রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গনগনে রোদে বাইরে বেরোলেই ঝলসে যাচ্ছে চোখমুখ। তবে বাড়িতেও যে স্বস্তি মিলছে, তা কিন্তু নয়। রোদের তাপে তেতে উঠছে বাড়িঘর। দুপুরের দিকে সূর্য যখন মধ্যগগনে, তখন বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে উঠছে। অগত্য ভরসা ফ্যান আর বাতানুকূল যন্ত্র। কিন্তু যন্ত্র যখন, খারাপ হতে পারে যে কোনও সময়ে। হতে পারে লোডশেডিংও। তাই সব সময়ে যন্ত্রের উপর ভরসা না করে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন অন্যভাবে। রইল কয়েকটি উপায়।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের যত্ন নিন
এই গরমে প্রত্যেক দিনই টানা অনেক ক্ষণ চলবে এই যন্ত্র। তাই এক বার যন্ত্রটা দেখিয়ে নিন। ঘন ঘন ব্যবহারের আগে যন্ত্রেরও মেরামতির প্রয়োজন পড়ে। না হলে ঘর ঠিক করে ঠান্ডা হবে না। চালানোর সময়ে মাথায় রাখবেন, বাইরের যা তাপমাত্রা, তার চেয়ে যদি ১-২ ডিগ্রি কমিয়ে রাখেন, তা হলে কিন্তু খুব একটা লাভ হবে না। বরং আপনার যন্ত্রের আয়ু কমে যাবে। তাই বেশ কিছু ডিগ্রি কমিয়ে ঘরটা ঠান্ডা করে নিন।
ভারী পর্দা ব্যবহার করুন
ঘরের জানলায় অনেক সময়েই হালকা রঙের পাতলা পর্দা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু গরমকালে এগুলি বেমানান। ঘরে রোদ আটকানোর জন্য ভারী পর্দা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিংবা জানলায় শৌখিন মাদুরের পর্দাও রাখতে পারেন। এতে ঘর ঠান্ডা থাকবে। দুপুর থেকেই বাড়ির জানলা বন্ধ করে দেবেন। না হলে রোদ ঢুকে ঘর বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে।
ঘরে হাওয়া-বাতাস ঢুকতে দিন
বিকেলের পর থেকে বাইরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তখনও সব জানলা-দরজা বন্ধ করে রাখেন, তা হলে আপনার ঘর আরও বেশি গরম হয়ে উঠবে। তাই সন্ধ্যার পর জানলা, দরজা খুলে রাখুন। ঘরে হাওয়া-বাতাস খেলতে দিন। একটু পরে এমনিতেই ঘর ঠান্ডা হয়ে আসবে।
ফ্যানের যত্ন
সিলিং ফ্যান ঘুরলে হাওয়া পাওয়ার বদলে মনে হচ্ছে যেন আরও বেশি ঘর গরম হয়ে উঠছে? হতে পারে ফ্যান অপরিষ্কার হয়ে রয়েছে। ঝুল পরিষ্কার করে দেখুন, কোনও পার্থক্য হচ্ছে কি না। অনেক সময়ে ফ্যান অপরিষ্কার থাকলে হাওয়া পাওয়া যায় না। তেমন হলে দেখে ফ্যানে ধুলো-ময়লা জমে আছে কি না, তা এক বার যাচাই করে নিন।
দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার
মনে রাখবেন, রং যত গাঢ় হয়, তত আলো শোষিত হয় এবং যত হালকা হয়, তত আলো বেশি প্রতিফলিত হয়। ঘরে যত বেশি আলো শোষিত হয়, তত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব হালকা রং ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দিনের বেলা ঘর তাপ ধরে রাখবে না। ফলে আলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ঠান্ডা হতে শুরু করবে।
ঘর রাখুন অন্ধকার
ঘরে আলোর পরিমাণ যত কম থাকে, ঘর তত বেশি ঠান্ডা থাকে। রাতে কাজ করলে চেষ্টা করবেন ঘর যতটা সম্ভব কম আলোকিত রাখতে। টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা গেলে ভালো। এতে করে ঘর তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।
ঘরে রাখতে পারেন ছোট গাছ
ঘরের ভেতর ছোট্ট একটি গাছ, যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। গাছ ঘরের ভেতর জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, ফলে ঘরের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম-জাতীয় গাছ ঘরের সৌন্দর্যবর্ধন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উভয় কাজেই বেশ উপকারী।
ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন
ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে একটু ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন। প্রয়োজন হলে একবারের পরিবর্তে ঘর মুছতে পারেন বেশ কয়েকবার। মেঝের পাশাপাশি জানলার কাচও পানি দিয়ে মুছুন। এতে বেশ কিছু সময় ঘর ঠান্ডা থাকবে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার ও ফেমিনা ইন্ডিয়া