁড়াই। রঙিন কপি এর আগে কখনও দেখিনি। কপি দেখে খুব ভাল লাগলো। বীজ পেলে এ জাতের কপি চাষ করবো। রঙ দেখে মানুষ ক্ষেতে ভিড় করবে। কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি জানান, কালীগঞ্জের মাটি কৃষির জন্য উর্বর। এখানে সব ফসল চাষ করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রঙিন কপির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। দাম ভাল পাচ্ছে। খরচ তুলনামূলক কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রাবেয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়। উপজেলায় বড় পরিসরে এ কপি চাষ করতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।এমআর
    হতাশ হয়ে পড়া মেহেরপুরের কৃষকের পাশে ‘স্বপ্ন’
    শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপির বাম্পার ফলন হলেও এর দাম পাচ্ছেন না মেহেরপুরের কৃষকেরা। উৎপাদিত সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চাষিরা। ক্রেতা কম থাকায় অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হচ্ছে জমিতে। কৃষি বিভাগ বলছে, একই সঙ্গে মেহেরপুরসহ সারা দেশের শীতকালের সবজি উঠতে শুরু করেছে তাই এমন দরপতন। কৃষকের হতাশার খবর চোখে পড়ে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) খবর জানার পর স্বপ্নর প্রতিনিধি গিয়ে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার পিস ফুলকপি কিনেছেন। ফুলকপি সবজি চাষি রকিব আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করতে খরচ হয়েতে ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ। লাভের মুখ না দেখে উল্টো জমিতে ফুলকপি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। চিন্তা ছিল অনেক। সেখানে আশার মুখ দেখালো সুপারশপ স্বপ্ন। আমাদের থেকে ১০ হাজার পিস ফুলকপি কিনেছেন তারা। সেখান থেকে আমার কিছু টাকা আয় হয়েছে। স্বপ্নকে অনেক ধন্যবাদ। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ  হালদার বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে মেহেরপুরে ব্যাপকভাবে বাঁধাকপি ও ফুলকপির আবাদ হয়। হঠাৎ দরপতন হয়েছে। স্বপ্নকে এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।স্বপ্ন’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির এ প্রসঙ্গে জানান, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে মেহেরপুরের কৃষকদের এই হতাশার বিষয়টি চোখে পড়ে আমাদের। এরপর স্বপ্ন'র টিম মেহেরপুরের সেই কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ফুলকপি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্বপ্ন'র সম্মানিত ক্রেতাদের জন্য আজ থেকেই স্বপ্ন আউটলেটে থাকবে মেহেরপুরের সেই কৃষক ভাইয়ের জমির ফুলকপি। 
    সাতকানিয়ায় শিমের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
    চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শত শত হেক্টর জমিতে শুধু শিম আর শিম। যেন শিমের রাজ্য পুরানগড়! শিমের ভালো বাজার মূল্য পেয়ে খুশি চাষিরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শিম চাষ করে এখন দুই সহস্রাধিক চাষির মুখে হাসি ফুটেছে।শীত মৌসুমের অন্যতম প্রধান সবজি শিম। চলতি মৌসুমে পুরানগড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। যেদিকে দৃষ্টি যায়, সেদিকেই সবুজ- বেগুনী রংয়ের শিমের সৌন্দর্য। চলতি মৌসুমের পুরোটা জুড়ে থাকবে শিমের এই আবাদ। ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একইরকম ফলন হবে।উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সাতকানিয়ায় চলতি মৌসুমে ৪৩৩ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু পুরানগড় ইউনিয়নেই ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন দুই সহস্রাধিক চাষি। বর্তমানে বাজারে শিমের ভালো দাম রয়েছে। কিছুদিন আগেও বাড়ির আঙ্গিনায় সীমিত পরিসরে শিম চাষ করা হতো। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে। ফলে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদী পতিত জমিকে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত করে শিমের আবাদ করা হচ্ছে।স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একসময় আমন ও বোরো মৌসুমে দুই দফায় ধানের চাষ হতো। ধান চাষে ঝুঁকি বেশি থাকায় এবং লাভ কমে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা শীত মৌসুমে শুধু শিমের চাষই করে চলেছেন। তাছাড়া শিমখেতের একই মাচাঙে গ্রীষ্ম মৌসুমে তাঁরা করলা, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙে ও চিচিঙ্গাজাতীয় সবজি চাষ করেন।শিম চাষিরা জানান, যে চাষি আগে এক একর জমিতে শিমের আবাদ করতেন, এখন তিনি তিন-চার একর জমিতে শিমের আবাদ করছেন। তারা জানান, কৃষি অফিস থেকে পরামর্শের পাশাপাশি সার ও বীজ পাচ্ছেন তারা। আর এবার শিমের ভালো দাম পেয়েছেন।বৈতরণী গ্রামের কৃষক মো. আমিনুল বলেন, একসময় এলাকার চাষিরা শুধু ধানের চাষ করতেন। ধান চাষে লাভ কম ও ঝুঁকি বেশি থাকায় এলাকার অধিকাংশ চাষিই এখন শিম চাষে নেমে পড়েছেন। শিম চাষ করে এখন পর্যন্ত কোনো চাষিকে ক্ষতির মুখে পড়তে দেখেননি তিনি। তাই এলাকায় প্রতিবছর শিমের চাষ বাড়ছে।সরেজমিন পুরানগড় ইউনিয়নের বৈতরণী, ফকিরখীল, কালিনগর, মাঝিরপাড়া, পুরানগড়, বটতলীপাড়া ও নয়াহাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিলজুড়ে শিমের খেত। তা ছাড়া বাড়ির পাশের আঙিনা, সড়কের দুই পাশসহ খালের পাড়েও শিমের খেত রয়েছে। কোনো কোনো খেতে শিমগাছের পরিচর্যা করছেন চাষি।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নেই ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আগামী বছর তা আরও বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি ও পরিকল্পনার কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের শিমসহ নানা ধরনের সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। তারা লাভবানও হচ্ছেন। কৃষিতে থেকে অর্জিত আয় দিয়েই তাদের পরিবার চলছে। পড়ালেখা করছে সন্তানরা। সব ব্যয় মিটিয়ে প্রতিবছর তাদের হাতে পুঁজিও থাকছে। এ কারণেই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ কৃষকের উন্নয়ন হলেই কৃষির উন্নয়ন হয়।
    ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষ করে অহিদুজ্জামানের স্বপ্নপূরণ
    যশোরের শার্শায় ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষ করে স্বপ্নবাজ যুবকের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। যশোরের মাটিতে সুস্বাদু ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ তিনিই প্রথম চাষ করেছেন বলে দাবি তার।সুমিষ্ট ফল ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে শার্শায়। শার্শার মাটিতে উৎপাদিত ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চীনসহ অন্য যে কোনো দেশ থেকে আমদানিকৃত রামরঙ্গন লেবুর চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিভিন্ন জাতের আম, কুল, আঙ্গুর, কমলা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মালটা, লিচু চাষের পর এবার ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষে সফল হল শার্শার এক যুবক।নার্সারী ব্যবসার পাশাপাশি শখের বসে ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন যশোরের শার্শা  উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের কৃষক অহিদুজ্জামান।বুক সমান গাছ। কোনটা আবার ৫/৬ ফুট ছাঁড়িয়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট হলুদ রঙের ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’। এরই মধ্যে অনেক ফলেই পাকা রং ধরেছে। ফলটির নাম ‘রামরঙ্গন’ এটা কমলার একটি ভ্যারাইটি জাত। এই জাতের কমলা চাষে সুবিধা হচ্ছে ‘পূনাঙ্গ পরিপক্ক হওয়ার পরও এটা গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। পরিপক্কের পরও অন্তত ফলটি এক মাস গাছে রাখা যায়।ভারত ও চীন দেশে ব্যাপক চাষ হয় ফলটির। তবে শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের স্বপ্নবাজ যুবক অহিদুজ্জামানের বাগানে এই ফলটির চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষ দেখতে আশে পাশের লোকসহ দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। দেখছেন, কেউবা আবার তুলছেন ছবি।রামরঙ্গন কমলা চাষি অহিদুজ্জামান জানান, তিনি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই বিঘা জমি ১০ বছর মেয়াদে লীজ নিয়ে ১৯৬টি ‘রামরঙ্গন চায়না কমলা লেবু‘র চারা রোপন করেন। সে সময় তিনি সঠিক জানতেনও না, এই গাছে কেমন ফল হবে। প্রথম বছর কিছু ফল আসে। সে ফল খুব সুস্বাদু হওয়ায় তাতে কলম বাঁধি। পরে দুই বিঘা জমিতে ওই চারা লাগালে দ্বিতীয় বছর গাছে ফল ভরে গেছে।প্রথম বছর তার ফল বিক্রি হয়েছিল এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তবে এ বছর বাগানের ফল ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। ফলে অহিদুজ্জামান আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। দুই বিঘা জমিতে ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’র চাষ করতে প্রথম বছর ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। বছরের যে কোন সময় চারা রোপন করা যায়। শুষ্ক মৌসুম হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ফল হারভেস্ট করতে হবে।সামান্য কিছু পরিচর্যা করলেই এ চাষে সাফল্য আসে। ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড়মন থেকে দুই মন ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। আগামী মৌসুমে প্রতিটি গাছে দুই মন কমলা পাওয়ার আশা অহিদুজ্জামান। প্রায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই বাগান চত্বর। তখন মনটা খুশিতে ভরে যায়।তিনি জানান, সর্বপ্রথম ২০২২ সালে টেলিভিশনে একটা প্রতিবেদন দেখি দেশের মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। প্রতিবেদনটি দেখার পরে ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষের আগ্রহ জন্মায়।নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কুচেমোড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে ‘জিসান নার্সারীর’ মালিক অহিদুজ্জামান বলেন, আগে আম, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। তারপর লীজ নেওয়া ওই জমিটি ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’ চাষের উপযোগী করে মাটি প্রস্তুুত করি।বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে থোকায় থোকায় ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’তে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান। যা দেখে যে কারোরই মন ভরে উঠবে।যদি কমলার আবাদ করা হয় তাহলে শুধু এই অঞ্চলের উৎপাদিত কমলা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে। তাই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’র বাগান করার পরামর্শ দেন অহিদুজ্জামান।তিনি আরো বলেন, ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’র চারা গুলো মূলত দুই বছরের মধ্য ফলন দেয় যা ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। দুই বিঘা  জমিতে ১৯৬টি চারা থেকে শুরু হওয়া শখের বসে গড়ে তোলা এই বাগান এখন চার বিঘা জায়গায় রুপ নিয়েছে।তার ‘জিসান নার্সারী’ মূলত কৃষি বিপ্লব করায় মূখ্য উদ্দেশ্য বলে জানান, এই নতুন কমলাচাষী। নার্সারী ব্যবসার মাধ্যমে রামরঙ্গন কমলার চারা তৈরি করে বিক্রি করছেন। প্রতিটি চারা তিনি বিক্রি করছেন ৬০ টাকা দরে। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে অনেকেই বাগান তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন।ঝিকরগাছার ফলের ব্যাপারি আব্দুল মজিদ বলেন, দেশে চায়না জাতের ‘রামরঙ্গন কমলা লেবু’র ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই কমলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রায় ফলের দামের সমান ভ্যাট ও খরচখরচা হয়ে যায়। দেশি এই ফলগুলো একশ টাকা কেজি দরেও ভালভাবে বিক্রি করতে পারি, তাতে ভাল লাভও হয়।শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, শার্শা উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি বিভিন্ন ফল চাষের জন্য উপযোগী। বিভিন্ন দেশি বিদেশি জাতের আম, কুল, আঙ্গুর, কমলা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, লিচু ও চায়না লেবু (কমলা) চাষের জন্য এই মাটি উপযোগী। চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, বেলে-দোআঁশ মাটিতে জুন-জুলাই মাসে চারা লাগালে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে তাতে ফল পাওয়া যাবে। তবে ব্যাগিং চারা যে কোন সময় সেচ দিয়ে লাগানো সম্ভব। এইচএ
    ৩ উপজেলা বন্ধ রেখে বান্দরবান ভ্রমণের দুয়ার খুললো
    এক মাসের অধিক সময় বন্ধ থাকার পর পাহাড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বান্দরবানের পর্যটনের দুয়ার খুলেছে। তবে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি এই তিন উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) থেকে বান্দরবান ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক কনফারেন্স রুমে বান্দরবান পার্বত্য জেলার পর্যটনকেন্দ্রসমূহ উন্মুক্তকরণ বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভ্রমণে বিরত থাকার বিষয়টি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মঞ্জুরুল হক, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, বান্দরবান সেনা রিজয়নের ক্যাপ্টেন আব্দুল মান্নান, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, নীলগিরি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে এ চারটি উপজেলার সাথে থানচি সড়কে নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অপর তিনটি উপজেলা- রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে ভ্রমণের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হলো।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনই চাই না পর্যটন শিল্প বন্ধ থাকুক। আমরা সবসময় চাই প্রত্যেকটা মানুষের নিরাপত্তা। একটা প্রাণ ঝরে যাক সরকার কখন চায় না। সেদিক বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাথায় রেখে কিছুদিনের জন্য বান্দরবান জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণে পর্যটকদের বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’এর আগে দেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। এফএস
    জুড়ীতে মাল্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
    মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলায় সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে মাল্টা চাষ। মাল্টার ফলন ভালো হওয়ায় চাষীরা ঝুঁকছেন এই ফল চাষে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে চাষ করছেন মাল্টা। আগে এক সময় কমলার দিকে ঝোক থাকলেও এখন অনেকেই মাল্টার বাগান গড়ে তুলছেন। প্রতি বছর বাড়ছে মাল্টা বাগানের সংখ্যা। তেমনি একটি বাগান গড়ে তুলেছেন জাবের আহমদ। তার বাগানে ১২ শতাধিক মাল্টা গাছ রয়েছে। মাল্টার পাশাপাশি কিছু অংশে গড়ে তুলেছেন কমলার বাগান। তিন বছর আগে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সাড়ে ৩ একর জায়গার উপর এই বাগান গড়ে তুলেছেন।কৃষি বিভাগ জানায়, মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে অত্যন্ত সু-স্বাদু ও মিষ্টি। বারি-১ জাতের এই মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে। সম্ভাবনাময় এই ফসল চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম থাকায় সহজে ফলন হয়। সে জন্য কৃষকরা ঝুঁকছেন এখন মাল্টা চাষে।কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জুড়ী উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। গত বছর যা ছিল ২১ হেক্টর। উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে কম বেশি হচ্ছে মাল্টার আবাদ। রয়েছে ছোট বড় শতাধিক বাগান। জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে এর ফলন হচ্ছে বেশি। কেউ করেছেন সখের বসে চাষাবাদ আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিক চিন্তাধারা নিয়ে। এবছর জুড়ীতে মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ টন।সরজমিনে পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বড় বড় দুটি পাহাড়ে প্রায় ১২ শতাধিক মাল্টার গাছ দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বাগান। মাত্র ৩ বছর পূর্বে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন জাবের আহমদ। গাছ রোপণের পরের বছর থেকে ফল পাওয়া শুরু হয়। গতবছর থেকে তিনি এই বাগান থেকে মাল্টা পাচ্ছেন। মাল্টার পাশাপাশি তার একই টিলা ভূমিতে রয়েছে কমলা ও জারালেবু। এবং পাশের জমিতে রয়েছে মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি ও গরু ছাগলের খামার। কিছুটা সরকারি হলেও বাকি সম্পূর্ণ করেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে।বাগানের নিয়মিত পরিচর্চা করা রমজান আলী বলেন, এবছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। গাছের চেয়ে ফল বেশি হওয়ায় ফুল থাকতেই মেডিসিন দিয়ে ঝরানো হয়েছে। অতিরিক্ত ফল হলে গাছ দূর্বল হয়ে যায়। তাই কৃষি অফিসারের পরামর্শে এই কাজ করা হয়। আগামী বছর থেকে গাছে যে ফল আসবে সবগুলো রাখা যাবে। তিনি বলেন, বাজারে যে মাল্টা পাওয়া যায় তার চেয়ে এই ফলগুলো বেশি মিষ্টি। সাইজেও এই মাল্টাগুলো বড় হয়। ৬ থেকে ৭টি মাল্টায় কেজি হয়। বাজারে মাল্টা কেজি বিক্রি হয় সাড়ে ৩শত টাকা করে। আর আমরা বিক্রি করি ২শত টাকা করে।জুড়ীর বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় মাল্টা বাগানের মালিক জাবের আহমদ বলেন, পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুরঞ্জিত ধর রনি এর পরামর্শে আমি মাল্টা বাগান শুরু করি। সরকার থেকে সার সহ সকল ধরণের সহযোগীতা পেয়েছি। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত বাগান দেখেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এবছর মাল্টার ফলন ভালো হয়েছে। গাছ ছোট থাকায় ভারসাম্য রক্ষার জন্য কিছু গাছের মাল্টা আমরা গাছ থেকে ছাটাই করেছি কৃষি অফিসারের পরামের্শ। আশাকরি আগামী বছর আমাদের মাল্টার বাম্পার ফলন হবে।তিনি বলেন, আমাদের বাগানে সরকার থেকে প্রদর্শনীসহ নিজ খরছে ১২০০শত মাল্টা গাছ, ৪শত কমলা গাছ সহ লেবু জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গার উপর আমাদের মাল্টা বাগান। প্রতিনিয়ত ২জন লোক আমাদের বাগানে কাজ করে।উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলার ডোমাবাড়ি গ্রামের খোর্শেদ আলম ৩ বছর আগে ১০ শতক জায়গার উপর গড়ে তুলেন মাল্টা বাগান। গত বছর ফল আসলেও তেমন ভালো হয়নি। বিগত বছরের তুলনায় এবছর প্রত্যেক গাছে বারি-১ জাতের মাল্টায় স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ায় নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন এসব মাল্টা। সুস্বাদু এই মাল্টার প্রতি আগ্রহ মানুষের। যার জন্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খুব সহজেই।খোর্শেদ আলম জানান, সরকারি ভাবে জুড়ী উপজেলা থেকে ১০ শতাংশ যায়গায় ৩০ টি গাছের একটি প্রদর্শনী পান তিনি। গাছের বয়স এখন চার বছর হয়েছে। এই বছর প্রতিটি গাছে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি করে ফল এসেছে। ছোট ছোট গাছের ফল দেখে অনেকের উৎসাহ বেড়েছে মাল্টার প্রতি। কেউ কেউ উদ্যোগ নিয়েছেন আগামীতে মাল্টা চাষে মনযোগ দিবেন।জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। শুকনো মৌসুমে মাল্টার উৎপাদন বাড়াতে গাছের পরিচর্চায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এই প্রযুক্তিতে পানি ও সার একসাথে দেওয়া যাবে ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে।তিনি বলেন, যারা মাল্টা চাষ করেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে। এবছর নতুন মাল্টা চাষী ৪৫ জন বেড়েছেন। অফিস থেকে প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকদের ৬ রকমের সার, কীটনাশক, ছত্রাক নাশক, সিকেচার, স্প্রে মেশিন এবং মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও শুকনো মৌসুমের জন্য মালচিং পেপার বিতরণ করা হয়েছে।আরইউ
    অনির্দিষ্টকালের জন্য সাজেক ভ্রমণে ‘নিষেধাজ্ঞা’
    পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানান রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি সভা হয়। সভায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাজেকে ৪ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।এরআগে পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার কারণে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দফায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার সময় বাড়ানো হয় ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এখন আবারও খাগড়াছড়ির সংঘাতকে কেন্দ্র করে অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকদের সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হলো।এফএস
    জানা গাছের অজানা গুণে, মিলবে শত রোগ মুক্তি
    প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক গাছপালা, উদ্ভিদ বা তরুলতা নানা ঔষুধি কাজে মানুষজন ব্যবহার করে আসছে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধের ক্ষেত্রে এসব গাছ-গাছড়ার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।বাংলাদেশের গবেষকরা বলছেন, আমাদের আশেপাশে থাকা অনেক গাছের ঔষুধি গুণ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষজন এগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করে এলেও এখন তাদের গবেষণায় এগুলোর নানা গুণাগুণ দেখতে পেয়েছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘পৃথিবীজুড়ে ৫০ হাজারের ওপর এমন গাছ ও উদ্ভিদ রয়েছে, যা মানুষ নানা কাজে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও এরকম প্রায় ১৫০০ প্রজাতির তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮০০ প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদের ওষধি ক্ষমতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।’ এর অনেক গাছই আমাদের ঘরের আশেপাশে, অযত্নে, অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে। আবার সংরক্ষণের অভাবে অনেক গাছ ও উদ্ভিদ এখন হারিয়ে যেতেও বসেছে।বহুকাল ধরে গ্রামে গঞ্জের মানুষ ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন, এরকম গাছপালা নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন ড. তাহমিনা হক। সেখানে তিনি ৪৬৭ জনের ওপর গবেষণা করেছেন।তিনি বলছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, সেখানকার মানুষ কমপক্ষে ২৪৭টি উদ্ভিদ নানা ধরণের ঔষুধি কাজে ব্যবহার করে। বিশেষ করে ৭৩টির মতো শারীরিক সমস্যায় তারা এসব গাছের নিয়মিত ব্যবহার করেন। সব মিলিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি, এসব গাছপাতার ৪৮৫ ধরণের কাজে ব্যবহার করা হয় ‘তিনি বলছেন, এর অনেকগুলো গাছের গুণাগুণের বিষয়টি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আবার গবেষণায় এখনো প্রমাণিত না হলেও অনেক উদ্ভিদ বা তরুলতা ব্যবহারকারীরা বলছেন, তারা সেগুলো ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন। ড. তাহমিনা গ্রামেগঞ্জে ঔষুধি হিসাবে যেসব গাছপালা, উদ্ভিদ বা তরুলতার ব্যবহার দেখতে পেয়েছেন, সেরকম কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো:১. মেন্দাএ গাছটি বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে চাপাইত্তা, কারজুকি, রতন, খারাজুরা নামেও পরিচিতি রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো পেটের পীড়া, রক্ত-আমাশা হলে পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে দুইবেলা খাওয়া হয়। ড. তাহমিনা হক বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই গাছের বাকল ও পাতা উভয়ই ব্যবহার করা হয়। একসময় হাড় ভেঙ্গে গেলে ছালের মিশ্রণ স্থানীয়ভাবে প্লাস্টারিংয়ে ব্যবহার করা হতো। অনেক সময় বুকের ব্যথার জন্য মালিশ করা হয়।২. বনধনে পেটের ব্যথা ও ডায়রিয়ার ওষুধে কার্যকর। ঘা-পাঁচড়ার ক্ষেত্রে পাতার মিশ্রণ লাগানো হয়।৩. ভাট ফুল বা বনজুঁইকৃমিনাশক এবং ডায়রিয়ার জন্য কাজ করে। কাঁচা হলুদের সাথে পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। যাদের চর্ম রোগ রয়েছে, তারা এই ফুলের রস মালিশ করে উপকার পেয়েছেন। লজ্জাবতী গাছের অনেক ঔষুধি গুণ রয়েছে বলে গবেষকরা বলছেন৪. নিমডায়াবেটিসের রোগীরা অনেকে নিমের পাতা শুকিয়ে ছোট ছোট ট্যাবলেট বানিয়ে সকাল বিকেল খেয়ে থাকেন। এছাড়া বহুকাল থেকে চিকেন পক্স, চামড়ার অ্যালার্জির মতো সমস্যায় নিমের পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পোকা মাকড়ের কামড়ের ক্ষত হলে, সেখানে নিম আর হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে লাগানো হয়। দাঁতের ব্যথার জন্য নিমের ডালের রস ব্যবহার করা হয়।৫. তুলসীএটি বাংলাদেশের অনেকের কাছেই একটি পরিচিত নাম। বিশেষ করে গ্রামের অনেক বাড়িতেই দেখা যায়। সর্দিজনিত রোগে এই গাছটির পাতা খাওয়া হয়। অনেকে চায়ের সাথেও ভিজিয়ে খান। বলা হয়ে থাকে, তুলসী পাতা ভেজে ঘি দিয়ে নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।৬. চিরতাএটি অনেক স্থানে কালমেঘ নামেও পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীরা খেয়ে থাকেন। পাতাগুলো গুড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অনেকে খান। পেট খারাপ, ডায়রিয়া, জ্বর ও বাত ব্যথার ক্ষেত্রে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া হয়্রে৭. পাথরকুচিগ্রামে একটা প্রচলিত ধারণা আছে, পাথরকুচি কিডনির পাথর ভাঙ্গতে সহায়তা করে, যদিও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে ব্যবহারকারীরা গবেষকদের কাছে বলেছেন, জ্বর ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় পাথরকুচির পাতা বেটে খেয়ে তারা উপকার পেয়েছেন। চামড়ার অ্যালার্জির জন্যও এটি বেটে ব্যবহার করা হয়। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় পাথরকুচির পাতার রস ব্যবহার করা হয়।৮. তকমাহজমশক্তি বৃদ্ধিকারক ও ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে।৯. কেশরাজ বা কালোকেশীভারত উপমহাদেশে বহুকাল ধরেই চুলের যত্নে এই গুল্মজাতীয় গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। ড. তাহমিনা হক বলছেন, গবেষণার সময় অনেকে বলেছেন, মেয়েদের মাসিকের সমস্যায় অনেকে পাতার রস খেয়ে থাকেন। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা ছত্রাকরোধী বা অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসাবে প্রমাণিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের বিভিন্ন ওষুধে সাজনার পাতা ও ফল ব্যবহার হয়১০. বাসকঠাণ্ডার জন্য, ফুসফুসের নানা সমস্যায় বাসক পাতার রস ফুটিয়ে সেই রস বা পানি খাওয়ানো হয়। শ্বাসনালীর সমস্যায় লালাগ্রন্থিকে বাসকের রস সক্রিয় করে বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি ভাব হতে পারে।১১. অর্জুনএই গাছের মূল, ছাল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও ফুল ওষধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হৃদরোগ, বুকে ব্যথার জন্য অর্জুনের ছাল গুড়ো করে খেয়ে থাকে। অর্জুনের গুড়ো বাসক পাতার সাথে মিশিয়ে খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়। মচকে গেলে বা হাড়ে চিড় ধরলে রসুনের সাথে মিশিয়ে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।১২. রিফিউজি লতাএটি একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এই লতা গাছটি দেখা যায়। কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করতে সহায়তা করে।১৩. জবাপেট খারাপের জন্য জবা গাছের পাতা ও ফুল গরম ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। জন্ডিসের জন্য পাতার জুস খাওয়া হয়। ফুলের রস নারীরা মাসিক ও স্রাবজনিত সমস্যার জন্য খেয়ে থাকেন।১৪. লজ্জাবতীঅনেকে একে লাজুক লতা বা অঞ্জলিকারিকাও বলে থাকেন। এই গাছের শেকড় বেটে গুড়ো করে ডায়রিয়ার জন্য খাওয়া হয়ে থাকে। পাতা ঘা-পাঁচড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। গাছের পাতা ও ফুল বেটে শরীরের ক্ষতের স্থানে ব্যবহার করা হয়। বাতজ্বর বা হাড়ের ব্যথায়ও এই গাছটি বেটে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আমাশয়, হাত-পায় জলুনির জন্য অনেকে লজ্জাবতী গাছের মিশ্রণ ব্যবহার করেন।সাধারণ যেকোনো পেটের ওষুধের জন্য থানকুনি পাতা কার্যকরী ১৫. দূর্বা ঘাসমাঠে, ঘাটে, রাস্তার এই ঘাস অবাধে জন্মালেও অনেকেরই এর ঔষুধি গুণের কথা জানা নেই। রক্তক্ষরণ, আঘাতজনিত কেটে যাওয়া, চর্ম রোগে এই ঘাসের রস অনেক উপকারী। কোথাও কেটে গেলে এই পাতার রস লাগালে রক্তপাত তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়। এতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।১৬. ধুতুরাএটা এখন বিলুপ্তির পথে। এটা অনেকে অ্যাজমার জন্য ব্যবহার করতেন। পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে ধোয়া তৈরি করে সেটা শোকা হতো।১৭. থানকুনিএটি সম্ভবত বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি ওষধি উদ্ভিদ। খুবই সাধারণ যেকোনো পেটের ওষুধের জন্য থানকুনি পাতা কার্যকরী। এটা পাতা বেটে রস বা ভর্তা করে খাওয়া হয়। এই পাতা হজম শক্তি বাড়ায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া কমায়, ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।১৮. স্বর্ণলতাজন্ডিস নিরাময়, তলপেটের ব্যথা কমানো, ও ক্ষত উপশমে এই লতা কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। লতা সেদ্ধ করে পানি খাওয়া হয়। এই লতার পানি পিত্তনাশক ও কৃমি দমনে সহায়তা করে। ব্যাকটেরিয়া দমনেও এটি সহায়ক। তবে এই পাতার রস অনেক সময় গর্ভপাত, বা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বলেও ধারণা আছে।১৯. শতমূলীশতমূলী উচ্চমানের ফলিক এসিড ও পটাশিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস। এতে ফাইবার, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি রয়েছে। এটি বন্ধ্যাত্ব নিরাময় ও শক্তিবর্ধক হিসাবে কাজ করে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।২০. বিলিম্বিকামরাঙ্গা গোত্রের একটি ফল হলেও এটি আলাদা ধরণের একটি ফল। এই ফল ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে প্রমাণিত। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ভেতরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। চুলকানি নিরাময়, মাম্পস, চামড়া ফাটা, যৌনরোগ চিকিৎসায় অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এই গাছের ফল ও পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে যাদের কিডনির রোগ রয়েছে, তাদের জন্য এই ফল বা পাতা ক্ষতিকর। উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের বিভিন্ন ওষুধে সাজনার পাতা ও ফল ব্যবহার হয়।২১. সাজনাউচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের বিভিন্ন ওষুধে সাজনার পাতা ও ফল ব্যবহার হয়। মনে করা হয়, সাজনা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কাচা রসুনের সাথে সাজনা গাছের পাতা একসাথে মিলিয়ে খেয়ে বাতের ব্যথা উপশম হয়। এছাড়া এই গাছের পাতা ও ফল অনেক পুষ্টিকারক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। রুচি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে বহুকাল ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বাস রয়েছে। এছাড়া আমলকি, হরিতকী, বহেরার মতো ফলগুলো ঔষুধি হিসাবে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।সূত্র : বিবিসিএমআর
    ভৈরবে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
    কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনাসহ অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এ বছর কালিকাপসাদ,ঝগড়ারচর, আতকাপাড়া,বাশগাড়ি,গজারিয়া ও মানিকদীতে ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন ওই এলাকার কয়েকজন কৃষক। এ পন্থায় আদা চাষে কৃষক লাভবান হবে। বস্তা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরছ হয়। প্রতি বস্তায় গড়ে এক থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হয়। সে হারে ১ শত টাকা দরে বিক্রি করলেও অনেক টাকা লাভ হবে এমনটাই মনে করছেন আদা চাষীরা। বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেলে এক সময় আমাদের দেশ থেকেও আদা বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলছেন উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের পতিত জমি, বসতবাড়ির আঙ্গিনা, কিংবা সুউচ্ছ ভবনের ছাদেও আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন। এ বছর কালিকাপ্রসাদ উনিয়নের আতকাপাড়া ও নয়াহাটি, গজারিয়া, শিবপুর এলাকায় প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এ ভাবে আদা চাষ করলে তুলনামূলক ভাবে রোগ বালাই হয়না এবং খরছও অনেক কম হয়। চাষের যায়গাটি ছায়াযুক্ত হওয়ায় হলে ফলনও ভালো হয়। প্রতি বস্তায় ৩টি করে বীজ রোপণ করতে হয়। প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে হলেও ৬ হাজার কেজি আদা উৎপাদন হবে। বাজার দর ভাল থাকলে কম করে হলেও ৬ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবে। বস্তায় আদা চাষ দেখে অনেকেই বাসা বাড়ির ছাদ , বাড়ির আঙ্গিনা, অনবাদি পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ দেখে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তায় উৎপাদিত আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বানিজ্যক ভাবে বাজার জাত করতে পারলে আয় হবে লক্ষ লক্ষ টাকা। এতে করে দেশে আদার চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ হবে। বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে উঠান বৈঠক ও পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন উপসহকারি কৃষি অফিসারগণ। চাষী আল আমিন, কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আতকাপাড়া, নয়াহাটির কৃষক এনামুল হক ও আব্বাস মিয়া বলেন, আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পতিত জমিতে বস্তার মাঝে আদা চাষ করেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম বস্তায় আদা চাষ করে আবার না লোকশানে পড়ি। এখন দেখছি ফলন ভাল হচ্ছে। একেক বস্তায় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরছ হয়। ফলন হয় একে বস্তায় কম করে হলেও এক থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হয়। আমরা প্রায় ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমাদের অনেক টাকা আয় হবে।ডা: মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কবির, এম বি বি এস বলেন, আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। আমার চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি   কৃষির প্রতি আমার অনেক আগ্রহ ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ কারো বাড়ির আঙ্গিনা এমনকি অনাবাদি জমি যেন খালি না রাখে। কিছু একটা হলেও যেন আবাদ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় উদ্ভোবদ্ধ হয়ে আমার অনাবাদি জমিসহ বাড়ির আঙ্গিনাতেও বিভিন্ন সবজি বাগান আর ফলদ গাছও লাগিয়েছি। বস্তায় আদা চাষ এটা আমার কাছে নতুন পদ্ধতি বলে মনে হয়েছে। কৃষি অফিসার আকলিমা বেগমের পরামর্শ নিয়ে আমার বাড়ির আঙ্গিনাতে ১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। খলছ মাত্র বস্তা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ১ হাজার বস্তায় কম করে হলেও আশা করছি প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার কেজি আদা উত্তোলন করা যাবে। এটা সম্পুর্ন দেশি জাতিয় আদা। এ আদা দিয়ে আমার নিজের চাহিদা পুরণ করেও আশা করছি আমার এলাকার চাহিদাও পুরণ করতে পারব। তাছাড়া কৃষির প্রতি আমার আগ্রহ আরো বিভিন্ন ভাবে। আমার বাড়িতে বাকি আরো কিছু যায়গা ছিল। সে যায়গাতে আমি বিভিন্ন সবজি বাগান ও ফলদ গাছ লাগিয়েছি। সেখান থেকে ভাল ফলন পাচ্ছি। সিগুলো নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে প্রতিবেশিদের মাঝেও দিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম বলেন, এ বছর ভৈরবে প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পরামর্শ ও ঊঠান বৈঠক সহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে বস্তায় আদা চাষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছেন। এ বছর উপজেলার কালিকাপ্রসাদ,শিবপুর, গজারিয়া,বাঁশগাড়ি, মানিকদী গ্রামে অধিক পরিমানে বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এ ভাবে আদা চাষ করার ফলে কৃষকদের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরছ হয়। একেকটি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়া যায়। এভাবে আদা চাষ করলে ফলন ভাল হয়। পোকা মাকড়ের উপদ্রব হয়না। এতে করে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারবে। এ আদা পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বানিজ্যিক ভাবে বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হবে আদা চাষীরা। বর্তমান সময়ে বস্তায় আদা চাষ বানিজ্যিক কৃষিতে চলে যাচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশে বাহির থেকে আদা আমদানী অনেকটাই কমে যাবে। বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেলে এক সময় আমাদের দেশ থেকেও আদা বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হবে। আমরা আশা করছি এবছরের তুলনায় সামনের বছরে বস্তায় আদা চাষ দ্বিগুন বৃদ্ধি পাবে।  এমআর
    লক্ষ্মীপুরে বন্যায় দেড় লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত
    লক্ষ্মীপুরে চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ২০৯ জন কৃষক। ক্ষতির পরিমান ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।  সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতে। এছাড়া পান, আখ, হলুদ, আদা এবং নানা জাতের ফলজ গাছেরও ক্ষতি হয়েছে।বুধবার (১১সেপ্টেম্বর) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনার কাজ চলছে বলে জানান জেলা কৃষি বিভাগ।জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা ছিল। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দুই হাজার ৫৩৬.৮০ হেক্টর জমির বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। যা মোট বীজতলার ৭০ ভাগের বেশি। এতে ৬৩ হাজার ৪২০ জন কৃষকের ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৬১০.৭০ হেক্টর জমির। যা আবাদকৃত মোট জমির ৫৩ ভাগ। এতে ৩১ হাজার ৭০৬ জন কৃষকের ৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।২৪ হাজার ৪২৩ জন কৃষকের ৪ হাজার ৭০.৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। বোনা আমনে ৯ হাজার ৭২০ জন কৃষকের এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।বন্যায় ১০ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির শরৎকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। যা আবাদকৃত জমির শতভাগ। এতে ২০ হাজার ৭৮০ জন কৃষকের ৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।পান নষ্ট হয়েছে ১১২.২ হেক্টর জমির। এতে ১৬৬৩ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার। আদা নষ্ট হয়েছে ২৪০ জন কৃষকের ৮৩.৩৩ হেক্টর জমির। ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ টাকার।৩৯ হেক্টর জমিতে থাকা ৯৮ মেট্রিক টন হলুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০৪০ জন কৃষকের ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।৭৪৪ জন কৃষকের ৯.৩ হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ টাকা।২০৭৩ জন ফল চাষীর ৪১.৪৬ হেক্টর জমির ফল বাগান নষ্ট হয়েছে। এতে ২০৭ মেট্রিক টন ফলের ক্ষতি হয়েছে। যারা বাজার মূল্য ২ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সোহেল মো: শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, চলমান বন্যা, বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে লক্ষ্মীপুরের ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। কৃষকের আমনের বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পান, সবজি ও ফলজগাছ নষ্ট হয়েছে। যার আর্থিকমূল্য প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্নয় করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত কৃষকের মাঝে যাতে পুনর্বাসন প্রণোদনা সরবরাহ করা যায়। কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা ৬ হাজার কৃষকের মাঝে আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছি। তাদের এ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা করে সহয়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।এছাড়া আগাম রবি মৌসুমের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে পেয়েছি। ১৩ হাজার ২০০ শ' কৃষকের মাঝে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমূখী, মুগ, মশুর, খেশারী, চিনা বাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেয়াজ বীজ বিতরণের জন্য কর্মসূচি আসবে।আমন ধান চাষীদের উদ্দেশ্যে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের চারা লাগাতে পারবে। তারা যেন নাভি জাতের বিআর-২২, বিআর-২৩ ধানের চারা রোপণ করে। এছাড়া আমরা যে বীজ দিয়েছি, বিআর-৭৫, বিআর-১৭, এ দুটা বীজ দ্রুত কাদাযুক্ত মাটিতে বপন করে ১৫ দিনের চারা জমিতে রোপণ করতে পারবে। এ ধান নির্দিষ্ট সময়ে ভাল ফলন দিতে পারে।তিনি বলেন, ৬৫ হাজার কৃষকের জন্য শীত কালীল সবজির প্রণোদনা চাহিদা পাঠিয়েছি। তারা যাতে বাড়ির আঙ্গিনায় শীতের সবজির চাষাবাদ করতে পারে, সে সহযোগিতা করা হবে। আমরা কৃষকের জন্য যতটুকু করনীয় তা করার জন্য তৎপর আছি। এসএফ
    Loading…