এইমাত্র
  • বাবুল হত্যায় মেয়র আক্কাছ ঢাকায় গ্রেফতার
  • কলকাতায় মুক্তির প্রথম দিনেই ‘তুফান’র ধস
  • যুক্তরাজ্যে নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা
  • এবার বান্ধবীর সঙ্গে মতিউরের স্পর্শকাতর গোপন ফোনালাপ ফাঁস
  • পাবনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ বন্ধুর দাফন সম্পন্ন, পরিবারে মাতম
  • দাবার কোর্টেই অসুস্থ, গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া আর নেই
  • যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার
  • কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি, দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি
  • জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
  • কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু
  • আজ শনিবার, ২২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৬ জুলাই, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    লাশ নিয়ে রাজনীতি নয়, বাবুল হত্যার বিচার চান পরিবার

    অসীম কুমার সরকার, রাজশাহী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম
    অসীম কুমার সরকার, রাজশাহী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম

    লাশ নিয়ে রাজনীতি নয়, বাবুল হত্যার বিচার চান পরিবার

    অসীম কুমার সরকার, রাজশাহী প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম

    রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের পরিবার তার লাশ নিয়ে অপরাজনীতি চায় না। তারা বাবুল হত্যার সঠিক বিচার চান। নিহত বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবি বলেছেন, ‘তার স্বামীর লাশ নিয়ে অপরাজনীতি হোক, সেটা তিনি চান না। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান। তিনি প্রকৃত খুনিদের ফাঁসি দেখতে চান।’

    বাঘা উপজেলার আওয়ামীলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে আহত হওয়ার চারদিন পর গত ২৬ জুন হাসপাতালে মারা যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল।

    পরদিন জানাজা নামাজে বাবুলের লাশ সামনে রেখে স্থানীয় এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ হত্যাকান্ডের পেছনে মদদদাতা আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটির মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন। ওই জানাজা থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে বের করে দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলির ডালা নিয়ে গেলেও সেটা বাবুলের মরদেহে দিতে দেওয়া হয়নি।

    শাহরিয়ারের ওই বক্তব্যের পর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব ঘটনায় আমার সম্পৃক্ত হওয়ার কোন কারণ নেই, সুযোগও নেই। মনে হচ্ছে রাজনীতি করতে শাহরিয়ারের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল।’ সংঘর্ষের সময় সবাই বাবুলকে কেন একা ফেলেন গেলেন এবং কেন এমপি শাহরিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিলেন না সে প্রশ্ন তুলে লিটন অনুসারীরা কর্মসূচি পালন করেছেন। তারাও বাবুল খুনের বিচার চেয়ে এমপি শাহরিয়ারকে রাজশাহী শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি লিটন-আসাদকে জড়িয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রমাণ করতে শাহরিয়ারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এর পর থেকে এমপি শাহরিয়ার নিশ্চুপ।

    দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ আগে থেকেই দুই ধারায় বিভক্ত। জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেয়র লিটন ও এমপি আসাদের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। বাবুল খুনের দিন দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় মেয়র আক্কাস ও ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল উপস্থিত ছিলেন। সেই কারণে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে লিটন-আসাদকে জড়িয়েছেন শাহরিয়ার।

    তবে বাবুলের লাশ নিয়ে রাজনীতি চান না নিহত বাবুলের পরিবার। এসব দলাদলির কারণে বাবুলের প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। বাঘার গাওপাড়ায় বাবার বাড়িতে বসে বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবি বলেন, ‘লিটন ভাই ও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে কোন ধরনের দ্বন্ধ ছিল না। একসময় আমার স্বামী তাদের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। সবার সঙ্গেই আমাদের ভাল সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল না।’

    নিহত বাবুলের ছেলে আশিক জাবেদ বলেন, ‘লিটন-আসাদ ইস্যুতে এখন আলোচনা ভিন্ন দিকে। এতে আমার বাবার প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে। আমরা এ বর্বর হত্যার বিচার চাই।’

    হামলাকারীকে দেখলে চিনতে পারতেন বাবুল উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে মেয়রের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই হেলমেট পরে ছিলেন। বস্তায় করে তারা ইটপাটকেল ও লাঠিশোটা এনেছিলেন। মেয়র আক্কাসসহ তার অনুসারিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সামনে এলে উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পাল্টা জবাব দিয়ে মিছিলটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। তারা উপজেলা চত্বরের সামনে এলে মানববন্ধনের লোকজন ভেতরে ঢুকে যায়। প্রধান ফটক দিয়ে সোজা রাস্তা দিয়ে ঢুকলেই হাতের বাঁয়ে মৎস্য অফিস, এরপর ইউএনওর কার্যালয়। ইউএনওর কার্যালয়ের পর অব্যবহৃত নতুন উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন। এর সামনের ফাঁকা স্থানটিতেই আহত অবস্থায় পড়ে ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা বাবুল।

    নিহত বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, ‘আহত হওয়ার পরদিন বাবুলের শারীরিক অব¯’ার উন্নতি হয়েছিল। তখন তিনি হামলাকারীর সম্পর্কে জানতে স্বামীকে প্রশ্ন করেছিলেন। বাবুল তাকে জানিয়েছিলেন, ‘হামলাকারীকে তিনি চেনেন না। তবে তাকে দেলে চিনতে পারবেন।’

    মামলার বাদী ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি পিন্টু বলেন, ‘আক্কাসের লোকজনের হামলায় আমরা উপজেলার ভেতরে ঢুকে কেউ ইউএনওর বাসভবনের সামনে আবার কেউ প্রাচীর টপকে থানায় গিয়ে আশ্রয় নিই। বাবুলের ধারণা ছিল তাকে কেউ মারবে না, কিন্তু মেরেছে। আমরা সরাসরি কোপাতে দেখিনি। তবে হামলাকারীরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাদের দেখেছি।’

    একই কথা বললেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদ সাদিক কবির। তিনি বলেন, ‘গেটের সামনে কারা যেন একটা ককটেল মারে। ফলে গেট থেকে পুলিশ একটু দূরে সরে যায়। এরপর হামলাকারীরা ভেতরে ঢুকে বাবুলকে কোপায়। আমরা প্রাচীর টপকে থানায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরে ওসি আমাকে ফোন করে বলেন যে, ‘বাবুল পড়ে আছেন। তখন আমরা এসে একটা মোটরসাইকেলে তুলে বাবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

    উপজেলা চত্বরে ঘটনাস্থল কাভার করবে এমন সিসি ক্যামেরা আছে। তবে ইউএনও জানিয়েছেন, ‘সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পূর্ণ হয়ে গেছে। ১ মে থেকে ভিডিও রেকর্ড থাকে না। শুধু মনিটরে দেখা যায়। তবে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতোমধ্যে বের হয়েছে। তাতে বাবুলকে কোপাতে দেখা গেছে।’

    মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ০১ নম্বর আসামি মেয়র আক্কাস আলী ও ০২ নম্বর আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল তাদের হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে বাবুলকে কুপিয়েছেন। এ ঘটনায় মেয়রের সম্পৃক্ততা তদন্ত করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পুলিশ-প্রশাসনকে দুষছেন সবাই

    বাবুলের মৃত্যুর জন্য এখন পুলিশ প্রশাসনকেই দুষছেন সবাই। উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘কর্মসূচির ব্যাপারে পুলিশকে আমরা অবহিত করেছিলাম। পুলিশ বলেছিল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। নিহত বাবুলের ছেলে আশিক জাভেদ বলেন, পুলিশের ব্যর্থতার কারণে আমার বাবার প্রাণ গেছে।'

    মেয়র আক্কাসপক্ষের এক আওয়ামীলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখে সংঘাতের আশঙ্কায় তিনি ১৪৪ ধারা দিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফোন করেছিলেন। ১৪৪ ধারা না দিয়ে তাকে বলা হয়েছিল, পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে। কিন্তু জেলা থেকে পুলিশ আনা হয়েছিল মাত্র ৩০ জন। এই পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি।’

    এ বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের যথেষ্ট তৎপরতা ছিল। একটা থানার যত পুলিশ সদস্য, সবাই মাঠে ছিলেন। জেলা থেকে পর্যাপ্ত পুলিশ পাঠিয়েছি। থানার ওসি দুইপক্ষের মাঝে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এখন অনেকেই অনেক কথা বলতে পারে। তিনি বলেন, দুইপক্ষ দুইটা মামলা করেছে। মামলাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ১৪৪ ধারা কেন দেওয়া হয়নি তা প্রশাসন বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেন এসপি। তবে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, ‘পুলিশ যদি লিখিতভাবে আমাদের সংঘাতের আশঙ্কার কথা জানায়, তখন ১৪৪ ধারা দেওয়া হয়। বাঘার ঘটনায় পুলিশ এ রকম কিছু দেয়নি।’ আর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দুপক্ষের মুখোমুখি কর্মসূচি দেখে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে চেয়েছিল। কিš‘ একটি পক্ষের রাজনৈতিক চাপের কারণে ১৪৪ ধারা দেওয়া যায়নি।’

    ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা টাইম টু টাইম ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। ১৪৪ ধারা না দিলেও আমরা পুলিশ প্রস্তত রেখেছিলাম। থানার পাশাপাশি জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে আগের রাতেই অতিরিক্ত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আনা হয়েছিল।সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে এমপি শাহরিয়ার আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…