কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার নদের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। এতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বামনডাঙ্গা ও পৌরসভার ১৭ গ্রাম।
জেলায় ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিন শতাধিক চরের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
পানিবন্দী থাকায় চরের বাসিন্দারা কাজে যেতে পারছেন না। তাঁদের ঘরের খাবারও শেষ হয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে চরগুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বন্যাদুর্গতরা। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন বানভাসি মানুষ।
তবে রান্না করা ও শুকনো খাবারের আকুতি বানভাসি মানুষের। তারা চাল,ডাল তেলের বদলে শুকনো বা রান্না করা খাবার চেয়ে আকুতি জানিয়েছে। কারন সবার রান্না করাই খুব কষ্টকর।
শনিবার দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি বাড়লেও বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবার অনেকের ঘরে চাল, ডাল ও তেল না থাকায় রান্না বন্ধ। অনেকের ঘরে চাল-ডাল থাকলেও চুলা পানিতে ডুবে থাকায় রান্না নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এমতাবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন মানুষ। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো ৬০ শতাংশ মানুষ ত্রাণ পাননি।
একদিকে খাদ্যসংকট, অন্যদিকে দীর্ঘদিন বসতবাড়িতে পানি থাকায় বন্যাকবলিত মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, জেলায় বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ৭৩টি ইউনিয়নে একটি করে এবং প্রতি উপজেলা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিজস্ব দলসহ মোট ৮৩টি চিকিৎসা দল কাজ করছে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ,নুনখাওয়া,কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা,নারায়নপুরের বানভাসি মানুষের ঘরবাড়িতে কোথাও বুকসমান পানি, কোথাও গলাসমান পানি। তাঁদের কেউ স্থানীয় বিদ্যালয়, কেউ কেউ নৌকায় বাস করছেন
নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বাবু বলেন, ঘরে এক হাটু পানি। আজ ৪ দিন ধরে খাটেই বসবাস। বাঁচার তাগিদে আজ এক গলা পানি ভেঙ্গে বাজারে এসেছি।
কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন সমাজের হৃদয়বান বিত্তবানরা এমনটাই দাবি ভুক্তভোগীদের।
সময়ের কন্ঠস্বরের মাধ্যমে বানভাসি মানুষের তথ্য পেতে, এস এম ফয়সাল শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ০১৭১৩২০০০৯১।
এফএস