এইমাত্র
  • অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্র্যাবের নিন্দা
  • নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট স্থগিত
  • এটা মুজিববাদের কবরের ঘোষণা: হাসনাত
  • রংপুর বিভাগে ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির সম্ভাবনা, জানাল আবহাওয়া অফিস
  • ২০২৬ সালের এসএসসির সিলেবাস ও মানবণ্টন প্রকাশ
  • দয়া করে আমার প্রতি একটু ইহসান করুন: মিজানুর রহমান আজহারী
  • কী হতে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর?
  • বাসের ছিল না ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ
  • বিমানবন্দরে অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মীর ভালোবাসায় সিক্ত কায়কোবাদ
  • বিপিএলে জামাই-শ্বশুর দ্বৈরথ নিয়ে যা বললেন আফ্রিদি
  • আজ রবিবার, ১৫ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ফিরে দেখা ২০২৪: যে কারণে বরিশালে বছরজুড়ে ছিলো আলোচনার

    আরিফ হোসেন, বরিশাল প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম
    আরিফ হোসেন, বরিশাল প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম

    ফিরে দেখা ২০২৪: যে কারণে বরিশালে বছরজুড়ে ছিলো আলোচনার

    আরিফ হোসেন, বরিশাল প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, ভারসাম্যহীন বাজারদর, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নৌ ও সড়ক পথের দুর্ঘটনা নিয়ে ২০২৪ সাল ছিলো বরিশালের আলোচনার বছর।

    সরকার পতনের আগে জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশালে সবচেয়ে বেশি সরব ছিল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে সময়ের সাথে সাথে যৌক্তিক এ আন্দোলনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বরিশালের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামে, যাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

    যদিও প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের মহড়া ও একাধিক হামলার ঘটনা রাজপথে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলো। তবে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম কোনোভাবেই দমাতে পারেনি। কৌশলী আন্দোলনে পুলিশের বুলেট, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার মধ্যদিয়ে বরিশালে কোনো নিহত হওয়ার ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখে ৫ আগস্ট বরিশালের রাজপথসহ সর্বত্র বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন ছাত্র-জনতা।

    সূত্রমতে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বরিশাল মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পরেন। হামলা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি বিএনপির কার্যালয়ে দেওয়া হয় আগুন। এছাড়াও মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকসহ অনেকেই হামলার শিকার হওয়ার পাশাপাশি মিথ্যে মামলায় আসামি হয়েছেন। আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক আকতার ফারুক শাহিন, শামীম আহমেদসহ অসংখ্য সংবাদকর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন।

    ৫ আগস্ট সরকার পতন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির দেশ ত্যাগের পর পরই আত্মগোপনে চলে যান বরিশালের আওয়ামী লীগের বির্তকিত নেতাকর্মীরা। বিজয় উল্লাসের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা নগরীর বটতলা রোডের সদর আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি, কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবন, অ্যানেক্স ভবনসহ একাধিক আওয়ামী লীগ ও কাউন্সিলর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরমধ্যে সেরনিায়বাত ভবনে আটকে পড়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুসহ তিনজন অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে নিহত হন। এরইমধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে নগরবাসী কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পরেছিলেন।

    রাজনৈতিক মামলা: বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন নিয়ে বিএনপির বরিশালের নেতাকর্মীরা যেমন মামলার শিকার হয়েছেন, তেমনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাশে থাকায় হামলার শিকার হওয়ার পাশাপাশি জুলাইয়ে মামলার শিকার হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় ২২ আগস্ট প্রথম মামলা দায়ের করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। যে মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সাবেক সিটি মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এফবিসিআই’র পরিচালকসহ ১ হাজার ৮১ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ওয়াকার্স পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওইসব মামলার অধিকাংশ আসামিদের গ্রেপ্তারের পর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

    দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: তবে এসবের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বছরজুড়ে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছিলো। বিশেষ করে সয়াবিন তেল, ডিম, চাল, পেঁয়াজ, আলু, কাঁচামরিচ ও সবজির বাজারদরের ঊর্ধ্বগতিতে প্রায় প্রতিটি পরিবারকে চরম হিমশিম খেতে হয়েছে।

    প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বছরজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় বরিশালবাসী। এরমধ্যে ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল সব চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে। রিমালের সময় যে প্লাবন হয়েছে তা দক্ষিণাঞ্চলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়েছে।

    নির্বাচন: বছরের শুরুর ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ ছিল বরিশালের বেশ কয়েকটি আসনে। যারমধ্যে বরিশাল-২, বরিশাল-৩, বরিশাল-৪, বরিশাল-৫ ও বরিশাল-৬ আসনে নিজ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের হিমশিম খেতে হয় নির্বাচন নিয়ে। বিদ্রোহীদের দমাতে বরিশাল সদর আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা, বরিশাল-২ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা, ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেন নৌকার কর্মী-সমর্থকরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা ও পৌরসভার উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবির ঘটনাও ছিলো বরিশালজুড়ে আলোচিত।

    ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাতে আসা অস্ত্রধারীরা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে নগরে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অথচ, তাদের ভয়েই জুলাই থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত অজানা আতঙ্কে ছিল ছাত্র-জনতা, গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে আন্দোলনে সমর্থনকারীরা। দুয়েকটি ঘটনায় মামলা হলেও প্রকাশ্য অস্ত্রধারীরা ধরা পড়ছে না। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বরিশাল নগরবাসী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশালের প্রধান প্রধান সড়কগুলোয় সরব ছিলেন। সেসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবকটি গ্রæপ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামীমনা সবগুলো সংগঠন মাঠে নামে আন্দোলন দমনে। শুরু হয় নিপীড়ন ও হত্যাকাÐ।

    সাংবাদিক নির্যাতন: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) ‘তিন অপশন’ খ্যাত পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার ছিলেন। আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর লাঠি র্চাজ করেন তিনি।

    ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ: বিয়ের প্রলোভনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষক ডা. শাকিল আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

    জনতার হাতে জব্দ সরকারী নথিপত্র : সচিবালয়ের নথি পাচারের সন্দেহে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া থানার কাগাশুরা এলাকা থেকে দুটি ট্রাক আটক করেছে স্থানীয় জনতা। আটকের পর ওই ট্রাক দুটিতে তল্লাশী চালিয়ে দেখা যায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশাল অফিসের পুরোনো সব কাগজপত্র। বহু বছরের পুরোনো কাগজপত্রের সাথে কিছু কাঠের ভেঙে যাওয়া মালামাল পুড়িয়ে ফেলার জন্য ময়লা খোলায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ট্রাক চালক ওইসব মালামাল না পুড়িয়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলো। যেকারণেই স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে তারা ট্রাক দুটি আটক করে।

    এছাড়াও বছরজুড়ে আলোচনার মধ্যে ছিলো-বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বা গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড না চালানো এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা ছিল উল্লেখযোগ্য। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ, জেলা ও মেট্রোপলিটনের ওসিদের একযোগে বদলি, ডিজিদের বদলিসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রধানের বদলি কার্যক্রমও ছিল আলোচনায়। এছাড়া বিগত ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান বরিশালে একাধিক পথসভা করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছেন।

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…