বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিকে বেআইনি ও অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)।
তাদের মতে, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের গৃহীত অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করতেই বর্তমান সরকার ও চলমান উন্নয়ন বিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অংশ এই আন্দোলন।
বুধবার (০৮ মে) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মো. আসাফউদ্দৌলা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব বলা হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যকার বৈষম্য দূরীকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে কর্মবিরতি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রবিবার (০৫ মে) থেকে আন্দোলনে গেলেও জরুরিভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়া অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ ও সকল ধরণের গ্রাহক সেবা ও অভিযোগ নিষ্পত্তি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে সারাদেশেই ভোগান্তিতে পড়েছেন পল্লী বিদ্যুতের অসংখ্য গ্রাহক।
এদিকে গত তিনদিন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করলেও বিআরইবির দায়িত্বশীল কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার লিখিত বক্তব্যে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছে সরকারের বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটি।
সেখানে বলা হয়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্প্রতি বাপবিবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তাদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বৈষম্য নিরসন, অভিন্ন সার্ভিস কোড প্রচলন, জনবল নিয়োগ, সরকার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও ট্রেড ইউনিয়ন চালুসহ বেশ কিছু অযৌক্তিক দাবি তুলে ধরে কর্ম বিরতির ঘোষণা দেয়। এর ফলে বিদ্যুতের মতো একটি জরুরী পরিসেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, বাপবিবোর্ড সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ জাতীয় বেতন স্কেল মোতাবেক বেতন ভাতা প্রাপ্ত হন। পক্ষান্তরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক প্রণিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন, যা জাতীয় বেতন স্কেলের তুলনায় বেশি। যেমন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ মোতাবেক ২২০০০/- টাকা মূল বেতনে যোগদান করেন। পক্ষান্তরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন এজিএম ৪৩৫০০/- টাকা মূল বেতনে যোগদান করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তুলনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাগণ প্রায় দ্বিগুন বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তাই বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বৈষম্যের দাবিটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।
বিআরইবি'র লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী উক্ত অযৌক্তিক দাবিসমূহ তুলে ধরে কর্মবিরতিতে গিয়ে বিদ্যুতের মতো একটি জরুরী পরিসেবা বিঘ্নিত করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার একটি অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মূলত এই আন্দোলন বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকারের গৃহীত অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বর্তমান সরকার ও চলমান উন্নয়ন বিরোধী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
এ বিষয়ে দেশ প্রেমিক সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।