সিলেটে উদযাপিত হয়ে গেল সাত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী লাকড়ি তোড়া উৎসব। আপাত ধর্মীয় মনে হওয়া এই উৎসবের পেছনে আছে মানুষে মানুষে সমতার বিষয়ে হজরত শাহ জালাল (রা.) এর জীবনের একটি শিক্ষণীয় ঘটনা।
সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে সিলেট নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে গাড়িতে মাইক বাজিয়ে ও পায়ে হেঁটে আসতে শুরু করেন ভক্ত অনুরাগীরা। যোহরের আজান শেষে হজরত শাহ জালাল (রা) মাজারের মোতাওয়াল্লীর অনুমতিতে মাজার প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যের আলোকে বেজে উঠে ঢাক-ঢোল আর ব্যান্ডপার্টির ড্রামস। সেই তালে তাল মিলিয়ে হাজারো মানুষ খালি পায়ে যাত্রা করেন প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে সিলেটের শহরতলীর লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকার একটি টিলার উদ্দেশে।
সুফি সাধক হজরত শাহ জালাল (রা) এর ভক্তরা এ মিছিলে স্লোগান দেন ‘লালে লাল, বাবা শাহ জালাল’ কিংবা ‘বাবা শাহ জালাল কি জয়, ৩৬০ আউলিয়া কি জয়’ বলে। আর ভক্তদের হাতে থাকে লালসালুতে জড়ানো দা ও কুড়াল জাতীয় হাতিয়ার যা দিয়ে কাটা হয় টিলায় থাকা গাছের ডালপালা।
৭০৩ বছর (মতান্তরে ৭৩৯) ধরে সিলেটের হজরত শাহ জালাল (রা.) এর ভক্তরা পালন করছেন এই ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব। লাকড়ি অর্থ কাঠ এবং তোড়া মানে কাটা বা ভাঙা। লাকড়ি তোড়া মানে কাঠ কাটা।
লাকড়ি তোড়া উৎসবে অংশ নেন সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ। হাজারো ভক্ত লাক্কাতুরার টিলায় পৌঁছানোর পর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ শরীফ। সেখানে ভক্তদের মধ্যে তাবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় ভক্তরা টিলার গাছের ডালপালা কাটেন। গাছ কাটা নিষিদ্ধ থাকায় কোনো গাছ কাটা হয় না। লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা গাছের ডাল আগে থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।
পরে লাকড়ি নিয়ে আবারো মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন ভক্তরা। মাজারে ফিরে এসব লাকড়ি বড় দিঘীতে তিন বার ডুবিয়ে পাশেই স্তূপ করে রাখেন। এই লাকড়ি আগামী হজরত শাহ জালাল (রা) ওরশের শিরনি রান্নায় ব্যবহার করা হবে।
এফএস