কামার ছমেদ আলী (৩৫) দুই দিনে ১০ ঘন্টাও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে কাজ। কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে আবার ফজরের আগেই দোকান খুলতে হচ্ছে৷ কারণ জমে থাকা কাজ শেষ করতেই হবে। কুরবানির কাজে ব্যাবহার হওয়া উপকরণ তৈরি করতেই হবে তাদের৷ সকাল থেকেই মানুষের ভীড়। ধরনা দিচ্ছেন তাদের জিনিস গুলো তৈরি হলো কিনা এ নিয়ে৷ টুং টাং শব্দে মুখরিত কামারশালা।
রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। এখন তড়িঘড়ি চলছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী সহ সবগুলো উপজেলায় কোরবানির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তার মধ্যেই বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। একদিকে কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত স্বচ্ছল পরিবারগুলো, অন্যদিকে প্রায় কয়েকগুণ বেশি সমানুপাতিক হারেই দা, বটি, ছুরি কিংবা কুরবানির পশু কাবু করার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামাররা। দম ফেলার যেনো ফুসরত নেই এখন৷ অনেকটা নাওয়া খাওয়া ভুলেই কাজ করতে হচ্ছে। কোরবানির ঈদের জন্য একান্ত চিত্তে অপেক্ষার প্রহর গুণে কামার দোকানের কর্মচারীরা। পুরো বছর অত্যন্ত নিম্ন আয়েই তাদের কাটাতে হয় দিন।
গতকাল শনিবার রাতে কটিয়াদী বাজারের কয়েকটি কামারশালা ঘুরে দেখা যায় এমনি দৃশ্য। প্রতি দোকানে অতিরিক্ত ৫-৬ জন শ্রমিক মিলে কাজ করছে ৷ দোকানের চারদিকে ঘিরে আছে মানুষ। কেউ নতুন কিনছেন আবার কেউ পুরাতন গুলো মেরামত ও ধার দিতে আনছেন।
ঈদ মৌসুমে ভোর রাত থেকেই তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় আর চলে মধ্য রাত অব্দিও। প্রতিটি ছোট ও বড় ছুরি ধারালো করার কাজে কামাররা মজুরি নিচ্ছেন ১০০-১৭০ টাকা। চাকু ৫০০-৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অনেকে আবার নিজস্ব ধাতব পদার্থ নিয়ে আসছেন দা-বটি তৈরি করতে। কেউবা নিচ্ছেন কিনে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হলেও প্রয়োজনীয় জিনিসটি নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
কামার সুজিত চন্দ্র বলেন, ঈদের আগেই এমন কদর, পরে শেষ। সবকিছু এখন রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। নতুন তৈরির আগ্রহ অনেকের কম। এই কয়ডা দিনই আমাদের টেহা রোজগারের দিন।'
আরেক কামার ছমেদ আলী বলেন, ঘুম, খাবার ঠিকমতো হচ্ছে না৷ মানুষের তাগদা আছে অনেক। আজ শেষ দিন, কাজ শেষ করার খুব চাপ।