এইমাত্র
  • মালয়েশিয়ায় কেমন আছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা
  • ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার: প্রধান বিচারপতি
  • মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে ষষ্ঠ–দশম গ্রেডে চাকরির সুযোগ
  • আমরা তথ্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত: ডেপুটি গভর্ণর খুরশিদ আলম
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক
  • যে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘রেমাল'
  • ভৈরবে পুত্রবধূ হত্যা মামলায় র‍্যাবের হাতে শাশুড়ি আটক, পরে মৃত্যু
  • পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেল বিশাল গ্রহাণু!
  • কুষ্টিয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত, আহত ২
  • পানির উৎস নিয়ে বিরোধ বিশ্বজুড়ে সংঘাত সৃষ্টি করছে: এরদোগান
  • আজ শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    কক্সবাজারে ভোটের মাঠ মাদক ব্যবসায়ীর দখলে

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৪ মে ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৪ মে ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম

    কক্সবাজারে ভোটের মাঠ মাদক ব্যবসায়ীর দখলে

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ৪ মে ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম

    কক্সবাজারে মাদকের প্রবেশদ্বার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল। উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত থেকে ইয়াবা আইসসহ নানা মাদকদ্রব্য এনে টার্মিনাল থেকে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বাস টার্মিনাল লারপাড়া সংলগ্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে শত শত মাদক ব্যবসায়ী।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মাদক এনে টার্মিনাল থেকে বাস ড্রাইভার হেলপারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জোগান দিয়ে আসছে লারপাড়ার মাদকসম্রাটরা। তারাই এখন কক্সবাজার পৌরসভাসহ ঝিলংজার সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। এদের একজন পরিবহন শ্রমিক থেকে মাদক কারবারে ফুলে ফেঁপে উঠা আত্মস্বীকৃত ইয়াবা সম্রাট শাহজাহান আনসারী। এক সময়ের রিক্তহস্ত শাহজাহান অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি সস্ত্রীক কারাভোগের পর এলাকায় ফিরেছেন।

    এই মাদকসম্রাটের টাকার ছড়াছড়ি ও দাপটের আঁচ পড়েছে চলমান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা আ.লীগের শীর্ষ এক নেতা ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করছেন এই মাদক সম্রাট। এই ইয়াবা ডনের পিতা খ্যাত ওই নেতা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে। ফলে ইয়াবা ডন শাহজাহান কালো ছিটিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছে ভোটারদের ওপর।

    সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বহু দুর্নীতে অভিযুক্ত আ.লীগের এক নেতা। তাঁকে ঘিরে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নতুন পুরাতন মিলে অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। যারা ওই নেতা আশ্রয় থেকে মাদক ব্যবসা করে জেলার অন্যতম সম্পদশালী পরিবারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগে রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই আ.লীগ নেতার সমর্থনে টাকার ব্যাগ নিয়ে তাকে জেতাতে মাঠে নেমেছে কক্সবাজারের মাদকসম্রাট শাহজাহান আনসারীসহ তার অনুসারীরা।

    আলী আকবর, নাজির হোসাইন, মনজুর, ইমরান, শফিউলসহ এলাকাবাসী বলেন, ঝিলংজার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে রাতের আধাঁরে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টাকা দিচ্ছেন শাহজাহানসহ তার অনুসারীরা। এসময় ওই নেতাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে যে কোন বিপদে ওই নেতার হয়ে তিনি তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে আত্মসমর্পণ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও আত্মস্বীকৃত ১০২ ইয়াবা কারবারি। তাদের অন্যতম শাহজাহান আনসারী। এরপরই শাহজাহান ও তার পারিবারিক সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শাহজাহান ও তার স্ত্রী জিগারুননেছার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শাহজাহানকে উভয় মামলায় আসামি করা হলেও তার স্ত্রীকে একটিতে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

    দুদকের করা ওই মামলায় দীর্ঘদিন সস্ত্রীক কারাভোগের পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে এসে ওই নেতার হয়ে ভোটের মাঠে কালো টাকা ছিটাচ্ছেন। তার সাথে কাজ করছে মাদক ব্যবসায়ীদের আরেকটি দল। এমটাই দাবী করছেন ভোটার সহ সংশ্লিষ্টরা।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করেছিলেন ইয়াবা সম্রাট শাহজাহান আনসারী। কালের আবর্তে পরিস্থিতি বদলে গেলে ফের জামিনে বের হয়ে আসে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেশের শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া হাজি সাইফুলের ডানহাতখ্যাত শাহজাহান আনসারী পূর্বেকার সব ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করে নতুন করে নবোদ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করে যাচ্ছে ইয়াবা। নিজেকে ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে জোরপূর্বক হোটল দখলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

    আরও জানা যায়, ফুটবলার ও পরিবহণ কর্মচারী হিসাবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহ করে এলেও ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে শাহজাহান আনসারী ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এরপর থেকে তাকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। কয়েকজনের এই সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করতেন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া দেশের শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া হাজি সাইফুল করিম। সহযোগী ছিলেন শাহজাহান আনসারীর ছোট ভাই আবু সুফিয়ান আনসারী। সিন্ডিকেটে ছিল সাবেক পুলিশ সদস্য, আইনজীবী, স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার ও বিকাশ দোকানদারসহ আরও অনেকে।

    আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানান, ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। কিন্তু টের পেয়ে আগেই পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। ক্রীড়ামোদীদের অভিযোগ, এক সময় ইয়াবা গডফাদার শাহজাহান আনসারীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল কক্সবাজারের ফুটবল অঙ্গন। তখন তার কথাই যেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার আইন ছিল।

    সরকারের পাঁচটি সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তালিকায় জেলার ইয়াবা ডন হিসাবে যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে শাহজাহান আনসারী অন্যতম। সামান্য পরিবহণ কর্মচারী থেকে ইয়াবা ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আনসারীর কব্জায় ছিল জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তবে আত্মসমর্পণের পর তার প্রভাবে ভাটা পড়েছে।

    এদিকে আ.লীগের ওই নেতার হয়ে প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নেমেছে কক্সবাজারের আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী রোজিনা। রোজিনার সঙ্গে ভোট প্রচারে নেমেছে একদল চিহ্নত মাদককারবারিরা। তবে রোজিনা ও তার সহযোগীরা খুচরা মাদককারবারি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এছাড়াও ওই নেতার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় বহু মাদক ব্যবসায়ীসহ দাগী আসামিদের দেখা গেছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ওই আ.লীগ নেতার পক্ষে বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারিরা দেদারসে টাকা খরচ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যাতে আগামীতে ঝুটঝামেলা হলে তার সাহায্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত শাহজাহান আনসারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করও তাকে পাওয়া যায়নি।

    যদিও আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর দাবি, দলের নেতাকর্মীরাই তার জন্য ভোট করছে। কোনো চিহ্নিত মাদককারবারি তার সঙ্গে নেই। বরং প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীর সমর্থকরা মিথ্যাচর করছেন।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…