ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় কাজ না করে এডিপি প্রকল্পের ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি তদন্তে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দিনব্যাপী মাঠে নেমে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তার উন্নয়নের নামে বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পে হরিলুট হওয়ার সত্যতা খুঁজে পায় দুদকের তদন্ত টিম।
উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় (২০২৩-২৪) অর্থ বছরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় নেয়া হয় ৮টি প্রকল্প। এরমধ্যে ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয় সংস্কারে ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, ছলেমননেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, অন্বেষণ উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (এইচবিবি) করণে ১০ লাখ টাকা, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য ১০ লাখ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামতে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। চলতি বছরের ১১জুন প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ এবং উড়ালাল এন্টারপ্রাইজ এই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পান। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ন করে টাকা উত্তোলন করলেও করা হয়নি কোন কাজ।
বরাদ্দ পাওয়া ছলেমননেছা এতিম খানা ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো.আসাদুল্লাহ বলেন, আমাদের এতিম খানা ও মাদ্রাসার উন্নয়নে বরাদ্দ এসেছে সেটি গত ৮ ডিসেম্বর জানতে পেরেছি। কারণ ঐদিন উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান আমাদেরকে ডেকে বলেছেন মাদ্রাসার উন্নয়ণে তারা চেয়ার টেবিল কিনে দিতে চান। আমাদের নামে নাকি কিছু টাকা বরাদ্দ এসেছে। আমি তখন বলেছি, যা ভালো হয় তাই করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন কিছু পায়নি। এখন শুনছি এসব টাকা নাকি আত্মসাত হয়ে গেছে। আজকে দুদুকও এসেছে, যা সত্য তাই বলেছি।
অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ প্রসাদ বলেন, ৮ টি প্রকল্পের মাঝে ৩টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী ফেরত দেয়ার কথা।
এ বিষয়ে জানতে প্রকল্পের সভাপতি ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালালের সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা উত্তোলন করা হলেও উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কাজ না করে গত ৯ ডিসেম্বর সরকারি কোষাগারে ৫০ লাখ টাকা জমা দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫ লাখ টাকার বিষয়ে সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারি পরিচালক বুলু মিয়া জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিনে প্রকল্পগুলো যাচাইবাছাই করছি। রবিবার সকাল থেকে ৬টি প্রকল্প যাচাইকালে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
তিনি আরও জানান, কোন কোন জায়গায় কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, আবার কোন কোন জায়গায় কাজ এখনও চলমান দেখিয়ে পূর্বেই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজ এখনও চলমান, অথচ বিল অনেক আগে তুলে নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের পিছনে যে এইচবিবি রাস্তাটা রয়েছে আমাদের কাছে দেখে মনে হয়েছে অনেক আগের দু-এক জায়গায় সংস্কার হয়েছে শুধুমাত্র। সংস্কার হওয়া মানেই রাস্তাটা অনেক আগের তার উপর ঘাস হয়ে গেছে। প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে পাইনি। তিনি সম্প্রতি বদলী হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। উনার দায়িত্বে বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়েছেন। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে এবং উপজেলা প্রকৌশলী ময়মনসিংহে অফিসিয়াল কাজে আছেন। আমরা যা পেয়েছি তা কমিশন বরাবর দাখিল করবো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এমআর