কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব বন্ধ থাকায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে স্বস্তিতে রয়েছেন অভিভাবকরা। ইন্টারনেট না থাকায় খেলার মাঠে ফিরেছে শিশু-কিশোর ও তরুণরা।
কিশোরগঞ্জে জেলার ১৩টি উপজেলার সর্বত্র বাবা-মায়েরা খুশি, পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরা অখুশি।ব্রডব্যান্ড, মোবাইল ডাটা কাজ করছে না। থমকে গেছে ইন্টারনেট নির্ভর কাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব ও বিভিন্ন অনলাইন গেমস খেলতে না পেরে খেলার মাঠে ফিরেছে তারা।
বর্তমান প্রজন্মের ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীরা ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব ব্যবহার করে রাত-দিনের অধিকাংশ সময় পার করত। এখন তথ্যপ্রযুক্তির এসব খাত বন্ধ থাকায় লাখ লাখ তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থী অলস সময় কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছে। আবার এসব চালু না থাকায় বাবা-মায়েরা বেশ খুশি। তাদের সন্তানদের কাছে পাওয়াসহ নানা সৃজনশীল কাজে সময় কাটাচ্ছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে সাড়ে ৫ টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ভূবিরচর সেলফি রোডে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশু -কিশোর তরুণ ও যুবকরা নির্মল বাতাসে সময় কাটাতে শত শত মানুষ এসেছেন। সবার হাতেই স্মার্টফোন। তবে ব্যস্ততা নেই। সবাই পতিত জমিতে ফুটবল খেলায় মেতে আছেন৷ আর এসব খেলা দেখতে ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা৷
স্থানীয় এলাকায় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, তায়েস, জান্নাতুল, রাব্বি জানান, আগে অনলাইনে গেমস খেলতাম। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অস্বস্তিতে রয়েছি। উপায় না পেয়ে মাঠে খেলতে এসেছি। অনলাইন থেকে মাঠের খেলা আরো অনেক ভালো লাগছে৷
যশোদল নোয়াপাড়া গ্রামের মিজান মিয়া নামে এক অভিভাবক জানান, সারাদিন তার সন্তান মোবাইল ফোন নিয়ে থাকতো। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর থেকে মোবাইল ফোন থেকে দূরে সরে গিয়েছে। পড়াশোনায় মন দিয়েছে। পাশাপাশি খেলার মাঠে যাচ্ছে।
ক্রীড়াবিদ কামরুল ইসলাম জানান, বছর পাঁচেক আগেও সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তরুণরা খেলাধুলায় ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কিন্তু বিভিন্ন অনলাইন গেমস ও টিকটিক ফেসবুকে আসক্ত হওয়ায় তরুণরা মাঠ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলো৷ কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কোনো উপায় না পেয়ে তরুণরা মাঠে খেলাধুলায় ফিরেছে। দেখে অনেক ভালো লাগছে।
পল্লি চিকিৎসক রমজান মিয়া জানান, তার অনার্সপড়ুয়া একমাত্র সন্তান সারা দিন এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুক আর ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এখন এসব বন্ধ থাকায় বাসায় সময় পার করছেন। মাঝেমধ্যে খেলা ধুলা করছেন। তাই বাবা হিসেবে তিনি খুব খুশি।
এদিকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া জানান, ফেসবুক বন্ধ থাকায় তারা জীবন থেকে কী যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সব সময় মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে গেছে। হাতে প্রচুর সময়। কিন্তু সেই সময় পার করার মতো কোনো কাজ নেই। তাই তারা খুব হতাশায় রয়েছেন। তারা দ্রুত ইন্টারনেটসহ অন্য মাধ্যমগুলো দ্রুত চালুর দাবি জানান।
কিশোরগঞ্জ টেক্সাট্রাইল মিল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান খান জানান, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম খেলার মাঠ থেকে একদম দূরে সরে গিয়েছিলো। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় তারা মাঠে ফিরেছে৷ মাঠের খেলাধুলা শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে। খেলাধুলা তাদেরকে মাদকাসক্ত থেকেও দূরে রাখে।
কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীরা অন্ধত্ব, বধিরতাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এসব নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। কারণ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, খারাপ আচরণ, বড়দের সন্মান না করা, সংস্কৃতি ও মানবিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি নেতিবাচব প্রভাবের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার।
এইচএ