আসমানি কিতাব অর্থ আল্লাহর দেয়া গ্রন্থ। কিতাব শব্দের সহজ অর্থ পুস্তক বা গ্রন্থ। সহজ কথায়, যে মহান গ্রন্থে আল্লাহর বাণী লিপিবদ্ধ আছে তাকে আসমানি কিতাব বলে। অর্থাৎ নবী-রসুলগণ যাতে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য তাদের কাছে ওহি বা আল্লাহর বাণী আসত। এ বাণীসমূহের সমষ্টি আসমানি কিতাব নামে অভিহিত। নবীদের পাঠানো বা নবুওয়ত শেষ হয়েছে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে।
আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হলো দৃঢ় বিশ্বাস করা যে এগুলো সত্য ও সঠিক। আরো বিশ্বাস করা যে, এগুলো আল্লাহ তাআলার কালাম। তাতে রয়েছে হিদায়াত, নুর এবং যাদের প্রতি এগুলো নাজিল করা হয়েছে, তাদের জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। এর মধ্যে তাওরাত নাজিল হয়েছিল হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর। জাবুর অবতীর্ণ হয়েছে দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর। ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর। কোরআন নাজিল হয়েছে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।
আসমানি কিতাবগুলো থেকে আল্লাহ তাআলা যেগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। যেমন কোরআন, তাওরাত, ইঞ্জিল ও জাবুর। আর যেগুলোর নাম আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেননি, সেগুলোর প্রতিও বিশ্বাস করি। কেননা আল্লাহ তাআলার আরো অনেক কিতাব রয়েছে, যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
আসমানী চার কিতাব নাজিল হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়। সব আসমানি কিতাবের ভাষা একই ছিল না। এখানে প্রসিদ্ধ চার আসমানি কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
তাওরাত
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে তার নাম তাওরাত। ‘তাওরাত’ কিতাবের নাম পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে।
বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে পথনির্দেশনা ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীরা তদনুসারে ইহুদিদের পরিচালনা করত এবং খোদাভীরু ও জ্ঞানীরাও। কারণ তাদের আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে তারা সাক্ষী ছিল।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত, ৪৪)
মুসা আলাইহিস সালামের ভাষা হিব্রু ছিল, তাই তার ওপর নাজিলকৃত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাজিল করা হয় এবং তার নাম হিব্রু ভাষায় রাখা হয়। হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’ শব্দটি শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়।
জাবুর
হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর জাবুর কিতাব নাজিল করা হয়েছে। জাবুরের অর্থ, লিপিবদ্ধ।
বনি ইসরাঈলের জন্য অবতীর্ণ এই কিতাবে দাউদ আলাইহিস সালামের বিভিন্ন তাসবিহাত বা আল্লাহর গুণাবলিমূলক কথার বর্ণনা এসেছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে ওহি প্রেরণ করেছি, যেমন নুহ ও তার পরবর্তী নবীদের কাছে প্রেরণ করেছিলাম; ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধর; ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারুন ও সোলায়মানের কাছে ওহি প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে জাবুর দিয়েছিলাম।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত, ১৬৩)
জাবুর কিতাব কোন ভাষায় নাজিল হয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ‘ইসলাম ওয়েবের’ তথ্যমতে, দাউদ (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের নবী।
আর কোরআনের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ কোনো রাসুলকে তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাননি। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত, ৪)
বনি ইসরাঈলের মাতৃভাষা যেহেতু হিব্রু ছিল, তাই ‘জাবুর’ হিব্রু ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইনজিল
বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন আল্লাহ তায়ালা।
ইবনে কাসির রহ.-এর মতে, ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষা সুরিয়ানি ছিল। ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. ও ইবনে কাইয়িম রহ.-এর মতে তার ভাষা ছিল হিব্রু। সে হিসেবে ইনজিল সুরিয়ানি বা হিব্রু ভাষায় নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মওদু ডটকম)
তবে ইনজিলের প্রাচীন যে কপি একসময় পাওয়া যেত, তা গ্রিক ভাষায় হওয়ায় অনেকের দাবি যে ইনজিল ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ছিল। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু আলাইহহিস সালামের আগমনের সুসংবাদ।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাদের পর তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে ঈসা বিন মারিয়াম (আ.)-কে প্রেরণ করেছি। মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাঁকে ইনজিল প্রদান করেছি তাঁর পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে, যাতে ছিল উপদেশ ও আলো।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত,৪৬)
কোরআন
কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আরবি ভাষায় তা অবতীর্ণ হয়েছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবি ভাষী। তাই তার ওপর নাজিলকৃত কোরআনও আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ২)