ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং নগরবাসীর পরামর্শ না নিয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যায় করে অপরিকল্পিত ভাব ব্যস্ততম ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি রোডে সড়কের মাঝে মায়ের নামে শাহানারা আব্দুল্লাহ শিশুপার্ক করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বরিশাল মহান আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বর্তমানে পার্কটি এখন পরিবহন সহ গাড়ী চালকদের গলার কাটা হিসেবে দাড়িয়েছে। এখানে প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা। তাই এই অবৈধ শিশুপার্কটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবী নগরবাসীর ।
সতেচন মহলের দাবি সড়কের মাঝে থাকা পার্কটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকার সত্ত্বেও সড়ক ও জনপথ এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কতৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে করছে নাটকীয়তা।
একটি সূত্র জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নগরীর চৌমাথা (সিঅ্যান্ডবি) রোডের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে সাড়ে ৪শ’ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের জমি দখল করে সাদিক আবদুল্লাহকে খুশি করতে তার মায়ের নামে এই পার্ক নির্মাণ করে দেন ২১ নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কমিশনার শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না।
এ সময় মহাসড়কের পাশে থাকা মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দিয়ে ওই জমি দখল করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও শাখা সড়ক। এতে মহাসড়কের আশেপাশের শাখা সড়কের বাসিন্দারা পড়েন চরম দুর্ভোগে।
বর্তমানে পার্কটিতে শিশুদের পদচারণা না থাকায় প্রেমিক যুগলদের ‘নিরাপদ স্থান’ হিসেবে পরিনিত হচ্ছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে অনেকটা নিরাপদে সময় কাটান প্রেমিক-প্রেমিকারা। আর সন্ধ্যার পরে জমজমাট হয় মাদক বেচাকেনা। বরিশাল সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরবাসীর কাছ থেকে আদায় করা রাজস্ব থেকে পার্কটি নির্মাণ করা হয়।
তবে সিটি করপোরেশন বলছে মহাসড়কের উপর নির্মিত অবৈধ শিশু পার্কটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সড়ক ও জলপথ বিভাগ। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, এটি নির্মান করেছে সিটি করপোরেশন, তাই এটির দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। আর এই দ্বন্দ্বে আটকে আছে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুপার্কটি। সম্প্রতি প্রতিনিয়ত মহাসড়কে যানজট ও কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এই শিশুপার্কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এলাকাবাসী।
এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও পথচারীরা চলাচল ও পারাপার করে এই সড়কে। মহাসড়ক হওয়ার কারণে সবসময় ভারী যানবাহন চলাচল করে। তাই সরকারের কাছে এই শিশুপার্ক দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবী তাদের।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্কটি নির্মাণ শুরু থেকেই মহাসড়কের জায়গা দখল করে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই পার্ক তৈরি করেছে সাবেক মেয়র সাদিক। কেউ তাদের ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি।
স্থানীয় কবির নামে এক ব্যক্তি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। যার চূড়ান্ত পর্বে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিরুদ্ধে মুখ খুলতে থাকে স্থানীয়রা। বেড়িয়ে আসে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র গুলো। সাদিকের ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র যেমন মহাসড়কের জায়গা দখল করে মায়ের নামে করা এই পার্কটি।
সড়কে চলাচল করা পথচারীরা বলেন, সাবেক মেয়র সাদিক ক্ষমতার দাপটের কারণে ভয়ে তার সামনে কেউ কথা বলার সাহস পেতেন না। তবে নির্মাণের পড়ে প্রশন্ত সড়কটি হয়ে যায় সংকুচিত এ কারণেই প্রতিনিয়ত হচ্ছে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা ।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশালের সমন্বয়কারী দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, সাবেক মেয়র সাদিক ক্ষমতার দাপটে সড়কের মাঝে পার্ক করেছেন। যা কোন কাজে আসেনি বরিশালবাসীর। তিনি আরো বলেন, এই পার্কটা আসলে বিবেকহীন ভাবে করা হয়েছে। এটাকে আমি নাম দিয়ে বিষফোড়া। কারন সরকারী জায়গা দখল করে রাস্তার মাঝে কখন পার্ক নির্মান করা এটা কোন আইনে নেই। আমি অভিলম্বে এটাকে অপসারন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, অবৈধ পার্কটি এটা যদি আমাদের সড়কের মধ্যে থেকে থাকে আমরা খুব শিগ্রহী উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। কারন সড়কে যানবাহন চলাচলে যেন কোন সমস্যা না হয় সেই বিষয়টি দিকে নজর রাখবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তিনি আরো বলেন, পার্ক নির্মান করেছে সিটি করপোরেশন, তাই ভাঙ্গার দায়িত্ব তাদেরই। তার পরে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হচ্ছে। খুব শিগ্রই এটার স্থায়ী একটি সমাধান হবে।
সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণই সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায়। তারা যদি মনে করেন রাখবেন বা ভেঙে ফেলবেন এটা তাদের ইচ্ছা। কারণ, এটা মহাসড়ক। আর সিটি করপোরেশনের ভিতরে হলেও মহাসড়কের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের। প্রয়োজনে তারা সিটি করপোরেশন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সিটি করপোরেশন। বরিশালবাসীর দাবি দ্রুত যেন মহাসড়ক থেকে এই পার্কটি অপসারণ করা হয় ।
এমআর