আজ সোমবার, ৮ জুলাই। চলমান সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় আজ প্রকাশিত কিছু খবরগুলোর মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে কোটা আন্দোলন, খাদ্যের দাম, কয়লা ও অন্যান্য খবরগুলোর গুরুত্ব পেয়েছে। সেসব খবর থেকে কিছু আলোচিত খবরের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
(১) সমকাল: আওয়ামী লীগে দুশ্চিন্তা অস্বস্তি বিভক্তি
‘আওয়ামী লীগে দুশ্চিন্তা অস্বস্তি বিভক্তি’ কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সমকালের প্রথম পাতার শিরোনাম এটি। এই সংবাদে বলা হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগে এক ধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। দলের ভেতরেই আন্দোলনের পক্ষে- বিপক্ষে অবস্থান তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় আদালতের রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছেন সরকারি দলের নীতি নির্ধারকরা। তারা বলছেন, সরকার খুবই সতর্কতার সাথে বিরাজমান পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ সমসাময়িক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলেছেন ওবায়েদুল কাদের। যদিও এ নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেন নি তিনি। কোটার বিষয়টি আদালতের বলে মন্তব্য করেছেন।
উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতেই নিষ্পত্তি হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। আর আদালতের রায় ঘোষণার পর বিষয়টি নির্বাহী বিভাগ দেখতে পারে।
(২) মানবজমিন: কোটা নিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই
পত্রিকাটির এ খবরে বলা হয়েছে, কোটা নিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় নেতারা গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা তো সাবজুডিস।
কারণ আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।
‘ব্লকেড চলবে, বাধা এলে প্রতিরোধ’ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম এটি। খবরে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শুরু হওয়া ব্লকেড কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
(৩) সমকাল: ডিম, মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাংলাদেশেই বেশি
দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার একটি শিরোনাম এটি। এতে বলা হয়েছে, ঢাকার খুচরা দোকানে এক ডজন ডিমের দাম এখন ১৫০ টাকা। দুই বছর ধরে বাংলাদেশের ডিমের দাম চড়া। ফলে প্রাণিজ আমিষের কম খরচের উৎস বলে পরিচিত ডিম কিনতেও মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, একদিন বয়সী মুরগীর বাচ্চা, মুরগির খাবার ও ডিমের দাম ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ আমদানি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে রেলে অতিমাত্রায় সুরক্ষা প্রদান।
বাংলাদেশে ডিম, মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্য আমদানিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়।
তবে সাধারণত অনুমতি পাওয়া যায় না এবং কেউ আমদানিও করে না। ফলে এ সুযোগে চড়া দাম আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন এসব খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা।
(৪) দেশ রূপান্তর: পাঁচ হাজার টাকায় মেলে প্রশ্ন সঙ্গে জিপিএ -৫
এ সংবাদে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চলে আসে ছবি, পর্যায়ক্রমে সমাধানও। পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষে বসেই স্মার্টফোনে পাওয়া সে সমাধান দেখে উত্তরপত্রে লেখেন পরীক্ষার্থীরা।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এভাবেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে বলে সংবাদটিতে বলা হয়েছে।
মাত্র দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছে ওই কেন্দ্রের প্রায় এক হাজার পরীক্ষার্থী।
প্রশ্ন, উত্তরপত্র ও কলমের সঙ্গে স্মার্টফোনও এসব পরীক্ষার্থীদের কাছে অপরিহার্য সরঞ্জাম।
খবরে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্র কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কব্জায় নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন বন্দোবস্ত করেছে একটি চক্র। ‘মিশন এ প্লাস’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে চলছে এমন কার্যক্রম।
(৫) বণিক বার্তা: সরকারকে এক বছরে পরিশোধ করতে হবে তিন লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ
পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম এটি। এতে বলা হয়েছে, বিদেশী উৎস থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ না পেয়ে দেশের ব্যাংক খাত নির্ভরতা বাড়িয়েছে সরকার।
এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদির চেয়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে বেশি হারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
এ ঋণের ১৮ দশমিক দুই শতাংশই পরিশোধ করতে হবে মাত্র এক বছরের মধ্যে। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে সরকারের এমন ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা।
‘চুক্তির নিয়োগে অস্বস্তি প্রশাসনে’ আজকের পত্রিকার শিরোনাম এটি। এতে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা অবসরে গেলে স্বাভাবিকভাবেই নিচের পদের যোগ্য কাউকে পদোন্নতি দিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
(৬) চীনা কোম্পানির চোখ ফুলবাড়ীর কয়লায়
ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি জিসিএম রিসোর্স পিএলসির (সাবেক এশিয়া এনার্জি) সঙ্গে কোনো চুক্তি নেই। বিষয়টি জানার পরও বিতর্কিত এই কোম্পানির হয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার তোড়জোড় শুরু করেছে চীনা কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন চায়না। এরই মধ্যে জিসিএমের সঙ্গে এ নিয়ে একটি চুক্তি করেছে ‘পাওয়ার চায়না’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ওই কোম্পানি। এই চুক্তির মাধ্যমে পাওয়ার চায়না দিনাজপুরের আলোচিত ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উন্নয়ন করবে। পাশাপাশি সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে এখনো এশিয়া এনার্জি করপোরেশন নামেই সক্রিয় রয়েছে জিসিএমের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে খনি থেকে কয়লা তোলার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে ২০০৬ সালে তৎকালীন এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হয়। এতে তিনজন নিহত হয়। ওই সময় তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির মূল বিষয় ছিল ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না। একই সময় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত খনি হবে না। কৃষিজমির ক্ষতি করে কয়লা তোলা হবে না।
তা সত্ত্বেও শুরু থেকেই ফুলবাড়ী নিয়ে তৎপর ছিল এশিয়া এনার্জি। পরে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে জিসিএম রিসোর্সেস করা হয়। এই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কয়লাখনি নিয়ে কোনো চুক্তি নেই। তবে বিভিন্ন সময়ে ফুলবাড়ী প্রকল্প নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে লন্ডন শেয়ারবাজারে মূল্য প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে।
চলতি বছরের ১১ মার্চ জিসিএম রিসোর্সেস তাদের ওয়েবসাইটে ‘ফুলবাড়ী কোল মাইনিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ওভারবর্ডেন স্ট্রিপিং কনট্রাক্ট’ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়, খনি উন্নয়নের জন্য জিসিএম রিসোর্স পাওয়ার চায়না ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করেছে। তবে এই চুক্তির অগ্রগতি ‘উত্তরাঞ্চলে কয়লা অনুসন্ধান এবং উত্তোলন’ চুক্তির শর্তাবলির অধীনে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া কয়লাখনির উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে। খনি নির্মাণ চুক্তির কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে খনি অবকাঠামোর নকশা, ক্রয়, ইনস্টলেশন, নির্মাণ এবং কমিশনিং এবং অতিরিক্ত মাটি, বালু ও পাথরের স্তর অপসারণ এবং পানি নিষ্কাশন।
জিসিএম জানায়, কয়লার প্রথম স্তর উন্মুক্তের জন্য মাটি, বালু ও পাথরের স্তর অপসারণ করতে প্রায় দুই বছর সময়সহ খনি নির্মাণ চুক্তির মেয়াদ চার বছর। তবে কয়লা উত্তোলন এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি পরিচালনা করে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কমপক্ষে ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহের জন্য জিসিএম এবং পাওয়ার চায়না অতিরিক্ত চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী। এ বিষয়ে জিসিএম পাওয়ার চায়নার সঙ্গে একটি যৌথ প্রস্তাব শিগগির নবনির্বাচিত বাংলাদেশ সরকারের কাছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে জিসিএমের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে জিসিএমের সঙ্গে আমাদের কোনো চুক্তি নেই।’
(৭) কালের কণ্ঠ: গাছ না লাগিয়েই তুলে নিল ১৬৯ কোটি টাকা
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, তিন বছর মেয়াদি (২০১৭-২০) পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে খাল খননের পর পাড়ে গাছ লাগানোর কথা ছিল।
তবে খাল খনন করা হলেও খালের পাড়ে গাছ না লাগিয়েই তুলে নেয়া হয়েছে বরাদ্দের ১৬৯ কোটি টাকা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকল্পটি ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও তিন বছরের প্রকল্পটি সাত বছরেও শেষ হয়নি।
দুই দফায় ছয় বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আর প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে এক হাজার ৫৯৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
এইচএ