নেত্রকোণায় উজান থেকে নেমে আসার ঢলে ৪টি উপজেলা ইতোমধ্যে বন্যার কারণে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে দুর্গাপুর ৬২, পূর্বধলা ১১, কলমাকান্দা ৯৩ ও সদরে ২০টি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইমদাদুল হক
ইতোধ্যে টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোণা বৃদ্ধি পেয়েছে কংস, সোমেশ্বরী ও উপদাখালীসহ বেশ কিছু নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, আজ রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ২টায় কংস নদের পানি বিপদসীমায় ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত। সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং অবধা খালি নদীর পানি বিপদ সীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ায় কংস নদের তীরবর্তী গ্রামগুলো ইতোমধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি ঢুকতে শুরু করেছে নতুন নতুন গ্রামে।
পানি বাড়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পূর্বধলার নাটেরকোণার প্রায় ৭ কিলোমিটা বেড়িবাঁধ। ইতোমধ্যে বাঁধের অনেকাংশই পানি ছুঁই ছুঁই করছে। স্থানীয়রা বস্তা ও মাটি ফেলে কোন রকমের টিকিয়ে রেখেছে বাঁধটি। দুপুর ২টার পর স্থানীয়দের পাশাপাশি আনসার সদস্যাও অংশ নেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, কোনো কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ভেঙে গেলে পুরো পূর্বধলা উপজেলা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দীর সংখ্যাই বাড়ছে। ইতিমধ্যে উপজেলাটিতে ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ মোট ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে নেত্রকোণা জেলার সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার পর থেকে আজ রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার জারিয়াজানজাইল নামক স্টেশনে ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টায় (৩ দিনে) এই স্টেশনে ৭৫৮ (২০০ + ২৫০ + ৩০৮) মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের অভ্যন্তরে ৩ দিনে ৭৫৮ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত সম্ভবত আর কোনো জেলায় হয়নি।
এদিকে বন্যার্তদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। তবে এলাকাগুলোতে এখনো সংকট রয়েছে বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণ সহায়তার।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হওয়াতে নদীতে পানি বাড়ছে তবে তা এখনো সব পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রেডি আছে। প্রয়োজন পড়লে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
দুর্গাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে উপজেলার কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
এইচএ