ছুটি ছাড়াই বিদেশে অবস্থান করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দুই নার্স তারপরও তারা নিয়মিত বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলোচিত দুই সিনিয়র স্টাফ নার্স হলেন সাইমা ইয়াসমিন ও জাকিয়া সুলতানা। ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে আর করলে ফেরেননি তারা। বিধিবহির্ভূতভাবে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তাদের নোটিশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু তারা মাসে মাসে বেতনভাতা তুলছেন হাসপাতাল থেকে। দুই নার্সের বিদেশে অবস্থান করার বিষয়ে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইমা ইয়াসমিন ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর ছুটির আবেদন করেন। ওই বছরের ৯ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে ১৪ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এরপর থেকে সাইমা আর কর্মস্থলে ফেরেননি। নতুন করে ছুটির আবেদনও করেননি। হাসপাতালের নার্স হাজিরা খাতার ২/১৭৩নং সিরিয়ালে আছে সাইমা ইয়াসমিনের নাম। হাজিরা খাতায়ও সাইমা ইয়াসমিন ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর থেকে অনুপস্থিত আছেন। তবে অনুপস্থিত থাকলেও মাসে মাসে বেতনভাতা তুলেছেন তিনি। রামেক হাসপাতালের হিসাব বিভাগের তথ্যমতে, এক বছরে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৬ টাকা বেতনভাতা নিয়েছেন এই সেবিকা।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর ৪৫ দিনের অর্জিত ছুটি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে বিদেশে যান নার্স জাকিয়া সুলতানা। এরপর থেকে তিনি আর কর্মস্থলে যোগ দেননি। ৮ মাস হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত জাকিয়া সুলতানা তুলেছেন ২ লাখ ৮২ হাজার ২৭৬ টাকা বেতনভাতা।

অভিযোগ উঠেছে, রামেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বিদেশে থেকেও নিয়মিত বেতনভাতা তুলছেন দুই নার্স। হাসপাতালের কয়েকজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২ সিনিয়র স্টাফ নার্স দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন, এটা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সেবিকাদের তত্তাবধায়কের অগোচরে থাকার কথা নয়। তারা জেনেও দুই নার্সের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এ বিষয়ে নিয়ে রামেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। দুই নার্সের অনুপস্থিতির বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হাসানুল হাছিব বলেন, ‘কারও অনুপস্থিতিতে বেতন হওয়ার কথা নয়। তারপরও তারা যেটি করেছেন, তা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘কেউ চাকরির বিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ’

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতাল থেকে পাওয়া সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইমা ইয়াসমিন ও জাকিয়া সুলতানার মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও দুটি ফোনই বন্ধ পাওয়া গেছে।

এমআর