“তোমার অসীম মুখশ্রীর পূর্ণিমা শূন্যে আভাময়” প্রতিপাদ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হলো নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৮তম প্রয়াণ দিবস।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো,তোমার অসীম মুখশ্রীর পূর্ণিমা শূন্যে আভাময়’ স্লোগান নিয়ে সকাল ১০টায় পুরাতন কলাভবন থেকে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের স্মরণে শোভাযাত্রা ও সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। বেলা সাড়ে ১১টায় হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ১১টা ৪০ মিনিটে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘এসো আলোক তীর্থে’। পরে অনুষ্ঠিত হয় ‘তাঁহার কথামালা’ নির্দেশনায় ড. সোমা মুমতাজ। বেলা সাড়ে ১২টায় স্বপ্নীল সোহেল পরিবেশন করেন ‘ভেনট্রিলোকুইজম’।
দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎমঞ্চে বিভাগের নাট্যস্নাতকগন পরিবেশন করেন ‘যেমন খুশি তেমন করো’। বেলা ৩টায় বিভাগের সেটল্যাবে ‘সেলিম আল দীনের নাটক: প্রসঙ্গ ভাষা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ৪৯তম আবর্তনের পরিবেশনায় মঞ্চায়ন হয় নাটক ‘ধাবমান' নির্দেশনায় আনন জামান।
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৮ তম প্রয়াণ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল হাবীব বলেন, বাংলা নাটকে বর্ণনাত্মক নাট্যধারার স্রষ্টা নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ১৮ তম প্রয়াণ দিবসে আমরা উনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, সেলিম আল দীনের রচনা, নির্দেশনাশৈলী এবং চিন্তায় বাংলা নাটকের যে দ্বার উন্মোচন হয়েছিলো তা আজ পুরো দেশের নাট্যাঙ্গনের পাঠ্যবিষয়, বাংলা নাটকে সেলিম আল দীনের যে অনন্য অবদান এবং তার অমর সৃষ্টি ও কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন।
উল্লেখ্য, সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
বাংলা নাটকের নতুন ধারার পথিকৃৎ সেলিম আল দীন তাঁর নাটকগুলিতে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে রেখেছেন সমান অবদান। তিনি প্রচলিত নাট্যধারাকে ভেঙে নতুন ধরনের নাটক রচনা করেন। তার নাটকে বাস্তবতা ও আবেগ একই সঙ্গে ফুটে উঠেছে। তিনি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা থিয়েটারেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
সেলিম আল দীন অসংখ্য নাটক রচনা করেছেন। তন্মোধ্যে ‘বনপাংশুল’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’ উল্লেখযোগ্য।
নাট্যচর্চার জন্য তার উদ্যোগে ১৯৮১ সালে জাবিতে প্রাচীন গ্রিক এরিনার ওপেন এয়ার স্টেজের (মুক্তমঞ্চ) আদলে নির্মাণ করা হয় নাট্যমঞ্চ। পরবর্তীতে তার অবদানের কথা স্মরণ করে এই মঞ্চের নামকরণ করা হয় ‘সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ’।
দীর্ঘ কর্মময় জীবন শেষে সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মুনির চৌধুরী সম্মাননা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
এআই